পড়াশোনা তো আছেই ফ্যাশনটাও তো করতে হবে

আজ থেকে বহু কলেজে ক্লাস শুরু। কোথাও কোথাও হয়ে গিয়েছে ‘ফ্রেশার্স ওয়েলকাম’। স্মার্ট প্রিন্টেড টিউনিক না রংচঙে ধোতি প্যান্ট এ বছর কোন পোশাক কাঁপাবে ক্লাসরুম? লিখছেন ঋতা ভিমানি।নতুন যাঁরা কলেজে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে এ এক দারুণ সময়। বাড়ির সব বাধানিষেধ টপকে এই তো স্বাধীন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। বেশির ভাগ কলেজই এখন কো-এডুকেশনাল। আর কলেজের স্বাধীন আবহাওয়ায় পা রাখা মানে শুধু ব্যক্তিত্বের পূর্ণ প্রকাশ নয়, পোশাকের দিক থেকেও নানা ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

নতুন যাঁরা কলেজে যাচ্ছেন, তাঁদের কাছে এ এক দারুণ সময়।

Advertisement

বাড়ির সব বাধানিষেধ টপকে এই তো স্বাধীন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। বেশির ভাগ কলেজই এখন কো-এডুকেশনাল। আর কলেজের স্বাধীন আবহাওয়ায় পা রাখা মানে শুধু ব্যক্তিত্বের পূর্ণ প্রকাশ নয়, পোশাকের দিক থেকেও নানা ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা। ড্রেস আপ করার জন্য সবচেয়ে জরুরি হল অ্যাটিটিউড। তা না হলে ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন কখনওই হবে না।

বর্ষার সময়টায় কলেজের পোশাক হতে হবে উজ্জ্বল, রংদার। একঘেয়ে রঙের পোশাক কখনওই নয়। এমন পোশাক পরবেন, যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। আর দেখেও মনে হয় যেন সদ্য ইস্ত্রি করা। কলেজে বর্ষার মরসুমে ছোট প্রিন্টেড কুর্তির সঙ্গে জিন্স বা হাল্কা পালাজো প্যান্ট পরতে পারেন। রং হবে নিয়ন শেডে। প্যান্টগুলো যথেষ্ট ফুরফুরে, পরে আরাম। এমনকী এই ধরনের ধোতি প্যান্টগুলো গরমকালে পরে বেশ স্বস্তি। বর্ষায় কলেজ যাওয়ার সময় মোটা জিন্সের প্যান্ট না পরাই ভাল। ওগুলো চট করে শুকোতে চায় না। একটা সুন্দর টপ বেছে নিয়ে মানানসই ধোতি প্যান্ট, সালোয়ার বা ট্রাউজার বেছে নিয়ে টিম আপ করলেই ব্যস্। আপনি কলেজ যাওয়ার জন্য এক্কেবারে তৈরি।

Advertisement

সালোয়ার কামিজেও এখন নজরকাড়া বৈচিত্র। ট্র্যাডিশনাল কুর্তার সঙ্গে মানানসই চুড়িদার আর চুন্নি পরলেই সদ্য কলেজছাত্রীটিকে ক্লাসিক দেখাতে বাধ্য। ট্রাই করতে পারেন পাকিস্তানি স্টাইল কুর্তাও। লেগিংস বা প্যারালেল প্যান্টসের সঙ্গে পরতে হবে। আর ছোট কুর্তা পরতে পারেন ম্যাচিং পাটিয়ালার সঙ্গে।

অনেক সময় কলেজের পরে ছোট্টখাটো পার্টি বা আউটিংয়ে যান অনেকেই। এ রকম সময়ে বাড়ি ফিরে পোশাক বদলানোর সুযোগটা অনেকেরই থাকে না। তাই আগে থাকতেই ব্যাগে কিছু মজাদার লম্বা ইয়ারিংস বা একটা চাঙ্কি নেকপিস ক্যারি করুন। ওগুলো পরলেই আউটিংয়ের সাজ কমপ্লিট। কাজল, লিপস্টিক বা ছোট্ট একটা পারফিউমও যেন ব্যাগে থাকে সব সময়। আর অবশ্যই ডিওডোরেন্ট। গায়ে সুগন্ধ না হলে যতই ভাল সাজুন, তা মাঠে মারা যাবে। সিম্পল লুকিং টপ আর প্যান্ট পরলে সাইকিডেলিক প্রিন্টের স্টোল বা স্কার্ফ ক্যারি করলেও কিন্তু দারুণ লাগবে।

কলেজ ফেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান খুব কমই হয়। আর এই সব অনুষ্ঠানে বেশির ভাগেরই লক্ষ্য থাকে নিজের সেরাটা বের করে আনার। র্যাপঅ্যারাউন্ড স্কার্ট বা পালাজোর সঙ্গে সুন্দর কাটের একটা টিউনিক পরলে খুব সুন্দর দেখাবে। সাধারণ স্কার্ট বা প্যান্টস বোরিং মনে হলে কলেজপড়ুয়ারা পরে নিতে পারেন প্রিন্টেড ট্রাউজার্স, বোল্ড প্রিন্টের খুব চওড়া পালাজো প্যান্ট, সাধারণ কোনও টপ-ও। সঙ্গে ম্যাচিং স্কার্ফ নিলেই কিন্তু সাজ কমপ্লিট!

শুধু সাদা বা কালো রঙের কোনও পোশাক পরে তার সঙ্গে চাঙ্কি রুপোর গয়না, পুঁতি বা পাথরের গয়না পরলেও কিন্তু দারুণ দেখাবে। নিউমার্কেটে বা মল-এর কোনও গয়নার দোকান ঘুরলেই পেয়ে যাবেন এই সব অ্যাকসেসরিজ। আর গড়িয়াহাটের ফুটপাথ তো আছেই। পছন্দমতো একটা গয়না বেছে নিলেই হল!

এমনও হতে পারে কলেজ থেকে আপনাকে সিধে যেতে হবে এনগেজমেন্ট সেরিমনি, বিবাহবার্ষিকীর মতো কোনও গেট টুগেদারে। কাঁথা স্টিচের একটা সুন্দর দেখতে ভারি দোপাট্টা নিয়ে নিন। বা র’ সিল্কে বানানো ফেস্টিভ কালারের জমকালো দোপাট্টাও নিতে পারেন। কুর্তি, পালাজো সবের সঙ্গে চলতে পারে এই জমকালো দোপাট্টাগুলো।

সাজতে পারেন ইন্দো-ওয়েস্টার্ন লুক-এও। একটা সুন্দর কাটের লম্বাহাতা শার্ট, স্লিম ডেনিমের সঙ্গে পরে নিতে পারেন। খুব সুন্দর লাগবে দেখতে। এর সঙ্গে স্ট্র্যাপড স্যান্ডাল বা জুতো পরলেই সাজ কমপ্লিট। জুতোর পছন্দ তো হাজার রকমের! এটুকু খেয়াল রাখবেন খুব হাই হিলড্ জুতো বা অন্যান্য অদ্ভুত ধরনের জুতোগুলো পার্টির জন্য আলাদা করে রাখবেন।

খুব স্বচ্ছ কুর্তি না পরাই ভাল। শরীরের সঙ্গে আঁটোসাটো টিউনিকও পরবেন না কখনওই। চপ্পলের ফ্লিপ-ফ্লপ আওয়াজও কিন্তু মোটেই ভাল লাগে না। কলেজের পোশাকে শাড়িটাই বা বাদ যায় কেন! সেমিনারে তো শাড়ি আরামসে পরতে পারেন। খুব ভাল একটা ধনেখালি বা টাঙাইল শাড়ি পরে তার সঙ্গে কনট্রাস্ট ব্লাউজ আর পুঁতির হার পরলে খুব ভাল লাগবে। চুল লম্বা হলে একটা সাধারণ বিনুনি বা হাতখোঁপা করলেও বেশ লাগে। খোঁপার মধ্যে একটা সুন্দর জুড়া পিন কিন্তু দুর্দান্ত।

‘চিটাগং’ সিনেমায় প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের লুকটাই ভাবুন। লম্বা বিনুনি, আর কাঁধে একটা স্মার্ট ঝোলায় তাঁকে দেখতে অসাধারণ লেগেছিল।

একটা নতুন ইনস্টিটিউশনে যখন আপনি পড়তে যাচ্ছেন, তখন কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতেই হবে আপনাকে। আমি যে কলেজে পড়াই, সেখানে ছেলে-মেয়েরা ইউনিফর্মে আসে। এই পোশাকটা যে শুধু তাঁদের নিয়মানুবর্তিতা বোধ দেয় তাই নয়, দেয় পরিচয়ও। আমি তো বিশেষ করে মেয়েদের বলি যে এই পোশাকটা থাকার জন্য তোমাদের প্রতিদিন কী পোশাক পরব, তাই নিয়ে মাথাব্যথার কোনও প্রয়োজন হয় না।

তবে কলেজটা কিন্তু বন্ধুবান্ধব নিয়ে শুধু হ্যাং-আউট আর পার্টি করার জায়গা নয়। কাজেই, আপনারা কী পরছেন, সেটাও কিন্তু কলেজের ব্যাপারে আপনি কতটা সিরিয়াস, সেই মাইন্ডসেটটা বুঝতে অনেকটাই সাহায্য করে।

তার মানে এই নয় কলেজপড়ুয়ারা সাজবেন না। সুন্দর রঙের জামাকাপড় পরুন, পরিষ্কার কাচা ইস্ত্রি করা জামা, ট্রেন্ডি চশমা। তবে মেক আপ যেন চড়া দাগের কখনওই না হয়।

কলেজপড়ুয়া অল্পবয়সি মেয়েদের তাই আমার একটাই পরামর্শ। এমন ভাবে পোশাক পরুন যা দেখে শুধু আপনার সহপাঠীরাই নন, শিক্ষকরাও খুশি হন। সাজপোশাক করুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দেশ অনুসারেই। কিন্তু নিজের পছন্দ বিসর্জন না দিয়েই।

ফ্যাশনের সিলেবাস

• ব্যাগে সব সময় কিছু জাঙ্ক জুয়েলারি ক্যারি করুন। কলেজ থেকে এ-দিক ও-দিক দৌড় মারতে চট করে একটা মেক-ওভারে কাজে দেবে।

• খুব ট্রান্সপ্যারেন্ট পোশাক পরবেন না। শরীরের সঙ্গে আঁটোসাঁটো পোশাকও কলেজে না পরাই ভাল।

• সেমিনারে শাড়ি পরছেন? লম্বা চুল হলে হাতখোঁপা করে একটা জুড়া পিন লাগিয়ে নিলে একটা অন্য রকম স্টাইল স্টেটমেন্ট হবে।

• হাই হিল জুতো কলেজে না পরাই ভাল। নানার রঙের স্ট্র্যাপড স্যান্ডেলস পাওয়া যায় এখন। কলেজের ফ্যাশনে তাদের জুড়ি মেলা ভার।

• সাধারণ কুর্তা পরলে একটা জমকালো এম্ব্রয়ডারড দোপাট্টা নিয়ে নিন। কলেজ থেকে পার্টি-বিয়েবাড়ি সর্বত্রই যেতে পারবেন অনায়াসে।


ছবি: কৌশিক সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement