ঋষি কপূর এমন এক জন মানুষ, যিনি সব সময় মনের কথা টুইটারে শেয়ার করে থাকেন। আর তার ঠিক উল্টো স্বভাবের হলেন সলমন খান।
সলমনের কাছে এক বার যিনি খারাপ হয়ে যান, সারা জীবন সলমন তাঁর প্রতি সমান মনোভাব নিয়ে চলেন। অপছন্দের মানুষেরা সলমনের কাছে জড় বস্তুর মতো। তিনি যেন দেখেও দেখেন না তাঁদের। ঠিক এ রকমই সম্পর্ক সলমন খান আর ঋষি কপূরের মধ্যে।
সলমন খান আর ঋষি কপূর বহু বছর ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে থেকে গিয়েছেন। সময়ে সময়ে তাঁদের বিভিন্ন সাক্ষাত্কার বা মন্তব্য থেকে এই বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কবে এবং কী ভাবে তাঁদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের এমন অবনতি হল?
সলমনের বাবা সেলিম খানের সমসাময়িক অভিনেতা হলেন ঋষি কপূর। শুরু থেকেই কিন্তু সলমনের সঙ্গে ঋষি কপূরের এমন সম্পর্ক ছিল না। দু’জনে একসঙ্গে ‘ইয়ে হ্যায় জলবা’ ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। এর কিছু বছর পর এমন একটা ঘটনা ঘটে যা কপূর এবং খান পরিবারের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি করে।
সলমন খান তখন কেরিয়ারে সাফল্য অর্জন করছেন। নামও হয়েছে তাঁর। এক বার বন্ধু সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে মুম্বইয়ে একটি ক্লাবে পার্টি করছিলেন সলমন। সেই পার্টিতে বন্ধুদের সঙ্গে হাজির ছিলেন রণবীর কপূরও। রণবীর তখনও বলিউডে পা দেননি।
কোনও একটা বিষয় নিয়ে সলমন আর রণবীরের মধ্যে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। কথায় কথায় রণবীরকে চড় মারেন সলমন খান। তখন সঞ্জয় দত্ত দু’জনের মাঝে দাঁড়িয়ে তাঁদের শান্ত করান। পার্টি ছেড়ে চলে যান রণবীর।
এই ঘটনা যখন সলমনের বাবা সেলিম খানের কানে যায়, তিনি সলমনকে কপূর পরিবারের গিয়ে ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু সলমন ছিলেন নাছোড়বান্দা। বাধ্য হয়ে সেলিম খানই ছেলের তরফে রণবীর এবং ঋষি কপূরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
বিষয়টা এখানেই মিটে যেতে পারত। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। পরবর্তীকালে রণবীরের সঙ্গে সলমনের সম্পর্ক অনেক স্বাভাবিক হলেও ঋষি কপূরের মনে সলমনের প্রতি এবং সলমনের মনে ঋষি কপূরের প্রতি ক্ষোভ ক্রমে গভীর হয়েছে।
কপূর পরিবার থেকে সলমন আরও চোট পেয়েছিলেন যখন তাঁর গার্লফ্রেন্ড ক্যাটরিনা কইফ তাঁকে ছেড়ে রণবীরের সঙ্গে প্রেম করতে শুরু করেন। সলমন সাধারণত জোর করে কোনও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ঘোর বিরোধী। কিন্তু ঋষি কপূর তাঁর বাবার সমসাময়িক অভিনেতা হওয়ায় রণবীরের সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেন তিনি।
এর পর ২০১১ সালের ‘টেল মি ও খুদা’-তে ঋষি কপূরের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় সলমন খানকে। শোনা যায়, ঋষি কপূরের সঙ্গে অভিনয়ের কোনও ইচ্ছা সলমনের ছিল না। কিন্তু ধর্মেন্দ্র এবং হেমা মালিনীর অনুরোধে রাজি হন সলমন।
২০১৫ সালে ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলার শুনানির সময় পুরো বলি ইন্ডাস্ট্রি সলমনের পাশে ছিল। টুইট করে সলমনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন ঋষি কপূরও। কিন্তু তার পরই তাঁর বয়ান পাল্টে যায়।
সলমনের পক্ষে সওয়াল করেন কয়েক জন তারকা। তাঁরা এই ঘটনার দায়ভার সবটাই সরকারের উপর চাপান। তাঁদের কারও মন্তব্য ছিল, ফুটপাথ শোওয়ার জায়গা নয়, তো কারও মন্তব্য ছিল, সরকার গরিবদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
এঁদের প্রত্যুত্তরে ঋষি কপূর তাঁদের সলমনের ‘চামচা’ বলে মন্তব্য করে বসেন। আর সলমনের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ দেখিয়ে ফেলেন। এর পর অবশ্য সলমনের ভক্তেরা ঋষি কপূরের সমালোচনা শুরু করেন। সলমন তখনও চুপ করে ছিলেন।
জানুয়ারি ২০১৭ সালে ঋষি কপূরের আত্মজীবনী ‘খুল্লাম খুল্লা’ প্রকাশ পায়। তাতে ঋষি সেলিম খানের বিরুদ্ধে তাঁর কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করেন। তখনও পর্যন্ত ঋষি কপূরের বিরুদ্ধে একটাও মন্তব্য করেননি সলমন খান।
কিন্তু মুম্বইয়ের হোটেলে সোনম কপূরের রিসেপশনের পার্টিতে সমস্ত সহ্যের সীমা পার করে ফেলেছিলেন সলমন খান। শোনা যায়, এই পার্টিতে সলমন খানের ভাইয়ের স্ত্রী সীমা খানের সঙ্গে নাকি ভীষণ দুর্ব্যবহার করেন ঋষি কপূর। সলমনের নামে অনেক খারাপ মন্তব্যও করেন তিনি।
সীমা খান এই ব্যবহারে অত্যন্ত বিরক্ত হন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ঋষি কপূরকে পার্টি থেকে সরিয়ে নিয়ে যান তাঁর স্ত্রী নীতু কপূর। এর পর সলমন খানের কানে কথা পৌঁছয়। তাঁদের সম্পর্কের মাঝে তাঁর পরিবারকে টেনে আনায় বিরক্ত হয়েছিলেন সলমন।
এত দিন সলমন খান ঋষি কপূরের বিরুদ্ধে একটাও মন্তব্য করেননি। তাঁকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে চলছিলেন। কিন্তু এর পর এক সাক্ষাত্কারে সলমনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, অমিতাভ, অনিল এবং ঋষি কপূরের মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে দ্বিতীয় ইনিংসে কে দারুণ ব্যাট করছেন।
প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভ এবং অনিলের নামে ভূয়সী প্রশংসা করেন সলমন। ঋষি কপূরের নামটাই পুরোপুরি এড়িয়ে যান। সরাসরি নাম না নিয়েই তাঁর মনে ঋষি কপূরের স্থান কী, সে দিন তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বলেই মনে করেছিল বলিউড।