অভিনয় জীবনে ২৫ বছর পার করে ফেলেছেন অপরাজিতা ঘোষ দাস। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
প্রায় দেড় বছর পর ধারাবাহিকে ফিরছেন অভিনেতা অপরাজিতা ঘোষ। সোমবার থেকে ‘চিরসখা’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে দর্শকের অন্দরমহলে উপস্থিত হবেন তিনি। নতুন সফরের শুরুর আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে সময় দিলেন অভিনেত্রী।
যে কোনও নতুন কাজ ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। সেখানে একজন স্বামীহারা মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্বামীর বন্ধু, যাকে ‘না বলা সম্পর্ক’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন ধারাবাহিকের নির্মাতারা। তবে অপরাজিতা জানালেন, তিনি এখনও পর্যন্ত ‘চিরসখা’ নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। দু’দশকের কেরিয়ারে মাত্র ৮টি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন অপরাজিতা। বেছে কাজ করতে পছন্দ করেন। তাই দীর্ঘ বিরতি এবং প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘ছোট পর্দায় একটা ভাল কাজের পরেই আরও একটা ভাল কাজের প্রস্তাব আসবে— এ রকম হয় না। আর ভাল কাজের জন্য আমি অপেক্ষা করতে রাজি। কম কাজ করি। তাই কোনও কাজ করলে সেটা যেন দর্শকের মনে একটা ছাপ ফেলতে পারে, সেটা খেয়াল রাখি।’’ কোনও চরিত্রে রাজি হওয়ার আগে সেই চরিত্রটিকে বুঝে নিয়ে তার পরেই সম্মতি দেন বলে জানালেন অপরাজিতা।
‘কুসুম দোলা’ এবং ‘এক্কা দোক্কা’র পরে এ বার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন অপরাজিতা। সাধারণত অল্পবয়সিদের গল্প ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় প্রেক্ষাপটে গৃহীত হয়। সেখানে আপাত বয়স্ক দুই চরিত্রকে ঘিরে এগোবে এই গল্প। অপরাজিতার কথায়, ‘‘সত্যিই এখন এ রকম খুব একটা দেখা যায় না। তবে এ রকম চরিত্র আমাদের আশেপাশে রয়েছেন। তাঁদের জীবনেও অনেক গল্প লুকিয়ে থাকে। আমার তো মনে হয়, একটা নতুন ধরনের দর্শককে আমরা পেতে পারি।’’
কমলিনীর (অপরাজিতার চরিত্রের নাম) স্বামী প্রয়াত। কিন্তু শ্বশুরবাড়িই তার ধ্যানজ্ঞান। অপরাজিতা বললেন, ‘‘গুণী মেয়ে। কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী নয়। শাশুড়ির সঙ্গেও খুব ভাল সম্পর্ক। অনেকগুলি স্তর রয়েছে চরিত্রে।’’ সেই পরিস্থিতিতেই কমলিনীর পাশে দাঁড়ায় স্বতন্ত্র (অভিনয়ে সুদীপ মুখোপাধ্যায়)। অতীতে ঋষি কৌশিকের সঙ্গে অপরাজিতার জুটি দর্শকের মন জয় করেছে। তবে সুদীপের সঙ্গে তাঁর জুটির কোনও সমান্তরাল তুলনা টানতে নারাজ অপরাজিতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে এবং ঋষিকে একসঙ্গে যাঁরা পর্দায় এনেছিলেন, তাঁরাও হয়তো ‘জুটি’র কথা ভাবেননি! আসলে প্রস্তাব এলে আমি আমার চরিত্রের খুঁটিনাটি জেনে নিই। আমার নায়ক কে হচ্ছেন, সে দিকে মাথা ঘামাই না। বাকিটা তো দর্শক ঠিক করে দেন।’’ কমলিনী এবং স্বতন্ত্রের মধ্যে আগামী দিনে কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠবে, তা নিয়ে অবশ্য আগাম মুখ খুলতে নারাজ অপরাজিতা।
‘চিরসখা’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) অপরাজিতা ঘোষ এবং সুদীপ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক বছর আগেও ধারাবাহিকের ৫০০ পর্ব ছিল সহজ। ইদানীং বহু ধারাবাহিকের আয়ু কমেছে। বিষয়টাকে অবশ্য শুধুই ‘টিআরপি’র নিরিখে বিচার করতে নারাজ অপরাজিতা। কারণ একটি ধারাবাহিক সমষ্টিগত প্রয়াস বলেই মনে করেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘টিআরপি না দিতে পারলেই সে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে! আগে হয়তো একটি ধারাবাহিককে অনেক সুযোগ দেওয়া হত। এখন সেটা যে হচ্ছে না, তা নিয়ে আমি কোনও অভিযোগ করতে পারব না। কারণ টিআরপি আমি বুঝি না। আমার কাজ অভিনয় করা।’’
অপরাজিতার স্বামী ঋত্বিক চক্রবর্তী ব্যস্ত অভিনেতা। কিন্তু ধারাবাহিকের প্রথম ঝলক দেখে নিয়েছেন। এই ধারাবাহিক নিয়ে অপরাজিতাকে কী বলেছেন তিনি? অভিনেত্রী বললেন, ‘‘প্রোমোটা ওর খুব পছন্দ হয়েছে। সেখানে ছোট পর্দার পুরনো দিনের স্বাদ ও খুঁজে পেয়েছে। ও খুবই আশাবাদী। এ বার দেখা যাক, কী ভাবে গল্পটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’’ ঋত্বিকের পাশাপাশি অপরাজিতাও এ বার দৈনন্দিন ধারাবাহিকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। কিন্তু ছেলে উপমন্যুর প্রতি তাঁদের নজর থাকবে বলেই জানালেন অপরাজিতা। বললেন, ‘‘আমি আর ঋত্বিক বিশ্বাস করি, আমরা ছেলেকে অনেকটা ভাল সময় দিতে পেরেছি। কারণ কাজ এবং বাড়ি— এটাই আমার আর ঋত্বিকের জগৎ। আর আমরা ব্যস্ত থাকলেও ওর কাছে কিন্তু সব সময়েই পরিবারের কেউ না কেউ থাকেন।’’
ছোট পর্দায় টেলিফিল্মের পাশাপাশি অপরাজিতা ‘পূর্ব পশ্চিম’ ধারাবাহিকের ক্যামিয়ো চরিত্র। তার পর ২০০৫ সালে ‘একদিন প্রতিদিন’ ছিল কেন্দ্রীয় চরিত্রে অপরাজিতার প্রথম ধারাবাহিক। কুড়ি বছরে ধারাবাহিকের জগতে বহু পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি, ‘‘কাজের পদ্ধতি থেকে গল্প বলার ধরন— সবেতেই বদল এসেছে। দর্শক বদলেছেন। আবার অনেক কিছু একও রয়েছে। পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে মোহর থেকে কমলিনী— আমার কোনও আক্ষেপ নেই।’’ লীনাদি (ধারাবাহিকের প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) এত সুন্দর ভাবে চরিত্রগুলোকে ভাবেন, যে রাজি না হওয়ার কোনও কারণ ছিল না।
কিন্তু একজন অভিনেত্রীর পেশাগত জীবনে কোনও আক্ষেপ কি থাকে না? অপরাজিতা বললেন, ‘‘আমি তো অভিনয় করতেই চাইনি। তার পর সব কিছু যেন সামনে সাজিয়ে দেওয়া হল। কুড়ি বছর আগে এবং এখনও ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছি। এ রকম সৌভাগ্য কত জনের হয়!’’
ধারাবাহিকের পাশাপাশি সিনেমায় সেই ভাবে অপরাজিতাকে দেখা যায় না বলে অনুরাগীদের একাংশের অনুযোগ। তবে অভিনেত্রী মনে করেন, তার জন্য প্রস্তাব আসতে হবে। ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’-এর পর অনেকটা সময় কেটেছে। চলতি বছরেই অপরাজিতা অভিনীত ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’ মুক্তি পাওয়ার কথা। অভিনেত্রী বললেন, ‘‘এ রকম হতে পারে না যে পর পর ভাল কাজই হাতে থাকবে। তার জন্যই তো অপেক্ষা। প্রদীপ্তের (পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য) সঙ্গে ‘নধরের ভেলা’ এখন মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।’’
আগামী কয়েক মাস প্রতি দিন ধারাবাহিকই অপরাজিতার ধ্যান-জ্ঞান। ব্যস্ততার পাশে নিজের জন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি এরই মধ্যে? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘ছুটি পেলে ঋত্বিকের সঙ্গে একটু ঘুরতে যেতে চাই। গন্তব্য হিমালয়ের সুন্দর কোনও স্থান।’’