গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ডের দ্বিতীয় শুনানি ছিল সোমবার। নানা প্রশ্ন, আলোচনার পরে স্থির হয়, পরবর্তী শুনানি ১৭ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। তা হলে কি আগামী এক সপ্তাহ ধরে ফের একই ভাবে পথে নামবেন টলি শিল্পীরা? আন্দোলন জারি থাকবে?
আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, অভিনেত্রী ঋদ্ধিমা ঘোষ, সঞ্চালিকা-অভিনেত্রী সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। প্রত্যেকেরই এক মত, আন্দোলন জারি রাখতে হবে। এই চাপ না থাকলে ন্যায়বিচার আসতে হয়তো আরও দেরি হবে। লোপামুদ্রার কথায়, “যে ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে গিয়েছে তার বিচার এত তাড়াতাড়ি বোধ হয় সম্ভব নয়। আমাদেরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে।” প্রতিবাদে শামিল হলে পেশায় মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্যা একটু হলেও মাথাচাড়া দিয়েছে। সমাধান কী? গায়িকা এই সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমরা যাঁরা পরিচিত, তাঁরা যতটা না ভুগছি, তার থেকেও বেশি ভুগছে নতুন প্রজন্ম। যারা সম্প্রতি এই দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে।”এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজে একটি গানের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। তার পরেই তাঁর ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে অনুষ্ঠান বাতিল হলে তাঁরা উপার্জন করবেন কী ভাবে?
লোপামুদ্রার পরামর্শ, কাজ আর প্রতিবাদ হাত ধরাধরি করে চলতে থাকুক। যেমন, জুনিয়র চিকিৎসকদের বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাজে যোগদানের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গায়িকার মতে, সময় ভাগ করে নিয়ে পালা করে অবস্থান বিক্ষোভে বসতে পারেন চিকিৎসকেরা। তাতে আন্দোলন জারি থাকবে। আবার চিকিৎসার অভাবে কেউ মারাও যাবেন না।
লোপামুদ্রার বক্তব্যের থেকে কমলেশ্বরের বক্তব্য পুরো উল্টো। তাঁর সাফ জবাব, “কিছু বিচার ফাস্ট ট্র্যাকে করা উচিত। এই ঘটনার বিচার তেমনটাই হবে, আশা করেছিলাম। সেটা না হওয়ায় খারাপ লাগছে।” সেই ভাবনা থেকেই তাঁর দাবি, এ বছরের উদ্যাপন না হয় বন্ধই রইল। আগে নির্যাতিতার বিচার পাওয়া জরুরি। কেউ উৎসবের মেজাজে নেই। আর আন্দোলন? চলছে চলবে? সঙ্গে সঙ্গে উজ্জীবিত তিনি। বললেন, “এ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই। সেটা দেখিয়ে দিয়েছে শহর। রবিবার মানুষের ঢল পথে। প্রত্যেকে অন্তর থেকে তেতে রয়েছেন। এই আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হবে।”
একমাত্র সন্তান ধীরকে নিয়ে এ বারের পুজো জমজমাট হওয়ার কথা ছিল গৌরব চক্রবর্তী-ঋদ্ধিমা ঘোষের। কিন্তু বদলে গিয়েছে পরিবেশ ও পরিস্থিতি। পাশাপাশি যে ন্যায় চেয়ে প্রত্যেকে পথে নেমেছেন তার ফলাফল এখনও অধরা। পথে নামা অব্যাহত থাকবে এবং উৎসবও চলবে? অভিনেত্রীর যুক্তি, “আমরা যে দেবীর পুজোর জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি তিনি কিন্তু নারী। এক দিকে নারীশক্তির আবাহন অন্য দিকে, সেই নারীকেই অপমান! ভাবতে গিয়ে মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।” তার পরেও তাঁর মত, পুজো হোক তবে উদ্যাপন নয়। কারণ, এই পুজো ঘিরে অনেক মানুষের উপার্জন হয়। সেটা বন্ধ হওয়া বোধ হয় বাঞ্ছনীয় নয়। তবে তিনিও বাকিদের মতো আন্দোলনেই বিশ্বাসী। এও বিশ্বাস করেন, একটু সময় লাগলেও নির্যাতিতা ন্যায় পাবেন।
সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রতি বছর ধুমধাম করে পুজো হয়। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করতেই তিনি বললেন, “পুজো বন্ধ করতে পারছি না। এটা আমাদের পারিবারিক রীতি। কিন্তু আমন্ত্রিতদের পাত পেড়ে খাওয়ানোর রীতি এ বার পালিত হবে না। তাই মণ্ডপ ছোট করে দিচ্ছি।” একই সঙ্গে নির্যাতিতার জন্য তাঁরও মন কাঁদছে। তিনিও রোজ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন, ন্যায় আসুক, অন্যায় মুছে যাক।