শেষ হল এক অধ্যায়ের। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সত্যি নাকি? গুজব না তো? ভোর হতে না হতেই ছড়াতে থাকা খবরটা দেখে বা শুনে, প্রায় সবার, এমনটাই ছিল প্রথম প্রতিক্রিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই ছড়ানো ভুয়ো খবর বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী অনেকেই এখন সচেতন। তাই কেউ টিভি খুলে ফেলেছেন। কেউ ওয়েব নিউজ সার্চে। হ্যাঁ, সত্যিই চলে গিয়েছেন শ্রীদেবী।
দুবাইতে ছিলেন অভিনেত্রী। সেখানেই শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বড়সড় হার্ট অ্যাটাক। সব শেষ। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে।
অভিনেতা ভাইপো মোহিত মারওয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে দুবাইতে গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। বিয়ের অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পর পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের বেশির ভাগই দেশে ফিরে আসেন। শুটিংয়ের জন্য ফিরে এসেছিলেন বড় মেয়ে জাহ্নবিও। স্বামী বনি কপূর আর ছোট মেয়ে খুশিকে নিয়ে থেকে যান শ্রীদেবী। শনিবার রাতে দুবাইয়ের হোটেলে বাথরুমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন, শোকস্তব্ধ শ্রী-হীন বলিউড
ভোররাতে মুম্বইতে শ্রীদেবীর মৃত্যুর খবর দেন বনি কপূরের ভাই সঞ্জয় কপূর। ঘটনার আকস্মিকতায় তখনও তিনি ভাল ভাবে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। সংবাদমাধ্যমের কাছে সঞ্জয় বলেন, “দুবাইতেই ছিলাম আমি। খবর পেয়ে এখন ফের সেখানেই ফিরে যাচ্ছি। ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঘটনাটা ঘটেছে। এর বেশি কিছু আমিও এখন জানি না।”
এর পর রবিবার সকালেই দুবাই চলে যান সঞ্জয়। সেখানে খালিজ টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, “আমরা স্তম্ভিত। ওঁর কোনওরকম হার্টের সমস্যা কখনও ধরা পড়েনি।”
দুবাইতে ময়নাতদন্ত হয়েছে শ্রীদেবীর দেহের। বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সামলে, সম্ভবত রবিবার রাতেই প্রাইভেট জেটে তাঁকে নিয়ে আসা হবে মুম্বইতে। শেষকৃত্য হবে সেখানেই।
হিরো নির্ভর হিন্দি সিনেমার সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছিলেন শ্রীদেবী। ‘মাওয়ালি’, ‘তোফা’, 'চাঁদনি', 'লমহে', 'মিস্টার ইন্ডিয়া', 'নাগিনা' হোক বা হালফিলের 'ইংলিশ ভিংলিশ', 'মম'— প্রায় একার হাতেই ইন্ডাস্ট্রিকে একের পর এক সুপারহিট ফিল্ম উপহার দিয়েছেন তিনি। তাই অনেকেই তাঁকে বলিউডের ‘প্রথম মহিলা সুপারস্টার’ বলে মনে করেন।
আরও পড়ুন, শ্রীদেবীর মৃত্যুর খবরের দেড়ঘণ্টা আগেই অমিতাভের টুুইট?
জুলাই, ২০১৭। কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলে শ্রীদেবী।— ফাইল চিত্র।
শুধুমাত্র হিন্দি সিনেমাতেই নয়— তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড়— প্রায় পাঁচ দশক ধরে দক্ষিণের সব ক’টি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন শ্রী। কাজ করেছেন তিনশো ছবিতে।
মাত্র ৪ বছর বয়সে তামিল ছবিতে প্রথম অভিনয়। ১৯৭৫ সালে তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘জুলি’। বয়স তখন ১২ বছর।
১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন বলিউডের প্রযোজক বনি কপূরকে। পরের বছর বড় মেয়ের জন্মের পর, সিনেমা থেকে সরে যান। তখন তাঁর বয়স ৩৪। ১৫ বছর পর, ২০১২ সালে আবার বলিউডে ফেরেন সুপারহিট 'ইংলিশ ভিংলিশ' ছবি দিয়ে। ২০১৩তে ভারত সরকারের তরফ থেকে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হয়।
শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রধানমন্ত্রী টুইটারে লিখেছেন, “প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীদেবীর অসময়ে মৃত্যুতে শোকাহত।... তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”
রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, “...লক্ষ লক্ষ অনুরাগীর হৃদয় ভেঙে চলে গেলেন তিনি। মুন্দ্রম পিরাই, লমহে এবং ইংলিশ ভিংলিশের মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় অন্য অভিনেতাদের কাছে অনুপ্রেরণা।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছেন, “সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন শ্রীদেবীর অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ। তাঁর পরিবার, সহকর্মী এবং অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই।”