নওয়াজের সঙ্গে ঈশিকার সেই ভাইরাল দৃশ্য।
বাড়ি হাওড়ায়। পাঁচ বছর বয়স থেকে মমতাশঙ্করের কাছে নাচের তালিম। সাড়ে তিন বছর নান্দীকারের পাঠ। ঝুলিতে ১৩টা বাংলা ছবি। একটা হলিউড প্রজেক্ট। কিন্তু মেয়ে লাইম লাইটে এলেন নেটফ্লিক্সের শো ‘সেক্রেড গেমস’-এর হাত ধরে। সৌজন্যে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে যৌন দৃশ্যের ভিডিও। যা আপাতত ভাইরাল। তিনি ঈশিকা দে।
অভিনয়ের হাতেখড়ি
‘‘মম মাসির কাছে শুধু নাচ নয়। অভিনয়টাও শিখতাম। তার পর তো নান্দীকার,’’ মুম্বই থেকে ফোনে বললেন ঈশিকা। গত দেড় বছর ধরে মুম্বইতে রয়েছেন তিনি। ‘চৌকাঠ’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘প্রলয়’, ‘ক্রাইম’— এর মতো ১৩টি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। হলিউডি ছবি ‘সোল্ড’-এও সুযোগ এসেছে, কিন্তু পরিচিতি এল ‘সেক্রেড গেমস’-এর সৌজন্যে।
প্রথম বলিউড প্রজেক্ট
না। ‘সেক্রেড গেমস’ কিন্তু ঈশিকার প্রথম বলিউডি প্রজেক্ট নয়। বরং এর আগে অনুষ্কা শর্মা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত প্রসিত রায় পরিচালিত ‘পরী’ ছবিতে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোন চরিত্রে? ঈশিকার জবাব, ‘‘আমার সিন এডিটের পর বাদ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রেডিট লাইনে আমার নাম ছিল।’’
শুটিংয়ে অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে ঈশিকা।
সুযোগ এল কী ভাবে?
বলিউডের নামজাদা কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়ার টিমকে নিজেই অডিশন দেওয়ার জন্য ফোন করেছিলেন ঈশিকা। অডিশনে চান্স পাওয়ার পর প্রথমে পারিশ্রমিক সংক্রান্ত সমস্যার কারণে তিনি নিজেই ‘সেক্রেড গেমস’-এর সুযোগ বাতিল করে দেন। পরে ফের ডাক আসে। ঈশিকা শেয়ার করলেন, পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ বারবার জানতে চেয়েছিলেন, নগ্ন দৃশ্যে অভিনয়ে কোনও সমস্যা হবে না তো? কনফিডেন্টলি ঈশিকা বলেছিলেন, ‘‘আমি এ ধরনের কাজ করেছি। আমার কোনও সমস্যা নেই।’’
আরও পড়ুন, ‘যেখানে প্রোমোশনের সুযোগ থাকে, সেখানেই হয়তো কাস্টিং কাউচ আছে’
ডাউন টু আর্থ অনুরাগ
অনুরাগ কাশ্যপ নাকি একেবারে মাটির মানুষ। অন্তত ঈশিকার অভিজ্ঞতা তেমনই। ‘‘আমি সেটে যখন ঢুকলাম দূরে বসেছিলেন। নিজে এসে কথা বললেন। নওয়াজও খুব ভাল মানুষ। ধরুন, কখনও অনুরাগ আমাকে কোনও সিন বোঝাচ্ছেন, তখন নওয়াজ এসে জানতে চাইছেন, আচ্ছা, পরের সিনটা কী? মানে ভুলে গেলে সিনিয়র অ্যাক্টর ডিরেক্টরকে জিজ্ঞাসা করবেন। আমি জুনিয়র। উনি কিন্তু আমাকে বলতেন। আমি বলতে চাইছি ওরা সবাই ডাউন টু আর্থ। কোনও ইগো নেই।’’ বলতে বলতে যেন শুটিং ফ্লোরেই ফিরে গেলেন ঈশিকা।
আরও পড়ুন, তনুজাকে নিয়ে শুটিং করেছি, ভাবতেই হয়নি, বলছেন পরমব্রত
যৌন দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার ফিডব্যাক
ঈশিকা-নওয়াজের যৌন দৃশ্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে। হাওড়ার ভবানী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশংসাই পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠার অলিগলি? হাওড়ার পাড়া কী বলছে? ঈশিকার কথায়, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, এটা নিয়ে বাবার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত আমার কোনও কথা হয়নি। বাবা জানতও না। হইচই হওয়ার পর হয়তো জেনেছে। বুঝতেই পারছেন, কিছু গোঁড়ামি তো রয়েছে। আর মা ভাবছে, সবাই এ বার ছি ছি করবে। কী হবে এ বার? যদিও মা সাপোর্টিভ। ফলে আমার পাড়াও হয়তো এমনটাই ভাবছে। তবে আমি সততা নিয়ে কাজ করি। তাই আমি এটা নিয়ে ভাবছি না।’’
ঈশিকা আসলে যেমন। ছবি: ঈশিকার ফেসবুক পেজের সৌজন্যে।
নিজেরটা নিজে করে নাও
ছোট থেকেই ঈশিকা এমন পরিবেশে বড় হয়েছেন, যেখানে খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হত নিজের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। বাসন্তী দেবী কলেজের ইংরেজি অনার্সের প্রাক্তনী এক সময় বিউটি প্রডাক্টও বিক্রি করেছেন। ‘‘জানেন, আমি টিউশন করে নান্দীকারের ফিজ দিতাম। ফলে আমি যদি সত্ পথে উপার্জন করি, তা হলে তা নিয়ে সমস্যা হবে কেন?’’ বললেন আত্মবিশ্বাসী ঈশিকা।
আরও পড়ুন, তিন এক্কে তিন, কেয়ার অব সুদীপ্তা
পরের ধাপ
আনন্দ এল রাইয়ের প্রযোজনায় নভদীপ সিংহের পরিচালনায় পরবর্তী একটি ছবিতে অভিনয় করছেন ঈশিকা, যেখানে নায়ক সইফ আলি খান। শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে এই ছবির। তবে নাম এখনও ঠিক হয়নি। এ ছাড়া নেটফ্লিক্স, হটস্টারের মতো প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজেরও কাজ চলছে। সব মিলিয়ে হাওড়ার মেয়ে মুম্বইতে নিজের পায়ের তলার জমি শক্ত করার লড়াই চালাচ্ছেন। লড়াইটা ঠিক তাঁর মতোই জেদি।