গত তিন-চার বছর ধরে দেবজ্যোতি ঘুরছেন বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ছবি: সংগৃহীত
সামনে এগোতে এগোতে শিল্প কখনও নির্মাণের দিকে তাকায়।
কিছু দিয়ে যাওয়ার সৃষ্টি। সঙ্গীতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে থাকা দেবজ্যোতি মিশ্র নতুন ভাবনায় মেতে উঠেছেন।
এই ভাবনা হঠাৎ পাওয়া নয়।
এক উদ্বাস্তু অঞ্চল। মধ্যবিত্ত পরিসর জুড়ে পূর্ববাংলা থেকে আসা মানুষের গানের ডালা যে সৃষ্টির প্রবহমানতায় একটু একটু করে তৈরি হয়েছিল, তার ফলস্বরূপ প্রকাশ পেল ‘গাজিপুর গানগ্রাম’।
আরও পড়ুন: চুমু বিতর্কে বিদ্ধ এই নবাগতা বলি নায়িকা একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার
‘‘আমার বাবা আমাকে ভায়োলিন শিখিয়েছিলেন। আর সেই মধ্যবিত্ত পরিসরেই বাবার হাত ধরে বাখ থেকে মোৎজার্ট। এর পাশাপাশি উস্তাদ আলি আকবর, রবিশঙ্কর, দেবব্রত বিশ্বাস, হিমাংশু দত্ত, সলিল চৌধুরী আমার সাঙ্গীতিক বৃত্তকে পূর্ণতা দেন। তার পর কাজের সূত্রে সলিল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ। সলিলদার থেকে আমি যে শুধু গানবাজনা শিখেছি তা নয়, উনি আমাকে দেখিয়েছেন জীবনের আলো। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জেলার দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে বহু সঙ্গীত-উৎসুক মানুষজন আসতেন ওঁর থেকে কিছু শিখবেন বলে। এই দেখা থেকেই আমার মনের মধ্যে ঘুরতো গ্রামাঞ্চলে গান শেখা নিয়ে কিছু করার।’’ বললেন দেবজ্যোতি মিশ্র।
আরও পড়ুন: জয় শ্রী রাম বা বন্দে মাতরম বলে মানুষকে বোকা বানানোর দরকার নেই: দেব
এখনও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর, কী ভাবে রেকর্ডিংয়ের কাজ ফেলে সলিল চৌধুরী প্রাণপণ চেষ্টা করতেন নিজের সুরের আলো ওই দূরদূরান্তের মানুষের ওপর ছড়িয়ে দিতে।
স্মৃতি থেকে বললেন দেবজ্যোতি। ‘‘কথাপ্রসঙ্গে সলিলদা প্রায়ই আমাকে বলতেন, ‘দেখ, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীতে কি সুন্দর জ্ঞানের উন্মুক্ত ভাণ্ডার তৈরি করে রেখে গেছেন। ইচ্ছে হয়, আমিও যদি ও রকম একটা কিছু করে যেতে পারি।”
গত তিন-চার বছর ধরে দেবজ্যোতি ঘুরছেন বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এই যাওয়ার মধ্যে নিহিত আছে নানা রঙের মেঠো সুরের আবিষ্কার। হয়তো বা এখান থেকেই প্রকাশ পাবে কোনও আনকোরা সঙ্গীত প্রতিভা।
‘এক বছর ধরে এই সঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ চলছে। নাম গাজিপুর গানগ্রাম’। ছবি: সংগৃহীত
‘‘আমার খুব প্রিয় শিল্পীবন্ধু মেহতাবের সঙ্গে কথা হল। দু’জনেই যারপরনাই উৎসাহী। অতএব, ঠাকুরপুকুর থেকে মিনিট পঁচিশের দূরত্বে গাজিপুরে দেড় একর জমি নিয়ে শুরু হল এই কর্মযজ্ঞ। গত এক বছর ধরে এই সঙ্গীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ চলছে। নাম দিয়েছি ‘গাজিপুর গানগ্রাম’। ইচ্ছে আর প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও যারা আর্থিক অভাবে গান শেখার সুযোগ পায় না, মূলত তাদের গান শেখানোই এই গানগ্রামের লক্ষ্য। ভারতবর্ষের বিভিন্ন সঙ্গীত ঘরানার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এখানে।’’ বললেন দেবজ্যোতি।
এ ছাড়া কয়েক জন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীও এই উদ্যোগে সামিল হবেন বলে মনে করছেন দেবজ্যোতি। সময়বিশেষে এঁদের থেকেও শেখার সুযোগ পাবে ছাত্রছাত্রীরা। নিজের ইচ্ছের সঙ্গে মিশে আছে গুরু সলিল চৌধুরীর ইচ্ছেকে পূর্ণতা দেওয়ার।
‘‘স্বপ্ন দেখেছি, স্বপ্ন সত্যি করতে ঝাঁপিয়েও পড়েছি। আমার ‘গাজিপুর গানগ্রাম’ আমার কাজের পাশাপাশি জ্ঞানপিপাসু সেই সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য কিছু করে যাওয়ারই এক প্রচেষ্টা,’’ আবেগের স্বরে ভাসলেন দেবজ্যোতি।