অনুপম রায়। — ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: যদি বলি অনুপম রায়ের হাতেই তো টলিউডের সুর সাম্রাজ্যের ভার। আর তো কেউ সে ভাবে সুযোগই পাচ্ছে না। এখানে স্যাচুরেশনের প্রশ্ন কোথায়?
উত্তর: স্যাচুরেশনের বিষয়ে পরে আসছি। আগে বলি, এটা একেবারেই ভুল যে অন্য কেউ সুযোগ পাচ্ছে না।। শুনুন, গত বছরে ১০৪টিবাংলা ছবি হয়েছে। সেখানে আমি খুব বেশি হলে ৪-৫টা ছবিতে কাজ করেছি। এখন খোলা বাজার। ভাল কাজ করলে নিশ্চয়ই মানুষ তাঁকে গ্রহণ করবে। আর আমার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সকলের ভাল সম্পর্ক। এ সব সুযোগ না দেওয়া বা কেড়ে নেওয়ার বিষয় নেই।
প্রশ্ন: ২০১৮-য় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দৃষ্টিকোণ’, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘কণ্ঠ’,সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘উমা’,মৈনাক ভৌমিকের ‘ঘরে বাইরে’, অন্যদিকে সুজিত সরকারের ‘অক্টোবর’! অনুপম রায়ের একঘেয়ে হওয়ার দুর্ভাবনা হয় না?
ছবিগুলো একঘেয়ে নয়। সম্পূর্ণ আলাদা। তার পরিস্থিতিও আলাদা। তাই গানগুলো আলাদা হয়ে যায়। যেমন, মৈনাকের ছবি এ প্রজন্মের আধুনিকতা ঘিরে। সেখানে আনন্দ, ছন্দ, উৎফুল্লতা এসেছে আধুনিক সুরে। অন্যদিকে কৌশিকদার ‘দৃষ্টিকোণ’-এ প্রচুর সিরিয়াস দৃশ্য আছে। সেখানে বেদনার গান তৈরি করতে হয়েছে।
প্রশ্ন: আবার ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ-অনুপম রায়। আবার কি আর একটা ‘তুমি যাকে ভালবাস’ সুপারহিট হবে?
এ বারে এই চাপটা তো আছেই। দেখা যাক কী হয়?
প্রশ্ন: আর ‘অক্টোবর’?
উত্তর: সুজিতদার ছবিতে যে কাজটা করেছি সেটা এর আগে কোথাও, কক্ষনও করিনি। খুবই অন্যরকম। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না। ওটা সুজিতদাই বলবে।
প্রশ্ন: এত ছবির কাজ করছেন। তাহলে প্রতীমকে আগামী ছবিতে না বলে দিলেন কেন?
উত্তর: এটা কোনও জটিল বিষয় নয়। আশা করি আমি যা বলছি সেটাই লেখা হবে।
প্রশ্ন: আপনি দেখেছি বরাবর খুব সাবধানী। আপনি যা বলবেন সেটাই লেখা হবে।
উত্তর: প্রতীম আমার খুব বন্ধু। আমি ওকে না বলেছি কারণ আমি সত্যি এ বার ব্রেক নিতে চাই।
প্রশ্ন: মানে?
উত্তর: স্যাচুরেশন নিয়ে জানতে চাইছিলেন তো? এ বার বলি, ছবির কাজ একনাগাড়ে এত করা যাবে না আর। জুন থেকে ব্রেক নিতে চাই। বিষয়টা বুঝতে হবে। দেখুন, তিরিশটা গান গাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু তিরিশটা গান তৈরি করা ঠিক ততটাই কঠিন। আমাকে তো তিরিশটা গানের আলাদা আলাদা আবেগগুলো ধরতে হবে। আমি যদি যন্ত্রের মতো কাজ করে যাই তাহলে ওই আবেগগুলোকে আমি ছুঁয়ে দেখতে পারব না! আর শুধু প্রতীম নয়, আমি পরমকে (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) না বলেছি, শিবুদার (শিবপ্রসাদ) ‘হামি’-তে কাজ করিনি। সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) ‘এক যে ছিল রাজা’ করছি না। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ছবি করছি না। আমি স্যাচুরেটেড হয়ে যাব। একটু থামা দরকার। আর সবচেয়ে বড় কথা, যাদের নাম বললাম তারা প্রত্যেকে নির্মাণের লোক। তারা জানে, কিছু ক্রিয়েট করতে হলে নিজেকে সময় দিতে হয়। জল-হাওয়া-রোদের কাছে নিজেকে ছেড়ে রাখতে হয়। তারাও আমায় সাহায্য করছে।
স্টেজ পারফরম্যান্সের চেনা মেজাজে অনুপম। ছবি: অনুপমের টুইটার পেজের সৌজন্যে।
প্রশ্ন: এতগুলো বড় ছবি ‘না’ করলেন, আফশোস বা ভয় হয় না?
উত্তর: বললাম যে এরা সকলেই আমার বন্ধু। একেবারে কাজ করব না তা তো নয়। শিবুদা-নন্দিতাদির ‘কণ্ঠ’ করছি। সৃজিতের ‘চৌরঙ্গী’ করব। আমি নিজের মতো করে কিছু কাজ করতে চাই। অ্যালবাম। আরও অন্য কিছু।
প্রশ্ন: যেমন আশা অডিও-র ওয়েব সিরিজে এই প্রথম ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’রগান গাইলেন।
উত্তর: হ্যাঁ। মহীনের ঘোড়াগুলি বহুকাল আগে যে ভাবে নিজেদের সম্পূর্ণ ভেঙে কাজ করেছে তার জন্য আমি ওদের সম্মান করি।মহুয়া লাহিড়ীকে ধন্যবাদ আমিএই কাজটা করতে পারলাম। ’৭৮-এ লেখা ‘সুধীজন’ আজও এত প্রাসঙ্গিক! সে কথা ভেবেই এই গান গাইলাম।হয়তো মূল গানের মতো আমরা গানটা গাইতে পারিনি, কিন্তু আমি এই গান গেয়ে ট্রিবিউট জানাচ্ছি।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের জন্য তো একটা সিঙ্গল করলেন?
উত্তর: কাঁটাতার পেরিয়ে একটা রোম্যান্টিক গান করেছি।
প্রশ্ন: আসলে আপনি আজও খুব আবেগপ্রবণ...গল্পের পাতায় আজকের জীবনের শব্দেরা ফিরে আসে। এ বছর যেমন ‘আমাদের বেঁচে থাকা’ সঙ্কলন প্রকাশিত হল।
উত্তর: এই লেখাগুলো আমার অনেকদিনের, অনেক দিন ধরে লেখা। সেগুলো এক জায়গায় এল।
আর গান গাইবেন না? দর্শকদের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন অর্পিতা
প্রশ্ন: এত রকম কাজ করছেন। কিন্তু আপনার আগের সাক্ষাৎকার পড়তে গিয়ে দেখলাম বেশ অনেক দিন হয়ে গেল কথা বলেননি!
উত্তর: আমি তো গান বানাই।কেউ যদি আমার কাজ নিয়ে জানতে না চায় আমি ফোন করে তো আর জানাব না।
প্রশ্ন: তবে ‘পরি’ নিয়ে খুব বেশি প্রমোশন হয়নি। কেন?
উত্তর: জানি না এটা বলা ঠিক হবে কি না! ‘পরি’ তে আমার যে দুটো গান ছিল সেখানে অনুষ্কা আর পরমের সম্পর্কটা প্রকাশ পেয়েছে, এটা নিয়ে আগে কথা বললে এই অংশটা প্রকাশিত হয়ে যেত, যা ওঁরা আগে চাননি।
প্রশ্ন: ওঁরা মানে তো অনুষ্কা শর্মা?
অনুষ্কা কিন্তু খুব ভাল আড্ডা দিতে পারে। ম্যারিয়টে যে বার আমাদের ‘পরি’-র জন্য মিটিং হল দেখলাম কাজের চেয়ে অকাজের কথা আমরা বেশি বলেছি।
‘পরি’র শুটিংয়ের সময়। অনুষ্কা শর্মার সঙ্গে অনুপম। ছবি: অনুপমের টুইটার পেজের সৌজন্যে।
প্রশ্ন: ভূতের ছবিতে গজল ব্যবহার করতে রাজি হয়েছিল অনুষ্কা?
উত্তর: হ্যাঁ। আমি ওর সঙ্গে কথা বলে বুঝেছিলাম, ও যে কোনও ধরনের এক্সপেরিমেন্টের পক্ষে। ‘পরি’-র গান মানুষের ভাল লেগেছে।বিশেষ করে ঈশান মিত্রকে দিয়ে এই প্রথম আমি প্লে ব্যাক করালাম ‘পরি’-তে। চমৎকার গেয়েছে ও। আর আমি তো বরাবর চেষ্টা করেছি প্লে ব্যাকের ক্ষেত্রে কোনও না কোনও নতুন একজনকে দিয়ে গাওয়ানোর।আমি কোনও দিনই আমার অতীতকে ভুলিনি। আজ সৃজিত মুখোপাধ্যায় না থাকলে অনুপম রায় এ ভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে আসতো না।
প্রশ্ন: বহু বছর পরে তো আবার লগ্নজিতার সঙ্গে কাজ করলেন।
উত্তর: প্রায় সাড়ে তিন বছর বাদে। ও এখন অনেক পরিণত।
আরও পড়ুন, অনিন্দিতার বলিউড ডেবিউ, সঙ্গী এষা
প্রশ্ন: মোনালি ঠাকুরের সঙ্গে নাকি ডুয়েট গেয়েছেন?
উত্তর: মৈনাকের ‘ঘরে বাইরে’-তে ওরকম একটা গানের দৃশ্য ছিল।গানটা কোয়েল আর যিশুর লিপে থাকবে।
প্রশ্ন: এত পাওয়ার মাঝে নিজের কাছে কোন চ্যালেঞ্জটা সামনে রাখছেন অনুপম রায়?
উত্তর: এ ভাবে তো ভাবিনি আগে।তবে এই যে নিজের জায়গা, কাজ— এই জায়গাগুলো বজায় রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ!
বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন