উত্তমকুমারের স্বত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে সৃজিত-অতনু, গৌরবের ভূমিকা কী?
উত্তমকুমারকে নিয়ে কি আদৌ ছবি তৈরি হবে? কারণ উত্তমকুমারের স্বত্ব নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং অতনু বসুর দুটি ছবি নিয়ে এখন ঘোর অনিশ্চয়তা।
২০১৯ সালে দুই প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন উত্তমকুমারের পরিবারের পাঁচ সদস্য। তাঁরা হলেন সুমনা চট্টোপাধ্যায় (উত্তম-পুত্র গৌতমের প্রথম স্ত্রী), তাঁর ছেলে গৌরব চট্টোপাধ্যায় এবং মেয়ে নবমিতা চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া চট্টোপাধ্যায় (ছেলের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী), তাঁর মেয়ে মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়। প্রথমটি ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে। দ্বিতীয়টি অলোকানন্দা আর্টসের সঙ্গে।
প্রথম সংস্থার পক্ষ থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তৈরি হচ্ছে ‘অতি উত্তম’। দ্বিতীয় সংস্থার পক্ষ থেকে তৈরি হচ্ছে অতনু বসুর ছবি ‘অচেনা উত্তম’। মঙ্গলবার রাতে সৃজিত, গৌরব এবং ক্যামেলিয়ার কাছে আইনি নোটিস পাঠিয়েছে অলোকানন্দা আর্টস। তাদের দাবি, অলোকানন্দার সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে, তাতে বলা ছিল, কেবল মাত্র তারা ছাড়া উত্তমকুমারের সম্পত্তি আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি উত্তমকুমারের নাম ও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু সৃজিত পরিচালিত সেই ছবির পোস্টার মুক্তি পাওয়ার পরেই দেখা গিয়েছে, শিরোনামে অভিনেতার নাম এবং ছবি ব্যবহৃত হয়েছে। তা ছাড়া ‘উত্তমকুমারের নাতি’ হিসেবে অভিনয় করছেন গৌরব। চুক্তি অনুযায়ী, উত্তমকুমারের পরিবারের কোনও সদস্য তাঁদের আসল পরিচয় নিয়ে কোনও ছবিতে অভিনয় করতে পারবেন না। করলেও অলোকানন্দা আর্টসের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে।
‘অচেনা উত্তম’-এর শিল্পীরা
অলোকানন্দা আর্টসের পক্ষ থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে জানানো হল, বড় টাকার অঙ্কে উত্তমকুমারের স্বত্ব কেনাবেচা হয়েছে। তার পরেই উত্তমকুমারের মৃত্যুর ৪১ বছরে পর প্রথম বার তাঁর জীবনীচিত্রের প্রস্ততি নেওয়া হয়। অতনু ইতিমধ্যেই ছবির অভিনেতাদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। উত্তমকুমারের চরিত্রে অভিনয় করছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেনের ভূমিকায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় হিসেবে দেখা যাবে দিতিপ্রিয়া রায়কে।
অন্য দিকে সৃজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘‘অলোকানন্দা আর্টসের আগে আমাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন গৌরব এবং গৌরবের পরিবার। উত্তমকুমারের ৬৬টি ছবির স্বত্ব আমরা আগে কিনেছি। আমাদের সঙ্গে আগে কথা হয়েছে। খাতায় কলমে যা যা লেখা হয়েছে, তার এ দিক-ও দিক করিনি আমরা কেউ।’’
‘অতি উত্তম’-এর পরিচালকের কথায় জানা গেল, তাঁদের কাছে যে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে, তার জবাব শীঘ্রই অলোকানন্দা আর্টস পাবে। সৃজিতের কথায় জানা গেল, ২০১৯ সালে দু’পক্ষের সঙ্গেই গৌরবরা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু দু’টি কাগজের মধ্যে কোথাও গোলমাল রয়েছে কিনা সেটা দেখার। সৃজিত বললেন, ‘‘এই মুহূ্র্তে গৌরব এবং তাঁর আইনজীবীই পুরো সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।’’
‘অতি উত্তম’-এর পোস্টার
‘অতি উত্তম’-এর প্রযোজক অর্থাৎ ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের কর্ণধার নীলরতন দত্ত আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে আগে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তাই আমাদের উচিত আইনি নোটিস পাঠানো। কিন্তু আমরা কাজে ব্যস্ত, তাই এ সব দিকে মন দিতে পারিনি। আর নাম ব্যবহার করা যাবে না বললেই হবে? উত্তমকুমারের এতগুলি ছবি যে স্যাটেলাইটগুলি কিনেছে, তারা ছবির সম্প্রচার করছে না? সেখানে অভিনেতার নাম দেখানো হচ্ছে না?’’
‘অচেনা উত্তম’ ছবির পরিচালক অতনু প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘সৃজিতের ছবিটির প্রস্তুতি নাকি শুরু হয়েছে তিন বছর আগে থেকে। এতদিন সে সব নিয়ে কোনও আলোচনা দেখিনি কেন? আচমকাই দেখতে পাচ্ছি, ‘অতি উত্তম’! তাও না হয় ঠিক আছে। চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বলে শুনছি। তা হলে আমাদের সঙ্গে গৌরবের যে চুক্তি স্বাক্ষর হল, সেখানে তো বলা ছিল যে উত্তমকুমারের নাম, ছবি ইত্যাদিতে আর কারও অধিকার থাকবে না। তা হলে গৌরব তখন সে সব কেন বলেননি?’’ অতনুর আক্ষেপ, তবে কি এত বড় ছবি এখন বন্ধ করে দিতে হবে?