জ্যেষ্ঠপুত্র-এর দৃশ্য
কবীর সুমন এবং দেব-অনিকেত চট্টোপাধ্যায় বিরোধ মেটেনি এখনও। তবে এর মধ্যেই ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিলেন আর এক পরিচালক, প্রতিম ডি গুপ্ত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বারবার কবীর সুমন কেন বিতর্কের মধ্যে পড়েন এবং প্রতিমের স্ক্রিপ্টও কেন বারবার চুরি যায়! বোঝাই যাচ্ছে, পরিচালকের ইঙ্গিত, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ ছবিটির দিকে।
গত বছর যখন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র ঘোষণা করেন, তখনই বিতর্ক দানা বাঁধে। শোনা গিয়েছিল, ছবির স্ক্রিপ্ট ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে প্রতিম ডি গুপ্তের লেখা। এ ব্যাপারে পরিচালক বললেন, ‘‘আমি আর ঋতুদা মিলে ‘অন্য নায়ক’ নামে একটা স্ক্রিপ্ট লিখছিলাম ২০০৯-এ। সেই সময়ে কৌশিকদার ‘আর একটি প্রেমের গল্প’ ছবিটার কাজও চলছিল। ‘অন্য নায়ক’ বানানোর ইচ্ছে ছিল বুম্বাদাকে নিয়ে। যাই হোক, ঋতুদা মারা যাওয়ার পরে সেই খসড়াটা ওই বাড়িতেই রয়ে যায়। তার পরে ঋতুদার ভাই চিঙ্কুদাকে (ইন্দ্রনীল ঘোষ) স্ক্রিপ্টের কথাটা বলি। উনি বলেন, খুঁজে পেলে জানাব। তার কিছু দিন পরেই জানান, স্ক্রিপ্টটা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু আমার ভুল, সময়ের অভাবে আমি স্ক্রিপ্টটা নিয়ে আসতে পারিনি। এবং সেটা ওঁদের হাতে যায়। তার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে কৌশিকদা এবং বুম্বাদা জানান, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ আসলে ঋতুদার ভাবনা। এ বার আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দু’জন মানুষ মিলে যখন স্ক্রিপ্ট লেখে, যারা দু’জনেই পরিচালক এবং তার মধ্যে এক জন মৃত, তখন সেই স্ক্রিপ্ট পরিচালনা করার প্রথম অধিকার তো অন্য আর এক জনের। তাই না? আমাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হল। ছবিটাকে বিক্রির জন্য বা অন্য কোনও কারণে, ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ’ নামটা ব্যবহার করা হচ্ছে। কৌশিকদা আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘আমি তোর নামটা কোথাও একটা দেব।’ এটা তো বাচ্চাকে খুশি করার জন্য ললিপপ দেওয়ার মতো ব্যাপার। কিন্তু যেটা হল, তা আনফেয়ার। ঋতুপর্ণ ঘোষের নাম নিলে আমার নামও নিতে হবে, কারণ চিত্রনাট্য আমরা দু’জনে মিলে লিখেছি। এখানে স্ক্রিপ্টের এতই অভাব যে, দশ বছর আগে অন্য একটা মানুষের সঙ্গে লেখা স্ক্রিপ্ট টেনে নেওয়া হচ্ছে...’’
ক্রুদ্ধ পরিচালক আঙুল তুলেছেন ঋতুপর্ণর ভাই ইন্দ্রনীলের দিকেও। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ছবির আর্ট ডিরেক্টর কে? চিঙ্কুদা। সকলের একটা ভেস্টেড ইন্টারেস্ট আছে।’’
এ প্রসঙ্গে ইন্দ্রনীল বলছেন, ‘‘নিজের বাড়িতে দাদা কার সঙ্গে স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, সেটা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আমি ফাইলটা পেয়েছিলাম। কিছুটা দাদার হাতে লেখা। কিছু টাইপ করা নোটস।’’ এটা কি সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট ছিল? ‘‘ফিনিশড স্ক্রিপ্ট ছিল না। একটা ফাইলে রাখা ছিল। আমি সামনে থেকে দেখিনি, কে লিখছে। তাই সত্যিই কিছু জানি না।’’
এর আগেও প্রতিমের একটি স্ক্রিপ্ট চুরির ঘটনা শোনা গিয়েছিল, যার নাম ছিল ‘ভ্যানিশ’। সেই চিত্রনাট্যের সঙ্গে ‘২২শে শ্রাবণ’-এর অনেক মিল। তাই উঠে এল পুরনো প্রসঙ্গও, ‘‘ঋতুদা ফোন করে বলেছিল, সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) একটা ছবি বানাচ্ছে। গল্পটা পুরো তোর গল্পের মতো। আমি আর ‘ভ্যানিশ’ বানাতে পারিনি। ‘২২শে শ্রাবণ’-এর সঙ্গে তার এতটাই মিল। ‘অন্য নায়ক’ও বানাতে পারব না।’’ মিটমাটের জন্য নাকি আপনাকে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছে? ‘‘আমাকে এক টাকাও দেওয়া হয়নি। আমি টাকা চাইও না। বুম্বাদা, কৌশিকদা, সুরিন্দর ফিল্মস... সব বড় বড় নাম। আমি তো ন্যায্যটুকু চেয়েছি। ওরা নিজেদের ভুল স্বীকার করুক। আমরা যখন স্ক্রিপ্টটা লিখছি, কৌশিকদা সামনে বসে থাকত। অথচ এখন আমাকে বলল, আমার একদম মনে নেই রে!’’ মন্তব্য প্রতিমের। এ প্রসঙ্গে কৌশিককে ফোন করা হলে, বিতর্ক নিয়ে তিনি কথা বলতে চাননি।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর... কবীর সুমন তাঁর পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছেন। দেখা যাক, চিত্রনাট্যের টানাটানি কত দূর যায়।