‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে (বাঁ দিকে) মিঠুন চক্রবর্তী এবং পরিচালক পথিকৃৎ বসু। ছবি: সংগৃহীত।
টলিপাড়ায় বাণিজ্যিক ছবির হাত ধরে তাঁর উত্থান। সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলেছেন। গত বছর পথিকৃৎ বসু পরিচালিত ‘দাবাড়ু’ এবং ‘শাস্ত্রী’ ছবি দু’টি মুক্তি পেয়েছিল। বাংলা নববর্ষে তিনি আসছেন ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ ছবি নিয়ে। ছবির বিষয়ভাবনা নিয়ে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করলেও পথিকৃতের পায়ের নীচের জমি কি শক্ত হয়েছে?
বড় তারকাদের নিয়ে ছবি করেছেন। কিন্তু তার পরেও ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে পথিকৃৎকে নিয়ে নানা মন্তব্য। তাঁর শেষ তিনটি ছবির ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া হলেও, আশাবাদী পথিকৃৎ। বললেন, ‘‘‘কাছের মানুষ’ লাভজনক একটা প্রোজেক্ট। সেটা প্রযোজক আরও ভাল বলতে পারবেন।’’ পরিচালকের দাবি, রাজ্য থেকে ১৩ জন গ্র্যান্ডমাস্টার উঠে আসা সত্ত্বেও দাবা নিয়ে মানুষের কোনও আগ্রহ ছিল না দেখেই ‘দাবাড়ু’ ছবিটির ভাবনা। অন্য দিকে কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘শাস্ত্রী’।
গত বছর পুজোর সময় মুক্তি পায় ‘শাস্ত্রী’। বাকি ছবিগুলির তুলনায় ছবিটি জায়গা পায়নি বলে অভিযোগও করেন পথিকৃৎ। সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েই বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে অন্য ছবিগুলো গড়ে ৭টা শো পেলে আমারটা ২টো শো পেয়েছিল! অসম লড়াই।’’ এই লড়াইকে পথিকৃৎ ডন ব্র্যাডম্যান বনাম বিরাট কোহলির ব্যাটিং গড়ের সঙ্গে তুলনা করতে চাইলেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘২টো শো নিয়ে গড় হিসাব করে দেখা হলে নিশ্চয়ই সব ছবিগুলোর ব্যবসার অঙ্ক পাওয়া যাবে। তখন তুলনা করা যেতেই পারে।’’ পরিচালকের মতে, ওটিটি এবং চ্যানেল-সহ ছবি দুটির অন্য বাণিজ্যিক আঙ্গিকগুলো নির্দিষ্ট করা হলে মুনাফাও বাড়বে।
ঝুলিতে ন’টা ছবি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য পথিকৃতেরও কানে এসেছে। তিনি কি সত্যিই ‘ফ্লপ’ পরিচালক? পথিকৃৎ বললেন, ‘‘আমি এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না! নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে একটা এমন ছবি তৈরি করব যেটা ব্লকবাস্টার হবে।’’ পথিকৃতের মতে, যে সমস্ত পরিচালক পরিশ্রম করে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেতে সময় লাগে। পথিকৃৎ বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেগোনা পরিচালকেরা শুরু থেকেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন। আমাকেও সময় দিতে হবে। প্রত্যেকটা ছবির মাধ্যমে আমি লড়াই করে চলেছি।’’
‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ ছবির একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) অঞ্জন দত্ত এবং মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
এখন ছবি তৈরি করলেই পরিচালকের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। সেই ছবিকে প্রচারের মাধ্যমে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। পথিকৃতের কথায়, ‘‘সেখানেও আমার সুবিধা কম। কারণ বহু পরিচালক আবার অভিনেতাও। ফলে তাঁদের পরিচিতি রয়েছে। আমি তো অভিনয় করতে পারি না।’’ একই সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আগামী দিনে যদি কাজের গতি ঠিক থাকে, তা হলে ‘অসফল’ তকমা আমার কাছে অর্থহীন। একটা ব্লকবাস্টারের সঙ্গে এই সব তকমাও নিশ্চয়ই উঠে যাবে।’’
‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে বার্তা দেবে বলেই জানালেন পথিকৃৎ। সেখানে বাস্তবের একাধিক মামলা থেকে গল্পের রসদ সংগ্রহ করেছেন পরিচালক। বললেন, ‘‘এখন যে ভাবে বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়েছে, সেখানে এই ধরনের একটা ছবি তৈরি করতে চেয়েছিলাম। তবে এই ছবির মধ্যে একটা নিবিড় প্রেমের গল্প রয়েছে।’’ ছবিতে মিঠুন ছাড়াও অঞ্জন দত্ত, অঞ্জনা বসু, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, মধুমিতা সরকারের মতো অভিনেতারা রয়েছেন। কিন্তু আলাদা করে পথিকৃৎ উল্লেখ করতে চাইলেন মিঠুন এবং অঞ্জনের দ্বৈরথ প্রসঙ্গ। পরিচালকের কথায়, ‘‘অঞ্জনদা পর্দায় অ্যাকশন করছেন, আগে এ রকম হয়েছে কি না আমার অন্তত মনে পড়ছে না।’’
বাংলা নববর্ষে একাধিক বাংলা ছবির সঙ্গে মুক্তি পাবে ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’। পরিচালক রবি কিনাগির সহকারী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন পথিকৃৎ। ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ তাঁর ‘গুরুকে ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন পথিকৃৎ। বললেন, ‘‘দাদা এটাই বলেছেন, এখনও পর্যন্ত এটাই নাকি আমার সেরা ছবি। তাই মনে জোর পেয়েছি। বাকিটা এ বার দর্শক বলবেন।’’