মেয়েকে নিয়ে অকপট কণীনিকা।
মেয়ে নিতারার সঙ্গে ছবি দিয়েছিলেন টুইঙ্কল খন্না। ইনস্টাগ্রামে অভিনেত্রী-লেখিকা মায়ের পোস্টের ছত্রে ছত্রে মেয়েকে ঠিক মতো সময় দিতে না পারার লুকোনো আক্ষেপ। কাজের চাপে মা হিসেবে নিখুঁত ভাবে সব দায়িত্ব পালন করতে না পারা নারীদের দলেই নিজেকে ফেলেছেন অক্ষয়-ঘরনি। বলেছেন, সন্তানকে নজরে রাখার পাশাপাশি তার মন পড়তে পারা, তার ভাবনাচিন্তাকে ঠিক পথে এনিয়ে যেতে পারলেই এই অপূর্ণতার বোঝা অনেকখানি কমবে। টুইঙ্কলের মতোই সন্তানকে ঠিক মতো সময় দিতে না পারার এমন আফশোস কি তাড়িয়ে বেড়ায় টলিউডের তারকা মায়েদেরও?
একরত্তি মেয়ের মা। এ দিকে, শ্যুটিংয়ের চাপে সন্তানকে সময় দিতে পারছেন কই! অনেকটা আক্ষেপ কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। অভিনেত্রীর কথায়, “অন্য অনেক চাকরিতেই একটা নির্দিষ্ট সময় বাইরে থাকেন মায়েরা। সন্ধ্যা হলেই ফের বাড়িতে, সন্তানের কাছে ফেরা। অভিনয়ের পেশায় অন্তত দশ-বারো ঘণ্টার লম্বা সময় কেটে যায় শ্যুটে। ইচ্ছে থাকলেও তাই মেয়ে কিয়ার সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারি না। ওর সঙ্গে যখন খুশি খেলতে পারি না, গল্প করতে পারি না। শ্যুটিংয়ে যাওয়ার পথে ঘুমন্ত মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে যাই মা-বাবার কাছে। জেগে থাকলেই বড্ড কান্নাকাটি করে। বলে ‘আয় তবচরী যাস না’! বেচারি এখনও নামটা ঠিক মতো বলতে পারে না। তখন চোখের সামনে থেকে স্রেফ পালাতে হয়! ভিডিয়ো কলও করতে পারি না। মা-কে এক বার দেখলে ওকে সামলে রাখাই মুশকিল!”
আফশোস মেটাতে কী করেন কণীনিকা?
মেয়েকে যখন পারেন, যতটুকু পারেন সময় দেন। ছুটি পেলেই সপরিবার বেরিয়ে পড়েন লং ড্রাইভে, সকলে মিলে হইচই করে কাটিয়ে দেন দিনটা। আর রবিবার বাদে আরও একটা দিন চেষ্টা করেন শ্যুটিংয়ে না গিয়ে মেয়েকে নিয়েই কাটাতে। ‘আয় তবে সহচরী’র নায়িকার কথায়, “করোনার দুটো বছরে বাচ্চারা মায়েদের বাড়িতে থাকায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিয়া তো এখনও বড্ড ছোট। ও আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চায়। আমিও ওর সঙ্গে। কিন্তু উপায় নেই। তবে সারা দিনের তুমুল খাটনি, অভিনয়ে সমস্ত আবেগ ফুরিয়ে ফেলে যখন কিয়াকে কাছে পাই, সমস্ত ক্লান্তি নিমেষে উড়ে যায়। ছুটির দিনগুলোয় সব না-পাওয়া সুদে আসলে উসুল করে নিই!”
আর এক অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর গল্পটা অবশ্য একেবারে উল্টো। মেয়ে শাহিদা নীরার ঘুম থেকে ওঠা, অনলাইন ক্লাস, খেলাধুলো, গান, কবিতা, তার ইউ টিউব ভিডিয়ো— সবেতেই মা সঙ্গী। মায়ের সঙ্গে শরীরচর্চাও করে ছ’বছরের খুদে কন্যে। ইদানীং অবশ্য মা মেয়ের কাছে বড্ড অপছন্দের! কেন? হাসতে হাসতেই সুদীপ্তা বলছেন, “আমি আসলে নিজের ফাঁকা সময় অনুযায়ী ওকে পড়তে বসাই, নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওকে সময় দিই যথাসম্ভব। এ দিকে, মেয়ের কাছে সেটা হয়ে গিয়েছে মা আসছে মানেই পড়তে বসতে হবে!”
মেয়ের সঙ্গে সুদীপ্তা।
মেয়েকে সময় দিতে না পারার সুযোগটাই সে ভাবে তৈরি হতে দেননি সুদীপ্তা। করোনা কালে মেয়েকে সঙ্গ দেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকটাই়। নিজের অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান বাড়িতেই। ছবির কর্মশালা চলে। অভিনেতা-কলাকুশলীদের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। ফলে মেয়েও থাকে চোখের সামনে, হাতের নাগালে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কখনও মেয়েকে অনলাইন ক্লাস করান, কখনও পড়ান, কখনও খাওয়ান বা ঘুম পাড়ান। মা-মেয়ের মজা, খেলাধুলোও লেগেই থাকে। তাতেই তৃপ্ত সুদীপ্তা। ‘বাড়িওয়ালি’, 'রাজকাহিনী', 'জ্যোষ্ঠপুত্র' মতো একাধিক জনপ্রিয় ছবির অভিনেত্রীর কথায়, “যতটা পারি সময় দিই মেয়েকে। ওর সব রকম চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করি। তবে নিজের কাজ সামলেই। মেয়েকেও সে ভাবেই অভ্যস্ত করে তুলছি।”