ছেলের সঙ্গে রচনা।
আমাদের দেশে রং নিয়ে না জানি মারামারি, হানাহানি। অথচ জীবনে এই রংটুকু না থাকলে, তা বড় ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে। তাই বোধহয় সূর্যাস্তের রক্তিম আভার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মুক্তির আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করেন টিভি পর্দার সকলের প্রিয় ‘দিদি’ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লকডাউনের বন্দি জীবন নিঃসন্দেহে সাদা-কালো সিনেমার মতোই। তবে রচনা কখনও ছেলে প্রণীলের জন্য পছন্দের রান্না করে, বা ঘর গুছিয়ে নিজের মতো করে জীবনকে রাঙিয়ে তুলতে চাইছেন। তিনি বলছিলেনও, ‘‘আমরা বাইরে কাজ করে অভ্যস্ত। বন্দিদশা কখনওই ভাল লাগে না। ক্যামেরা, লাইট, সাউন্ড— এইগুলোই যেন এখন জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে। এগুলো থেকে দূরে থাকতে কষ্টই হয়। কিন্তু নিয়ম না মানলে চলবে কী করে?’’ এর সঙ্গেই যোগ করলেন, ‘‘তাও বাজার করা, ওষুধ কিনতে যাওয়া, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা, এই সব তো করতেই হচ্ছে। এর বাইরে আমাদের কম্পাউন্ড থেকে বার হওয়ার প্রশ্ন নেই। ওই হাঁটার জন্য হয়তো নীচে নামি। তখন কারও সঙ্গে দেখা হলে কথা বলি। তবে এ ক্ষেত্রেও সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনেই কথা বলছি।’’
রচনার ছেলে প্রণীল ক্লাস এইটে উঠেছে। এখনও নতুন ক্লাসের বইপত্তর কিছুই পায়নি। তবে অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে প্রণীলকে। তার ফাঁকেই চলছে মায়ের সঙ্গে মজা করা, গল্প করা। আর মায়ের কাছে নিত্যনতুন খাবার তৈরি করে দেওয়ার আবদার তো রয়েছেই। রচনা বললেন, ‘‘ওর জন্য রান্না করাটা খুব পরিশ্রমের বিষয় নয়। ও রাজমা, পনির ভালবাসে, চিকেন খেলেও সিদ্ধ সবজির সঙ্গে করে দিলেই খুশি। ওর জন্য রান্না করতে ভালই লাগে। তার মধ্যে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে ওর সে ভাবে ধারণাও হয়নি। স্কুল বন্ধ বলে বেশ মজা। অনলাইনে যা একটু ক্লাস হচ্ছে। আর আমাকে বাড়িতে সারক্ষণ পাচ্ছে বলে ওর আনন্দ দেখে কে।’’ ছেলের সঙ্গেই তবে পুরো সময়টা কেটে যাচ্ছে? রচনা বলছিলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে অনেকটা সময়ই কাটছে। সেই সঙ্গে প্রচুর সিনেমা দেখছি। এত দিন যে সমস্ত সিনেমা দেখব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম, সেগুলোই চুটিয়ে দেখছি। গল্প-উপন্যাস পড়তে আমার অতটা ভাল লাগে না। তবে ফ্যাশন ম্যাগাজ়িন বা ট্রাভেল সম্পর্কিত লেখা পড়ি। সেই সঙ্গে বাড়ি গুছিয়ে চলেছি। বাইরের কাজে ব্যস্ত থাকি যখন, তখন আর সে ভাবে বাড়ি গোছানোর সুযোগ, সময় কিছুই হয় না। এখন অখণ্ড অবসর। তাই নিজের মতো করে বাড়ি গোছাচ্ছি।’’
আরও পড়ুন: আয়ুষ্মানের আর্জি
রচনা ঘুরতে খুবই পছন্দ করেন। মার্চ মাসেই শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরেছেন। শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পর অবশ্য একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁকে ঘিরে। তিনি কোয়রান্টিনে থাকেননি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন কেউ কেউ। এই বিষয়টি একেবারেই অস্বীকার করেছেন অভিনেত্রী। বরং তাঁর দাবি, ‘‘শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে আমি ১৪ দিন সেলফ কোয়রান্টিনে ছিলাম। ঘরের বাইরে এক পা-ও বার হইনি, নিজেকে একেবারে বন্দি রেখেছিলাম। ওই ১৪ দিন বন্দি থাকতে সত্যিই খুব কষ্ট হয়েছিল। একেই বাইরে থেকে সদ্য ফিরেছি। তার পরই বন্দিদশা। হাঁপিয়ে উঠছিলাম। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে সয়ে গিয়েছে বিষয়টা। আর সমস্যা হচ্ছে না।’’
তবে ভ্রমণপিপাসু রচনার মন এখন পড়ে রয়েছে সুদূর রোমে। ১৯ মে তাঁর রোমে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। টিকিট থেকে হোটেলের বুকিং সব করা হয়ে গিয়েছিল। ‘‘আমি খুব ঘুরতে ভালবাসি। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু যা পরিস্থিতি আবার কবে যে ঘুরতে যাব, কে জানে! রোম ট্রিপটা তো বাতিল হয়েই গেল। যদি পুজোর মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়, তখন দেশের মধ্যেই কোথাও একটা ঘুরতে যেতে পারি। বছরখানেকের আগে মনে হয় না বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হবে। তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হলে কী হবে, তা জানা নেই,’’ হতাশা স্পষ্ট অভিনেত্রীর গলায়। তবে এক নতুন ভোরের অপেক্ষায় রয়েছেন রচনা। যে দিন পৃথিবী আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে।
আরও পড়ুন: ১৫ সংখ্যাটি শিল্পা শেট্টির কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কেন জানেন?