R G Kar Protest

প্রতিবাদ মিছিলে কমছে পরিচিত মুখ, পুজোর আগে টলিপাড়া কি কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে?

আরজি কর-কাণ্ডের জেরে প্রতিবাদ মিছিল এবং জমায়েতে কি শিল্পীদের উপস্থিতি কমছে? পুজোর আগে কি টলিপাড়়ায় কর্মব্যস্ততা বাড়ছে? অনুসন্ধানে আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২৫
Share:

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আরজি কর-কাণ্ডে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন। প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন টলিপাড়ার শিল্পী ও তারকারা। আরজি করের ঘটনার পর এক মাস অতিক্রান্ত। এ দিকে দুর্গাপুজো এগিয়ে আসছে। মিছিলে চেনা মুখের সংখ্যা কমছে বলে চর্চা। টলিপাড়ায় কি কর্মব্যস্ততা বাড়ছে? প্রশ্ন উঠছে, প্রতিবাদ এবং কাজ কি সমান্তরালেই চলবে?

Advertisement

শহরে প্রতি দিনই কোনও না কোনও মিছিল ও জমায়েতের আহ্বান করা হচ্ছে। সমাজমাধ্যমে একাংশের পর্যবেক্ষণ, সময়ের সঙ্গে এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপস্থিতি কমছে শিল্পী ও তারকাদের। তাঁরা কি কাজে ফিরতে চাইছেন? আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শুরু থেকে জড়িয়ে রয়েছেন সোহিনী সরকার, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়রা। আবার বিপরীতে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋত্বিক চক্রবর্তী বা নুসরত জাহানের মতো অনেককেই আবার কোনও মিছিলে বা জমায়েতে দেখা যায়নি।

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের মঙ্গলবারের মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশ দেয়। টলিপাড়াও কি কাজে ফিরতে চাইছে? অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে টলিপাড়ায় কাজ বন্ধ হয়নি। অভিনেতা বললেন, ‘‘শিল্পীরা তো কাজের মধ্যে থেকেই সময় বার করে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন।’’ রবিবার শিল্পীদের মিছিলে অভিনেতাদের সংখ্যা আগের থেকে কম ছিল। এই প্রসঙ্গে জয়জিতের যুক্তি, ‘‘অনেকেই আসতে ইচ্ছুক হলেও শুটিংয়ের জন্য উপস্থিত থাকতে পারেননি। অনেক শিল্পীই আউটডোরে শহরের বাইরে রয়েছেন।’’ আগামী দিনে পুজোর ব্যস্ততা বাড়লে প্রতিবাদ এবং পেশাদারি দায়বদ্ধতা— দুটোই শিল্পীরা সমানতালে চালিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন জয়জিৎ।

Advertisement

শিল্পী বা সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকেই তাঁদের ব্যক্তিগত কাজ সামলে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করছেন বলে মনে করেন সুদীপ্তা। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘কাজের পাশাপাশি প্রতিবাদও চলবে। ডাক্তাররাও কিন্তু কর্মবিরতির পাশাপাশি অভয়া ক্লিনিক চালাচ্ছেন।’’ সুদীপ্তা দীর্ঘ দিন ছোট পর্দায় অভিনয় করেছেন। তাই এই মাধ্যমে কাজের চাপ সম্পর্কে তাঁর ধারণা রয়েছে। বললেন, ‘‘পুজোর সময় চার-পাঁচ দিন শুটিং বন্ধ থাকে। তাই প্রতি বছর পুজোর আগে এপিসোডের একটা চাপ থাকেই।’’

তবে ‘পরিচিত মুখ’ শব্দবন্ধ নিয়ে আপত্তি রয়েছে সুদীপ্তার। তাঁর অনুরোধ, পরিচিত মুখদের খুঁজে লাভ নেই। সুদীপ্তার যুক্তি, ‘‘এই বিদ্রোহ বা আন্দোলন তো কোনও পরিচিত মুখকে দেখে তৈরি হয়নি। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে নাগরিক সমাজ অংশ নিয়েছে।’’ গত এক মাসে বেশির ভাগ সময়টা তাঁর রাস্তায় কেটেছে একজন নাগরিক হিসেবেই, সে কথাও জোর গলায় মনে করিয়ে দিতে চাইলেন সুদীপ্তা। বললেন, ‘‘সম্প্রতি রিকশাচালক এবং সুইগি-জ়োম্যাটোর কর্মীরা তো প্রতিবাদ করেও অন্য দিনগুলোয় সমানতালে পরিষেবা দিচ্ছেন। যে যখন পারবেন, তখনই প্রতিবাদ করবেন। সমস্যা কোথায়!’’ সুদীপ্তা মনে করেন, প্রতিবাদে যে মানুষেরা রাস্তায় নামছেন, তাঁদের আবেগকে সম্মান করা উচিত। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পরিচিত মুখ থাকলেই সেটা বিদ্রোহ, অন্যথায় নয়, এ রকম কোনও নির্দিষ্ট কিছু আছে কি?’’

পরমব্রত যেমন প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর পরিচালনায় ‘পর্ণশবরীর শাপ’ ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নের শুটিং করছেন। রবিবার হাজরা মোড়ে টলিপাড়ার শিল্পীদের অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী সৌমিতৃষা কুন্ডুর মতে, কোনও চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা ছাড়াই শিল্পীরা প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। বললেন, ‘‘নিজের পরিবার এবং বৃহত্তর স্বার্থেই তো প্রত্যেকে প্রতিবাদ করছেন। কাজে ফিরতেই পারেন, কিন্তু পাশাপাশি এই আন্দোলনও চলবে।’’ সৌমিতৃষাকে কিন্তু কোনও মিছিলে বা জমায়েতে এখনও দেখা যায়নি। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘কাজের চাপেই আমি উপস্থিত থাকতে পারিনি। কিন্তু, তা সত্ত্বেও আমি সমাজমাধ্যমে যতটা সম্ভব মানুষকে প্রতিবাদে শামিল হতে অনুরোধ করেছি।’’ আগামী দিনে সময় এবং সুযোগ পেলে তিনিও মিছিলে হাঁটতে ইচ্ছুক বলেই জানালেন সৌমিতৃষা।

ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ অভিনেতা দিব্যজ্যোতি দত্ত ১৪ অগস্ট মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। ধারাবাহিকের ব্যস্ততা রয়েছে তাঁর। এপিসোড ব্যাঙ্কিংয়ের চাপ রয়েছে। কিন্তু, তার পাশাপাশি সময় পেলেই তিনি প্রতিবাদে যোগ দিচ্ছেন। আরজি কর আবহে গত ২ সেপ্টেম্বর নিজের জন্মদিনও পালন করেননি অভিনেতা। দিব্যজ্যোতি বললেন, ‘‘কাজ সামলেই তো প্রত্যেকে প্রতিবাদ করছেন। এক দিন কেউ উপস্থিত না থাকতে পারলে, তিনি হয়তো পরের মিছিলে যোগ দিচ্ছেন।’’ দিব্যজ্যোতি জানালেন, তিনি প্রতিবাদে উপস্থিত না থাকতে পারলেও সমাজমাধ্যমে অনুরাগীদের মিছিল এবং জমায়েতে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছেন।

তবে আগামী দিনে পুজোর জন্য শিল্পীদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে বলেই মনে করছেন প্রযোজক রানা সরকার। বললেন, ‘‘অধিকাংশ শিল্পীই পুজোর কাজ করতে চাইবেন। সেখান থেকেই উপার্জনটা মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে। তাই তখন হয়তো তাঁরা আর সেই ভাবে আন্দোলনে সময় দিতে পারবেন না।’’

তবে এর বিপরীতেও অন্য এক গোষ্ঠীর শিল্পীদের কথা মনে করিয়ে দিতে চাইলেন রানা। তিনি বললেন, ‘‘এটাও তো ঠিক, কিছু শিল্পী রয়েছেন, তাঁরা হয়তো সত্যিই কাজ বাদ রেখে প্রতিবাদেই অংশ নেবেন। কিন্তু, অধিকাংশ শিল্পীই পুজোর আগে কাজে ফিরতে চাইবেন।’’ রানার মতে, প্রতিবাদের কোনও নিয়ম বা সময় নেই। তাই সুবিধা মতোই মানুষ সেখানে যোগ দিতে পারেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘পেশা এবং সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে ব্যক্তি কখন কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবেন, সেটা একান্তই তাঁর উপর নির্ভরশীল।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টলিপাড়ার এক শিল্পীর প্রশ্ন, সমাজের প্রত্যেকেই যখন তাঁদের কাজ সামলে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন, তখন বার বার শিল্পীদের কেন ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে? তাঁর কথায়, ‘‘কোনও শিল্পী তো চুক্তি করে প্রতিবাদে আসছেন না। বরং চুক্তিবদ্ধ পেশার কাজ সামলে প্রতিবাদ করছেন।’’ ওই শিল্পীর মতে, প্রতিবাদ এবং পেশাগত দায়বদ্ধতার মধ্যে কেউ কী ভাবে সমতা বজায় রাখবেন, সেটা তিনিই ভাল বুঝবেন। বাইরে থেকে তাঁর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিকে বিচার করার অর্থ আন্দোলনকেই পরোক্ষে অসম্মান করা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement