অরিন্দম-অনির্বাণ-কৌশিক-উজান এবং ঋতব্রত
লকডাউন পর্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কমবেশি সকলেই। ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি তাঁদের, যাঁরা দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করে থাকেন। মঞ্চের নেপথ্যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, এমন মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন শহরের নানা দলের নাট্যকর্মীরা। লকডাউন চলাকালীন যেহেতু সব ধরনের কাজ স্তদ্ধ, তাই এই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেই সকল থিয়েটারকর্মীর সাহায্যার্থে তৈরি করা হয়েছে ফান্ড, যা থেকে অর্থ সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের হাতে।
শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন নাট্যদল নির্বিশেষে তৈরি করা হয়েছে ‘সৌভ্রাতৃত্ব’ নামে একটি সংগঠন, যাঁরা এই উদ্যোগে ব্রতী হয়েছেন। ‘গণকৃষ্টি’ দলের অমিতাভ দত্তের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ভাবনার শরিক হয়েছেন ‘স্বপ্নসন্ধানী’র কৌশিক সেন, ‘চার্বাক’-এর অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়-খেয়ালী দস্তিদার, ‘অশোকনগর নাট্যআনন’-এর শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, ‘প্রাচ্য’ নাট্যগোষ্ঠীর বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘মুখোমুখি’র বিলু দত্ত-সহ কুড়ি জন নাট্যকর্মী। কলকাতা-কেন্দ্রিক দলগুলির টেকনিশিয়ানদের জন্য তাঁরা যে ফান্ড তৈরি করেছেন, তাতে লাখ চারেকের কাছাকাছি অর্থ ইতিমধ্যেই সংগৃহীত হয়েছে। তিন-চার হাজার টাকা করে এখনও পর্যন্ত সাহায্য করা হয়েছে ৪০-৪৫ জনকে। এ প্রসঙ্গে কৌশিক সেন বললেন, ‘‘আমরা ছোটবেলায় ‘নাট্য সংহতি’র কথা শুনেছি, বিভাস চক্রবর্তী-মনোজ মিত্রদের দ্বারা পরিচালিত। চেষ্টা করছি, এই বিপদের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যাতে এই সাহায্য আমরা চালিয়ে যেতে পারি।’’ আর্টিস্ট ফোরাম তহবিলে এক লক্ষ টাকা দান করেছে। বিপ্লব, কৌশিকরা যে যাঁর মতো করে চেষ্টা করে অর্থ সংগ্রহ করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশে থাকা বন্ধুদের কাছ থেকে।
অন্য দিকে, অনির্বাণ ভট্টাচার্যও তাঁর সহযোগীদের নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের তহবিলে অর্থসাহায্য করতে অনুরোধ করছেন তাঁরা। এই কাজে পাশে পেয়েছেন জয়রাজ ভট্টাচার্য, উজান চট্টোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, অঙ্কিতা মাঝি-সহ অনেক নাট্যাভিনেতাকেই। ‘‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল, ‘সৌভ্রাতৃত্ব’র সঙ্গে মিলে কাজ করব আমরা। তবে শুনলাম, ওঁরা মূলত কলকাতা-কেন্দ্রিক কর্মীদের সাহায্য করছেন। আমরা চেষ্টা করছি বিভিন্ন জেলাতেও পৌঁছে যেতে। তবে ওঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। প্রত্যেককে আড়াই হাজার টাকা করে দিচ্ছি,’’ বললেন অনির্বাণ। জানালেন, ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এই তহবিলে এখনও যা অর্থ আছে, তাতে জনা তিরিশেক কর্মীকে দেওয়ার পরে এখনও পঞ্চাশ-ষাট জনকে সাহায্য করা যাবে।
মূলত ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমেই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এই অর্থ সাহায্য। যাঁদের ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের সুবিধে নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। লড়াই করে বাঁচতে চাওয়া বঙ্গ রঙ্গমঞ্চ এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাই ভরসা জোগাচ্ছেন নাট্যকর্মীরাই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)