গানে গানেই প্রতিবাদ, ধর্ষণের বিরুদ্ধে গলা ছাড়লেন সিধু। ছবি: সংগৃহীত।
শিল্প হল সমকালীন সমাজের আয়না। শিল্পেই ধরা পড়ে সমাজের অবক্ষয়। আবার সেই শিল্পই হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের ছবি ফুটিয়ে তোলায় অনন্য মাধ্যম শিল্প। আবার গর্জে ওঠার অন্যতম হাতিয়ারও। সেই চেতনার উপর ভর করেই কলম ধরে তরুণ প্রজন্ম। গান লেখে, সুর তোলে সেই প্রতিবাদের ছত্রে ছত্রে। কণ্ঠ ছাড়ে নির্ভয়ে। শহর কলকাতায় এই দৃশ্য খুব একটা বিরল নয়। মহানগর যে তার প্রতিবাদী কণ্ঠ হারিয়ে ফেলেনি, তার আরও এক দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন রূপন-অরিজিৎ-রুদ্ররা। তাঁদের হয়ে গলা ছাড়লেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, ওরফে সিধু। শ্রোতাদের কাছে যিনি পরিচিত ‘ক্যাকটাসের সিধুদা’ নামে।
‘আর দেরি নয়’ গানের মিউজিক ভিডিয়োতেও দেখা গিয়েছে ‘ক্যাকটাস’-এর গায়ককে।
অরিজিৎ ঘোষের লেখা ও সুরে বাঁধা গান ‘আর দেরি নয়’। ‘ড্রপস্প্লে’র প্রযোজনায় সম্প্রতি তাদেরই ইউটিউব চ্যানেল থেকে মুক্তি পেয়েছে এই গান। গান গেয়েছেন সিধু। সঙ্গীত পরিচালনায় ‘দ্য মিসিং লিঙ্ক’ খ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রুদ্র সরকার। ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তৈরি এই গান। সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার ভাষা এই গান। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এখনও নানা রকম যৌন নির্যাতনের শিকার হন নারীরা। বিকৃত যৌন লালসার শিকার হতে হয় সদ্যোজাত শিশু থেকে আশির বৃদ্ধাকেও। অপরাধের পরিসংখ্যান বাড়তে থাকে। তালিকায় জুড়তে থাকে আসিফা, নির্ভয়ার মতো একের পর এক নাম। বিত্তবান ও প্রভাবশালী তকমার আড়ালে ধামাচাপা পড়ে যায় সেই অপরাধ। দমন করা হয় তাঁদের কণ্ঠ। মুখ লুকিয়েই যন্ত্রণা ভোগ করে যান নারীরা। ‘আর দেরি নয়’ গানের মাধ্যমে সেই রুদ্ধ রোষের শিকল ভাঙার ডাক দিয়েছেন শিল্পীরা।
গানের জগতে প্রতিবাদের অন্যতম ভাষা রক ঘরানার মিউজিক। শহরের রক সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয় মুখ ‘ক্যাকটাস’-এর সিধু। স্বাভাবিক ভাবেই, ‘আর দেরি নয়’ গানের গায়ক খুঁজে পেতে দেরি হয়নি। মিউজিক ভিডিয়োর প্রযোজক রূপন মল্লিকের কথায়, ‘‘সিধুদাকে আমরা যখন গানটা পাঠিয়েছিলাম, সিধুদা মাত্র মিনিট দুয়েক সময় নিয়েছিলেন আমাদের উত্তর দিতে। আমরা জানিয়েছিলাম, আমাদের বাজেট তেমন নেই। সিধুদাই আশ্বস্ত করেছিলেন, বাজেট নিয়ে যেন আমরা চিন্তা না করি।’’ প্রাসঙ্গিক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয় নিয়ে গান বেঁধেছেন এক দল তরুণ শিল্পী। তাঁদের উৎসাহ না দিয়ে পারেননি সিধু। তাঁদের এক ডাকেই সাড়া দিয়ে চলে এসেছেন রেকর্ডিং স্টুডিয়োয়। এমনকি, মিউজিক ভিডিয়োর জন্য শুট করতে কলকাতা থেকে চলে গিয়েছিলেন চুঁচুড়াতেও। আনন্দবাজার অনলাইনকে সিধু বলেন, ‘‘ওঁদের সবার বয়স মোটামুটি ২৪-২৫ বছর। ওঁদের মধ্যে যে এই সামাজিক সচেতনতা এসেছে, সেটা অত্যন্ত ভাল একটা বিষয়। তাই আমিও খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে গানটা গেয়েছি।’’ তাঁর মতে, ‘‘শিল্পীরা তো শিল্পীদের মতো করেই সামাজিক ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেবেন। তাঁরা তো আর মিটিং-মিছিল করবেন না। আর আমি মনে করি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তা না থাকলে কারও শিল্পীসত্তা পূর্ণ হয় না।’’
শুধু ‘আর দেরি নয়’ গানই নয়, অন্যান্য প্রজেক্টেও কাজ করছে ‘ড্রপস্প্লে’। সেই কাজের সঙ্গে যেমন যুক্ত রয়েছেন শ্রীমা ভট্টাচার্যের মতো পরিচিত মুখ, তেমনই শহরের উঠতি শিল্পীদেরও সুযোগ করে দিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি, বেশি সংখ্যক শ্রোতার কাছে পৌঁছনোর জন্য সিধুর মতো জনপ্রিয় তারকাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তাঁরা। প্ল্যাটফর্ম ও উপার্জনের অভাবে যাতে উঠতি শিল্পীরা বঞ্চিত না হন এবং নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারেন, সে কথা ভেবেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী রূপনরা।