বোলপুরের প্রেক্ষাগৃহে ভিড় শাহরুখ ভক্তদের। (ইনসেটে) তিনটি শো-ই হাউস ফুল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
আবার বছর কুড়ি পরে!
১৯৯৫ নাগাদ মুক্তি পেয়েছিল ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’। ছবির রাজ এবং সিমরনের মতই তখন প্রেমে হাবুডুবু বোলপুরের দুই কলেজ পড়ুয়া তরুণ তরুণী। শুক্রবার মুক্তি পেল পর্দার সেই জুটিরই নতুন ছবি ‘দিলওয়ালে’। পর্দার এপারের সেই জুটিও এত দিনে বিয়ে করে রীতিমত সংসারী। স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বলে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন স্বামী। আর তারপর সস্ত্রীক সটান চলে এসেছেন বোলপুরের গীতাঞ্জলী সিনেমা হলে ‘দিলওয়ালে’ দেখতে। লাজুক মুখে যুগল জানালেন, মেয়ের থেকেও লুকিয়ে আসতে হয়েছে। আর এই নস্টালজিয়ার জেরেই জেলায় কাছে বিশেষ কলকে পেল না ‘দিলওয়ালে’-র সঙ্গে একই দিনে মুক্তি পাওয়া ছবি সঞ্জয় বনশালির ‘বাজিরাও মস্তানি’।
জেলার হলগুলিতে কেমন চলছে দু’টি ছবি?
বোলপুরের চিত্রা সিনেমা হলে চলছে ‘বাজিরাও মস্তানি’। হলটির ম্যানেজার কাশীনাথ প্রসাদ জানান, দিনে চারটি শো হচ্ছে। প্রথম দিন প্রথম শোতে দর্শক ছিলেন ২৪ জন। পরের শোতে মেরে কেটে ১৪ জন। খাঁ খাঁ করছে ৫৮০ আসনের হলটি। পরের শো গুলি কেমন চলবে ভেবে আতঙ্কিত কাশীনাথবাবু।
অন্য দিকে গীতাঞ্জলির ম্যানেজার তথাগত সিংহরায় জানান, সেখানে ‘দিলওয়ালে’-র শো চলছে দিনে তিনটি। প্রথম শোতেই হলের প্রায় অর্ধেক আসন ভরে গিয়েছিল। বেলা যত বেড়েছে, টিকিটের চাহিদা যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। ৭৫০ আসনের এই হলটিতে ‘দিলওয়ালে’-র বাকি দু’টি শো ইতিমধ্যেই হাউসফুল। পরিস্থিতি এমনই, যে ম্যানেজারের কাছে এসে উৎসাহীরা আবদার করছেন চেয়ার পেতে হলে ছবিটি দেখার সুযোগ করে দেওয়ার।
জেলা সদর সিউড়িতে ১০০ ফুটের মধ্যে পাশাপাশি দুটি হল হল রয়েছে। তার মধ্যে বীরভূম টকিজে এসেছে ‘বাজিরাও মস্তানি’। চৈতালী টকিজে ‘দিলওয়ালে’। বীরভূম টকিজের মালিক আবীর চট্টোপাধ্যায় জানান, ৭০০ আসনের হলটিতে প্রথম শোতে দর্শক ছিলেন ২৩ জন, পরের শোতে ৩৫ জন। তৃতীয় শোতে সংখ্যাটা নেমে একেবারে বেড়ে ১৫তে পৌঁছয়। আবীরবাবুর মতে, একই দিনে ‘দিলওয়ালে’ মুক্তি পাওয়ায় ওই ছবিই যাবতীয় ভিড় টেনে নিয়েছে। চৈতালী টকিজের ম্যানেজার তাপসকুমার দত্ত জানান, একই আসনের এই হলে প্রথম শোয়ে ৩৫০, পরের দুটি শোয়ে ২৫০-র মতো দর্শক হয়েছিল। এখানেও, দর্শকরা মূলত তরুণ প্রজন্মের।
রামপুরহাটের এক মাত্র হল মাম্পি টকিজে মুক্তি পেয়েছে ‘দিলওয়ালে’। সেখানেও রমরমিয়ে ব্যবসা করছে ছবিটি। রামপুরহাটে অবশ্য দেখা গেল কমবয়সিদের ভিড়ই বেশি। সেই দর্শকদের মধ্যে কট্টর শাহরুখ ফ্যান দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সইফ আলি জানাল, ‘‘শাহরুখ কে দেখতে এসেছি। জুটিকে নয়।’’ অবশ্য রাজেশ হোসেন এবং ইমতাজ হোসেন উলটো কথাই বললেন। মাম্পি টকিজের ম্যানেজার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রথম শোয়ে দর্শকদের ভিড় দেখে আশাবাদী।
মুরারইতেও রয়েছে একটি মাত্র হল। সেই প্যারাডাইস সিনেমা হলের অন্যতম অংশীদার দিলবর আলি জানান, সেখানে তিনটি শোতে রমরমিয়ে চলছে ‘দিলওয়ালে’। ৬২২ আসনের এই হলে প্রথম শোতে ভরে গিয়েছিল প্রায় অর্ধেক আসন। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শোতে দর্শক ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশো মতো।
এই বৈষম্যের কারণ কী?
শাহরুখ-কাজল অভিনীত পুরনো সেই ছবিই লাখ টাকায় বিকোচ্ছে ‘দিলওয়ালে’ নামের আড়ালে। যদিও, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’-র মত শুধু মিষ্টি প্রেমের গল্প নয়। এই ছবিতে রয়েছে ‘অ্যাকশন’ও। মাঝবয়সী দর্শকেদের অনেকেই জানালেন, ছবিটি কী নিয়ে তা না জেনেই তারা চলে এসেছেন শুধু পুরনো স্মৃতিতে জল দিতে। অন্য দিকে নতুন প্রজন্মের বেশ কিছু দর্শকও জানালো শাহরুখ-কাজল জুটি নিয়ে তাঁদের কোনও পিছুটান তৈরি না হলেও এই জুটির নাম মহিমাই তাদের হলে আসার বাড়তি কারণ ছিল।
রণবীর সিংহ, দীপিকা পাড়ুকোন জুটির মধ্যেও মশলা ছিল তরুণ প্রজন্মকে হলে টেনে আনার। জেলার দর্শকদের মতে, রণবীর, দীপিকা, প্রিয়াঙ্কা— সকলেই ভাল অভিনয় করেছেন ‘বাজিরাও মস্তানি’-তে। কিন্তু সাফল্যের রহস্যটির আঁচ পাওয়া গেল মধ্যবয়সী এক দর্শকের কথায়। ‘দিলওয়ালে’ দেখে হল থেকে বেরিয়ে বললেন, ‘‘শাহরুখ কাজল দু’জনেই মুটিয়েছে। কিন্তু রসায়নটা সেই আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।’’
নস্টালজিয়ায় ভর করে জেলায় প্রথম দিনের দৌড়ে অন্তত অনেকটাই এগিয়ে ‘দিলওয়ালে’।