‘বালা’ ছবিতে ভূমি
শ্যামবর্ণা মেয়ের বিয়েতে অনেক ঝক্কি। সেই পক্ষপাতমূলক মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাংলা ধারাবাহিক ‘কৃষ্ণকলি’। টিআরপি রেটিংয়ে সেটি বেশ এগিয়েও। কিন্তু মুখ্য চরিত্রে যে শিল্পী অভিনয় করছেন, তিনি আদৌ শ্যামবর্ণ নন। চরিত্রের খাতিরে তাঁকে শ্যামবর্ণ দেখানো হয়। এমন চরিত্র করার জন্য কি ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অভিনেত্রী নেই, যাঁকে আলাদা করে মেকআপ করাতে হবে না?
সমস্যা শুধু টলিউডের নয়। ফর্সা রঙের মোহে আচ্ছন্ন বলিউডও। অমর কৌশিকের ‘বালা’ ছবিতে শ্যামবর্ণা মহিলার চরিত্রে ভূমি পেডনেকর। মেকআপের সাহায্যে তাঁর গায়ের আসল রং চেপে দেওয়া হয়েছে। ওই ছবির ট্রেলার বেরোনোর পরেই নেটিজ়েনরা সরব হয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রির এই বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে।
আনন্দ কুমারের চরিত্রে হৃতিক রোশনের অভিনয় প্রশংসিত হলেও, তাঁর চকচকে চেহারার ভোলবদলেও ভরসা ছিল মেকআপ। হৃতিক ওই ছবিতে তাঁর ঈর্ষণীয় রূপের মায়া ত্যাগ করেছিলেন, সেটা সত্যি। তবে ফর্সা চেহারার নায়কই যে ওই চরিত্রের জন্য নির্মাতাদের পছন্দ, তা-ও বৈষম্যমূলক মানসিকতারই পরিচায়ক।
সমাজ ও তার ব্যক্তিদের উজ্জ্বল ত্বকের প্রতি যে মোহ-মায়া, তারই প্রতিফলন ঘটে ইন্ডাস্ট্রিতে। আক্ষেপের বিষয়, সিনেমা-সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে মনের অন্ধকার দূর করতে চায় পপুলার কালচার। কিন্তু ব্যবসায়িক কারণে ইন্ডাস্ট্রিও সেই চক্রের ঘেরাটোপেই আবদ্ধ থাকে। এই ঘটনা সাম্প্রতিক নয়। সিনেমা-সিরিয়ালের ইতিহাসে এর উদাহরণ ভূরি ভূরি।
বছর দশেক আগে ছোট পর্দায় হত ‘লাগি তুঝসে লগন’ নামে একটি ধারাবাহিক। সেই ধারাবাহিকের মুখ্য শিল্পী ছিলেন মাহি ভিজ। মাহি অভিনীত চরিত্রটির (নকুশা) গায়ের রং ছিল শ্যামবর্ণ। ধবধবে ফর্সা মাহিকে মেকআপের পরে চেনা কঠিন ছিল। তখন ওই ধারাবাহিক নিয়ে সমালোচনাও হয় বিস্তর। তার পরে অবশ্য সুন্দরী মাহিকে দেখাতে গিয়ে গল্পের ট্র্যাক বদলে যায়।
ছোট পর্দায় আর একটি ধারাবাহিকও হত ওই সময়ে। ‘সাত ফেরে’ সিরিয়ালের মুখ্য চরিত্র সালোনি ছিল উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের। এবং ওই চরিত্রের শিল্পী রাজশ্রী ঠাকুরের চেহারার আসল রংই দেখানো হয়েছিল সেখানে। এই ধরনের দৃষ্টান্ত ইন্ডাস্ট্রিতে অবশ্য কম। তবে এই ইতিবাচক পরিবর্তনটুকুও মনে রাখার মতো।
ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপনে ইন্ডাস্ট্রির পক্ষপাত চোখে পড়ার মতো। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, কঙ্গনা রানাউতের মতো অভিনেত্রীরা সেই বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সরব নন্দিতা দাশ। তাঁর ‘ডার্ক ইজ় বিউটিফুল’ ক্যাম্পেনের নতুন পরিবেশন, ‘ইন্ডিয়াজ় গট কালার’। গায়ের রঙের প্রতি ভারতীয় সমাজের পক্ষপাতমূলক মনোভাবের প্রতিবাদে ওই ভিডিয়োয় অভিনয় করেছেন রত্না পাঠক শাহ, রাধিকা আপ্টে, বিক্রান্ত মেসি, তিলোত্তমা সোম-সহ আরও অনেকে।
তবে এত লেখালিখি, সতর্কতামূলক প্রচারের পরেও কি ছবিটা বদলায়? ‘পাত্রী চাই’-এর কলাম অন্তত সে কথা বলে না। আর যে ইন্ডাস্ট্রি বদলের বাহক বলে বড়াই করে, সেখানেও পরিবর্তন চোখে পড়ে না।