ছবি শেষ হওয়ার পর আপনার চোখে জল দেখলাম...
হ্যাঁ, বারবার কেঁদে ফেলেছি। গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে আসছিল। প্রথম দৃশ্যে যখন কেয়াদি লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে, চোখের জল আর বাঁধ মানেনি। তার পর ওর মৃতদেহ নিয়ে আসা হল বাড়িতে। আমার সেজমাসির মানে কেয়াদির মায়ের ডুকরে ডুকরে কান্নার দৃশ্য, ছবিতে যখন দেখছি অঝোর নয়নে কেঁদেছি।
তার মানে কেয়া চক্রবর্তী হয়ে উঠতে পেরেছেন পাওলি?
কেয়াদির রোলটা পাওলি অসাধারণ করেছে। অথচ ও তো কোনও দিন কেয়াদিকে দেখেনি। কোনও দিন সামনাসামনি হয়নি। কিন্তু কী সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছে কেয়াদির স্বভাবটাকে। কী সু্ন্দর গাইল ‘ভালমানুষ’য়ের গানগুলো, মঞ্চে ঠিক কেয়াদি যেমন গাইত।
আপনার দিদির সঙ্গে খেয়া চরিত্রের মিল কতটা?
ছবিতে কেয়াদির পেশা-নেশা এগুলো হাইলাইটেড হয়েছে, ওর মনের আলোছায়া এসেছে। অভিনেত্রী কেয়া বেশি ফুটে উঠেছে।
কেয়ার সঙ্গে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজে। ফুটবল মাঠে। ছবিতে এমনই দেখানো হল। এটা কি সত্যি?
বিভিন্ন লেখায় পড়েছি রুদ্রদা ফুটবল নয় ক্রিকেট খেলতেন। ছবির কল্পনায় পরিচালক সেটাকে ফুটবল করেছেন।
কেয়ার সঙ্গে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের সম্পর্ক ভাল ছিল না। ছবিতে এটা দেখানো হয়েছে। সত্যি কি এই রকম তিক্ততা হয়েছিল?
হয়েছিল তো বটেই। কেয়াদি সুখী গৃহকোণ পায়নি। ওদের মধ্যে খুব ঝগড়াঝাঁটি হত। তিক্ততা হতে হতে ডিভোর্স হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু ডিভোর্সটা হয়নি।
রুদ্রপ্রসাদের ওপর রাগ হচ্ছিল ছবিটা দেখতে দেখতে?
না। নতুন করে আর কী রাগ হবে? কিন্তু কেয়াদির জীবনটা যে সুখের হল না সেটা ভেবে খুব মন খারাপ লাগছিল। এত আবেগপ্রবণ একটা মেয়ে কেয়াদি। তার কপালে এত দুঃখ! সেটাই খারাপ লাগে।
ছবির কোন দৃশ্যগুলো খুব সত্য বলে মনে হয়?
খেয়ার সঙ্গে ওর মায়ের কথাবার্তার দৃশ্যগুলো খুব বাস্তব। ঠিক ওই রকমই ছিল কেয়াদির সঙ্গে ওর মা মানে আমার সেজমাসির সম্পর্ক। সেজমাসি কোনও সময় কেয়াদিকে কোনও কাজে বাধা দেয়নি। নাটকের দল বাঁচাতে যখন গয়না বিক্রি করতে চেয়েছে, সেজমাসি আলমারি খুলে নিজের গয়নাও বের করে দিয়েছে। সেই দৃশ্যটা ছবিতে খুব সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে। কেয়াদির বাড়িতে অনেক বেড়াল ছিল। ছবিতেও সেই বেড়ালের সিনটা রয়েছে। এখনও মনে পড়ে কেয়াদির বেড়ালগুলোর কথা। আমি খুব ভয় পেতাম বেড়ালগুলোকে। আর কেয়াদি গান শুনিয়ে আমার ভয় দূর করার চেষ্টা করত।
অভিনয়ের জন্য, নাটকের জন্য কেয়ার আত্মত্যাগ কেমন ফুটেছে?
ছবিতে হুবহু এসেছে ওর আত্মত্যাগের প্রসঙ্গটা। কেয়াদির সঙ্গে খেয়ার এতটাই মিল যে দেখে গায়ে কাঁটা দেয়। নাটকের জন্য নিজেকে সমর্পণ করবে বলে কলেজে অধ্যাপনা ছেড়েছিল। যেই চাকরি ছাড়ল সেজমাসির পেস মেকার বসানোর প্রয়োজন হল। তখন অনেক টাকা দরকার। কী ভাবে যে দিদি অত টাকা জোগাড় করেছিল জানি না।
ছবিতে কেয়াকে দারুণ ভাবে স্বাধীনচেতা দেখানো হয়েছে। কেয়া কি সত্যি স্বাধীনচেতা ছিলেন এই রকম?
স্বাধীনচেতা ভাবটা একটু মেপেজুপে দেখানো হয়েছে। কেয়াদি এর চাইতেও বেশি স্বাধীনচেতা ছিল। নান্দীকারের পুরুষ নাট্যকর্মীরা কেয়াদিকে রাত রিহার্সালের পর বাড়ি পৌঁছে দিত। তখন রাত এগারোটা সাড়ে এগারোটা হবে। কেয়াদি পাড়ার লোককে ইরিটেট করার জন্য গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরত। মাঝে মাঝে পুরুষ সঙ্গীর কাঁধে হাত রাখত যাতে পাড়ার লোকেরা দরজা ফাঁক করে দেখে আরও ফিসফাস করে। এই সব বেপরোয়া মজায় কেয়াদির কোনও জুড়ি ছিল না। ছবিতে অবশ্য এই সব দেখানো হয়নি।
নান্দীকারের ভেতর রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর সঙ্গে অজিতেশের যে ইগো ক্ল্যাশ দেখানো হয়েছে, সেটা কতটা সত্যি?
পুরোটাই সত্যি। ওঁদের মধ্যে যে প্রচ্ছন্ন ইগো ক্ল্যাশ ছিল সেটা নাটকের জগতের সবাই জানে। কিন্তু নিজেদের স্বভাবের সফিসটিকেশন দিয়ে সেটা ওঁরা ঢেকে রাখতেন।
জলে পড়ে কেয়ার মৃত্যুটা কতটা বাস্তব মনে হল ছবিতে?
দিদির জলে পড়ার দৃশ্যটা ঠিক বাস্তবের মতোই ভয়াবহ মনে হল।
কী মনে হয়, কেয়ার মৃত্যুটা দুর্ঘটনা না অন্য কিছু?
যে ছবির শ্যুটিং করতে গিয়েছিল দিদি, তাদের প্রোডাকশন ইউনিটের ক্যালাসনেস থেকে একটা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে হয়। ছবিতে কেয়াদির মৃত্যু-তদন্তের সিকোয়েন্সগুলো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে খুব ভাল সাজিয়েছেন দেবেশ।