(বাঁ দিকে) বছর চারেক আগে তব্বুর জন্মদিনে (ডান দিকে) প্রায় ২২ বছর আগে তব্বুর সঙ্গে বিদীপ্তা ও শাশ্বত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
২০০২ সালে বাংলা ছবিতে কাজ করেছিলেন তব্বু। ছবির নাম ‘আবার অরণ্যে’। তার পর বাঙালি বধূ অসীমা গঙ্গোপাধ্যায়ের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল তাঁকে ‘নেমসেক’ ছবিতে। এখনও সমাজমাধ্যমের পাতায় তব্বুর বাঙালির কনের এই লুক একই রকম জনপ্রিয়। কলকাতার সঙ্গে তাঁর নিবিড় টান। কলকাতায় শুটিং করার জন্য নাকি মুখিয়েই থাকেন অভিনেত্রী। কে আছে তাঁর কলকাতায়? জিজ্ঞেস করলেই অভিনেত্রী বলেন, “আমার বন্ধুরা আছে।”
টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের বয়স ২২ পেরোল। এতগুলি বছর কতটা কাছ থেকে চিনলেন তব্বুকে? দক্ষিণ ভারতীয় হয়েও বাংলার প্রতি টান। বাঙালির খাবার থেকে বাঙালি কবিতা—তব্বুর ভাল লাগার নানা অজানা তথ্য আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন বিদীপ্তা।
উইকিপিডিয়া বলছে তব্বু নাকি ৫৩-এ পা দিয়েছেন। এখনও কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। বলিউডের পয়লা নম্বরের দৌড়ে হয়তো তব্বু কোনও দিনই ছিলেন না। কিন্তু ছবি বাছাইয়ের ধরন তাঁকে বাকিদের চেয়ে স্বতন্ত্র করে তুলেছিল। এই প্রসঙ্গে পূর্ণ সহমত, জানালেন বিদীপ্তা। তবে অভিনেত্রী তব্বু যতটা ভাল, ঠিক ততটাই মায়াময় একটি মানুষ রয়েছে তব্বুর মধ্যে। গৌতম ঘোষের ছবি ‘আবার অরণ্যে’র শুটিং করতে গিয়ে তব্বুর সঙ্গে আলাপ। তখন মাত্র দু’টি ছবি করেছেন বিদীপ্তা। এ দিকে বলিউডের তারকা তব্বু। বিদীপ্তার কথায়, “আমি, শাশ্বত প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করেছিলাম। ‘আবার অরণ্যে’ আমার জীবনের দ্বিতীয় ছবি। কিন্তু তব্বুই সবটা সহজ করে দিল। একবারের জন্য অনুভব করতে দেয়নি যে কত বড় মাপের তারকা সে।”
কখনও তব্বু থাকেন বিদেশে, কখনও দক্ষিণ ভারতে, আবার কখনও মুম্বইয়ে। বান্ধবী বিদীপ্তা থাকেন কলকাতায়। তাঁদের যে রোজ দেখা হয় বা কথা হয়, তেমনটা নয়। বিদীপ্তা বলেন, “আসলে ও মানুষটা বন্ধুত্ব রাখতে জানে। আমি এটা জোর গলায় বলতে পারি ওঁর জন্যই আমাদের বন্ধুত্বটা টিকে আছে। তব্বু কাউকে বন্ধু মনে করলে, শেষ অবধি সেই বন্ধুত্বটা বজায় রাখে। আমাদের কাজের সূত্রে অনেকের সঙ্গে আলাপ। কাজ শেষ করে ফিরে এসে আর মনে রাখি না। কিন্তু তব্বু সেখানেই আলাদা। সময় পেলেই খোঁজ নেয়, মেয়েদের জন্য উপহার পাঠায়, কলকাতায় এলে আমার বাড়িতে আসবেই। জীবনে যখন প্রতিকূল পরিস্থিতি এসেছে, ও খোঁজ নিয়েছে। অদ্ভুত মায়াময় মানুষ।” বিদীপ্তা ও তব্বু বন্ধুত্বের মূল ভিত্তিই হল দু’জনের ভিতরে থাকা এক শিশুসুলভ খ্যাপামি। বিদীপ্তার দাবি, শুধু এই মিলটুকুর জন্যই বন্ধুত্বটা টিকে গিয়েছে এত দিন। বিদীপ্তা নিশ্চিত, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই বন্ধুত্ব অক্ষয় থাকবে।
এমনিতেই অভিনেত্রী তব্বুর অধ্যবসায় শেখার মতো। যে ভাবে নিজেকে ধরে রেখেছেন এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন, তা অনুপ্রেরণা জোগায় নতুন প্রজন্মকে। বিদীপ্তা জানিয়েছেন, আলুপোস্ত খেতে বড্ড ভালবাসেন তব্বু। কলকাতার সঙ্গে নিজের টান অনুভব করেন। বিদীপ্তার কথায়, “কলকাতায় শুটিং হবে শুনলেই লাফাতে থাকে। ভাত, ডাল, আলুপোস্ত, মাছ ওর প্রিয়। কাঁটা বেছে মাছ খেতে পারে নিপুণ ভাবে। ও সব সময় বলে, কলকাতায় ওর বন্ধুরা রয়েছে।”
বিদীপ্তা জানালেন, তব্বু শুধু যে ভাল অভিনেত্রী, তা-ই নয়, অসম্ভব স্মৃতিধর তিনি। গুলজ়ারের কাছে জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়েছেন। বিদীপ্তা বলেন, “বাঙালি খাবার যেমন ভালবাসে, তেমন গড়গড় করে জীবনানন্দও আওড়াতে পারে।” যদিও তাঁর ও তব্বুর বন্ধুত্ব উপহার আদানপ্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক বেশি নিবিড় সেই সম্পর্ক। তাই তব্বুর জন্মদিনে বিদীপ্তার কামনা— এমনই চিরসবুজ থাকুন তিনি। তাঁর অভিনয় যেন দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে।