গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
মাত্র তিন দিনেই আগেই মুক্তি পেয়েছে ইন্দ্রাশিস আচার্যের ছবি ‘ দ্য পার্সেল’। অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ও মুক্তি পেয়েছে দশ দিন হয়েছে। দু’টি প্রযোজক সংস্থারই বক্তব্য, দু’টি ছবিই বেশ ভাল ব্যবসা করছিল বক্স অফিসে। হাউজফুলও যাচ্ছিল শো। তবে সোমবার বিকেলে নবান্নে ‘রিভিউ’ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিনেমা হল মালিকদের কাছে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজ্যের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ আগামী ৩১ মার্চ অবধি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের এই অনুরোধে কী সাড়া দিলেন হল মালিকেরা? সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ওই দুই ছবির পরিচালক-প্রযোজকরাই বা কী বলছেন?
‘নবীনা’ সিনেমা হলের মালিক নবীন চৌখানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়েই আগামী ৩১ মার্চ অবধি হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। যাঁরা অ্যাডভান্সড বুকিং করেছেন তাঁদেরকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে পিভিআর সিনেমা হলের মুখপত্রের কথায় “কাল থেকে অ্যাডভান্সড বুকিং বন্ধ করে দিচ্ছি আমরা। সরকারি বিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় রয়েছি।”
প্রায় একই সুর প্রিয়া সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্তের গলাতেও। তিনি বলেন, “আগামী দু’ দিন অনেক অ্যাডভান্সড বুকিং রয়েছে। তাই১৯ মার্চ থেকে দু’তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।” এখন যে ছবি গুলো চলছে, হল আবার খোলার পর সে গুলো আর ফিরে আসবে না বলেও জানান তিনি। ‘বসুশ্রী’ সিনেমা হলের মালিক জানালেন কাল হল মালিকদের নিয়ে ‘ইম্পা’র মিটিং রয়েছে। তবে, মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন হল বন্ধ করার কথাই ভাবছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-করোনার মুখোমুখি টালিগঞ্জ, আতঙ্কের সাতকাহন
‘ব্রহ্মা জানেন...’এর প্রযোজক সংস্থা ‘উইনডোজ’, যার কর্ণধার পরিচালক জুটি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়। আনন্দবাজার ডিজিটালকে শিবপ্রসাদ জানান, তিনি সরকারের এই অনুরোধের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তাঁর কথায়, “সিনেমা এখানে মুখ্য নয়। যদি সে রকম হয়, পরে রিলিজ করা যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে এই প্রস্তাবকে আমরা সব দিক থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের ছবি সামাজিক বার্তা দেয়। তাই এর বিরোধিতা করা কোনওভাবেই সাজে না।”
আরও পড়ুন-টালিগঞ্জে শুটিং বন্ধ নিয়ে প্রযোজকদের আজকের বৈঠক বাতিল
‘দ্য পার্সেল’ ছবির পরিচালক ইন্দ্রাশিসের স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ। মাত্র তিন দিন হল মুক্তি পেয়েছে তাঁর ছবি। “আমার মতো পরিচালকের ছবি তো বছরে তিন-চার বার মুক্তি পায় না। প্রায় দুই বছর পর মুক্তি পেয়েছিল।ভাল প্রচারও পেয়েছিল অনেক দিন পর। ব্যবসাও কিন্তু মন্দ করেনি। ভালই চলছিল। খারাপ তো লাগছেই। কিন্তু কী করব? বৃহত্তর স্বার্থে এটা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।” আক্ষেপের সুর তাঁর গলায়। তবে করোনা-ভয় একটু দূর হলে ছবিটির পুনরায় মুক্তি ঘটান সম্ভব কি না, সে বিষয়ে প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে সবিস্তার কথা বলবেন বলেও জানান তিনি। পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর ছবি ‘ধর্মযুদ্ধ’ মুক্তির কথা ছিল আগামী ৩ এপ্রিল। অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে তা-ও।
আর্থিক ক্ষতি যে হবে সে কথা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন সবাই। কিন্তু করোনা-কাঁটা সর্বত্র। সে কাঁটা উপেক্ষা করে কার সাধ্য?