অভিনেত্রী পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত।
পরনে সাদা সালোয়ার-কামিজ। শটের ফাঁকেই ভিডিয়ো কলে ছেলের সঙ্গে কথা চলছে। টলিউডে অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশের চর্চিত অভিনেত্রী পরীমণির। ‘ফেলু বক্সী’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডা দিলেন অভিনেত্রী। কখনও তিনি নির্ভীক, কখনও আবার আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন। তবে একটা তকমা নিজেকে দিয়েছেন, সেটা হল ‘বেয়াদপ’। এই আড্ডায় পরীমণি তাঁকে নিয়ে ঘনীভূত হওয়া যাবতীয় বিতর্কের সোজাসাপটা উত্তর দিলেন।
প্রশ্ন: কলকাতায় ছবির শুটিং করছেন। টলিউডে অভিষেক হচ্ছে, আপনার কেমন লাগছে?
পরীমণি: আমি প্রথম বার কলকাতায় শুটিং করছি, এমন নয়। আগে এক বার এসেছিলাম শুটিং করতে। তখন ১২ দিন মতো ছিলাম। এ ছাড়াও আমার খুব হিট একটা গান আছে ‘ডানাকাটা পরি’। সেটার শুটিং কলকাতার স্টুডিয়োতে হয়েছিল। তবে সেই সবগুলোই ছিল ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনা। কিন্তু এ বার একেবারে টলিউডেই কাজ করছি। অন্য রকম অভিজ্ঞতা। একটু টেনশনও হচ্ছে, এখানে প্রথম ছবিতে ভাল করতে পারছি কি না!
প্রশ্ন: আমি দেখছিলাম, আপনার জন্য রসগোল্লা আসছে শুটিংয়ের ফাঁকে?
পরীমণি: হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন। আমি রসগোল্লা খেতে খুব ভালবাসি। আসলে সারা দিন খুব ডায়েট করি। ভাত খাই না, পাঁঠার মাংস খাই না। কিন্তু দিনের শেষে রসগোল্লা খেয়েই ফেলি ( হো হো করে হাসি)। আমাকে সবাই বলে, আমার ডায়েট করাটা নাকি মিছিমিছি। যেমন কলকাতায় যে দিন নামলাম, তার পরের দিন রাতে বিরিয়ানি খেয়ে ফেললাম। কী করে আর ডায়েট হবে!
প্রশ্ন: ডায়েট করতে পারেন না বুঝলাম। কিন্তু, আজকাল তো নায়িকারা মা হওয়ার পর যত দ্রুত পারেন, রোগা হয়ে যাচ্ছেন?
পরীমণি: হুম, আমি ডায়েট করতে পরি না। এখনও জিমেও যেতে পারছি না। কারণ, বাবুকে (পরীমণির ছেলে) স্তন্যপান করাতে হয়। যে মায়েরা সন্তানদের স্তন্যপান করান, তাঁরা জানেন, কিসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। খাব না খাব না করেও সব খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। আমি অনেককেই দেখেছি (নাম নিতে অনিচ্ছুক) তাঁরা আবার বলেন, ‘অমুক মা হয়ে তো শুকিয়ে রোগা হয়েছে’, ‘কিংবা অমুক মা হয়েও তো ফিট রয়েছে’। যাঁরা এগুলো বলেন, তাঁরা ঠিক বলেন না। মা হওয়া তো মুখের কথা নয়! আজকে মা হলাম, পরের দিন থেকেই জিমে গিয়ে রোগা হব, এমন ভাবনাচিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
প্রশ্ন: গত বছর আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে আপনাকে ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয়। তার পরই কি এ দেশে যোগাযোগটা মজবুত হয়েছে?
পরীমণি: হ্যাঁ, তা ঠিক। তবে তখনও মনস্থির করিনি যে, কাজ করব। এখনও যে অনেক কাজ করব বলে ভাবছি, তেমনটা নয়। তবে আমার কাছে অনেকগুলো ছবির প্রস্তাব রয়েছে। বেশ কিছু লোভনীয় চরিত্রের প্রস্তাব রয়েছে। তাই এক্ষুনি না করে দিতে পারছি না। আমি একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি তাঁদের কাছে। কিন্তু এই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছি। কারণ, লাবণ্য চরিত্রটা যেমন দেখতে, আমাকে এখন তেমনই দেখতে বলে মনে হচ্ছে।
‘ফেলু বক্সী’র শুটিং ফ্লোরে পরীমণি। ছবি: অর্ণব দত্ত।
প্রশ্ন: পরীমণিকে দর্শক বাণিজ্যিক ছবিতেই বেশি দেখেছেন, এখন কি তাই একটু অন্য ঘরানার ছবি করতে চাইছেন?
পরীমণি: হ্যাঁ, এখন দর্শক একটু অন্য রকম ছবি দেখতে পছন্দ করেন। নাচা-গানা মার্কা ছবির সংখ্যা কমছে। আজকাল ছবিতে গান থাকলেও তা লিপে হয় না। কিন্তু আমার মনে হয়, দর্শকরা ভরপুর বিনোদনের ছবি দেখতে চান। বিশাল সংখ্যক দর্শক আছেন, যাঁরা আমাকে ওই ধরনের ছবিতে দেখতে চান। তাঁদের বলব, আর একটু ধৈর্য ধরুন। নিজেকে একটু ফিট করে তার পর করব।
প্রশ্ন: কলকাতায় আজকাল ঘন ঘন যাতায়ত হচ্ছে, এখানে পাকাপাকি বাস করার পরিকল্পনা আছে কি?
পরীমণি: (অট্টহাসি) হ্যাঁ। প্রথম দিন এসেই বলেছিলাম এটা। কলকাতায় যে ভাবে চিত্রনাট্য পাচ্ছি, তাতে ইচ্ছে রয়েছে এখানে একটা বাড়ি কেনার। আমার তো ইচ্ছে, ছ’মাস দেশে কাজ করব, ছ’মাস কলকাতায় থাকব। প্রথম থেকেই মনে হত, এখানে থাকতে পারলে কেমন হয়!
প্রশ্ন: কলকাতায় থাকার ইচ্ছে, কিন্তু শহরটা চেনেন কি?
পরীমণি: সে ভাবে চিনি না। শুধু দুটো শপিং মল চিনি, ট্যাক্সিতে উঠলে বলতে পারব, ওইখানে নামিয়ে দাও। তবে মনে হয়, শুটিং করতে করতে চিনে যাব।
প্রশ্ন: ‘ফেলু বক্সী’তে আপনার সঙ্গে দু’জন অভিনেতা রয়েছেন সোহম ও মধুমিতা। তাঁদের ছবি দেখেছেন?
পরীমণি: আমাদের ওখানে মধুমিতার নাম যত না জানে, তার থেকে বেশি লোকে ওকে ‘পাখি’ নামে চেনে। এক সময় আমাদের দেশে ‘পাখির চুড়িদার’ বিপুল বিক্রি হয়েছে। একটা চরিত্র কতটা জনপ্রিয় হলে এটা হয়! কতটা ভাগ্য হলে এমন হয়! আমি সোহমের ‘প্রেম আমার’ ছবিটা দেখছি বেশ কয়েক বার। তবে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওঁর ‘অমানুষ’ ছবিটা অনবদ্য লেগেছিল। ও রকম একটা ধূসর চরিত্র করা মানুষটাকে দেখছি সামনে থেকে... এত নরম স্বভাবের!
প্রশ্ন: সহ-অভিনেতা হিসেবে কাকে বেশি ভাল লাগল পরীমণির?
পরীমণি: খুব বেশি সিন হয়নি এখনও। কারও সঙ্গে খুব বেশি আড্ডা দেওয়া হয়নি। কারণ শট শেষ হলেই বাবুর কাছে দৌড় দিই আমি। আসলে আমি ছেলেকে দেখার ফাঁকে ফাঁকে শুটিং করছি। তবে আমার ছেলে খুব বুঝদার। যখন আমি কাজে বেরোই, ও বুঝতে পারে। তখন আর খোঁজাখুঁজি করে না। তবে ঘুমের সময় আমাকে ওর প্রয়োজন। শনিবার ফ্লোরে প্রথম দেখা হল মধুমিতার সঙ্গে আমার। তখন আমরা একে অপরকে আলিঙ্গন করলাম। দু’জনেরই একবারও মনে হয়নি, প্রথম বার দেখা হল আমাদের।
প্রশ্ন: ‘সিঙ্গল মাদার’ আপনি, সফর খুব সোজা নয়। তবে কোন জিনিসটা থাকলে আর একটু ভাল হত?
পরীমণি: আসলে এই সফরটা আমি খুব আনন্দেই কাটাচ্ছি। আমার মনে হয়, একা হাতে ছেলেকে খুব ভাল ভাবেই বড় করতে পারব। যে সম্পর্কটা ছিল, সেটা থাকলে ওর বড় হওয়ার পথে আরও প্রতিবন্ধকতা বাড়ত। আসলে আমার ছেলে আমাকে বোঝে, আমার কথা শোনে। ভীষণ মিশুকে। এখনও কোনও কুঅভ্যাস হয়নি। বলা ভাল, আমি হতে দিইনি।
প্রশ্ন: পরীমণি বিতর্কিত, না কি সমালোচিত?
পরীমণি: আসলে লোকে আমাকে প্রচণ্ড ভুল বোঝে। আমাকে নিয়ে যা কিছু লেখা হয়, সে সব দেখে নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে যাই— এটা কোন পরীমণি! আমার সম্পর্কে আমি এত উদ্ভট তথ্য পাই, ভাবি, এটা কি আমাকে নিয়ে বলছে ওঁরা?
প্রশ্ন: পরীমণিকে নিয়ে কোনও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে?
পরীমণি: আমি কর্মজগতের কথাটা বলতে পারি। আমাকে নিয়ে যে ভুল ধারণা আছে, সেটা হল, আমি নাকি শুটিং ফাঁসাই (বলেই হাসি)। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লোকে বলে, পরীমণির অনেক প্রেমিক, অনেকগুলো বর। কিন্তু আমি জানতে চাই, তারা কোথায়? আমি নিজেও কথা বলতে গেলে বিব্রত বোধ করি। আগে একটা ধারণা ছিল, বিতর্কিত কিছু নিয়ে কথা বলা যাবে না। কিন্তু আমার মনে হয়, বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালে সে ব্যাপারে বেশি কথা বলা প্রয়োজন। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি, যাঁরা আমাকে নিয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ নেব।
প্রশ্ন: ছেলে বড় হচ্ছে, নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে সেই কারণেই বাড়তি সর্তকতা?
পরীমণি: হ্যাঁ, ছেলে তো বড় হচ্ছে। আমি এখন মানসিক ভাবে ভীষণ অস্থির। আসলে আমার বিবাহবিচ্ছেদের পর আমাকে নিয়ে নানা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সমাজ রক্ষণশীল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কাউকে তেমন পরোয়া না করার সাহস পান কোথা থেকে?
পরীমণি: সকলেই কারও না কারও কথা শুনে কাজ করে। কিন্তু আমার মনে হয়, ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে তো একটা বস্তু আছে। তাই বলে কারও ক্ষতি করে কিছু করতে আমি চাই না। আমাকে ঘোমটা দিয়ে চলতে হবে কিংবা মেয়ে বলে কোনও কাজ করতে পারব না, এ ধরনের চাপিয়ে দেওয়া জিনিস ছোটবেলা থেকে মেনে নিতে পারি না। আমি যখন এগুলো নিয়ে কথা বলি, লোকে ‘বেয়াদপ’ বলে দাগিয়ে দেয়। আমি আসলে এ রকম বেয়াদপ হতে চাই, এ রকমই বেয়াদপ থাকতে চাই। যদি নিজের মতো করে বাঁচতে চাইলে বেয়াদপ হতে হয়, আমার অসুবিধে নেই।
প্রশ্ন: আচ্ছা, পরীমণির ছেলের নাম কোনটা? রাজ্য, পুণ্য নাকি পদ্ম?
পরীমণি: ওর জন্মের আগে নাম ঠিক করা হয় শাহিম মুহম্মদ রাজ্য। অনেকেই রাজ্য নামটা ঠিক উচ্চারণ করতে পারে না। ওর বাবার দিকের আত্মীয়স্বজনও রাজ্য নামটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারতেন না। নাম বিকৃত করলে আমার ভাল লাগে না। বাড়িতে তাই ওকে শাহিম বলে ডাকা হয়। আমি ওকে নাম ধরে ডাকতে পারি না, ‘বাজান’ বলি। তবে পুণ্য নামটা আমার দাদুর দেওয়া। আর পদ্মটা এসেছে যখন ওর জন্ম হয়, তখন পুরো গোলাপি ছিল। মনে হত, পদ্মফুলের মতো ফুটে আছে। তাই ভালবেসে ‘পদ্মফুল’ বলে ডাকি। আর নামের কথা যদি বলেন, বাড়িতে পুণ্য বলে ডাকা হয়। রাজ্যটা বাদ দিয়ে দিয়েছি। লোকে যদি রাজ্য নাম বাদ দেওয়ার পিছনে কারণ খোঁজেন, খুঁজতে পারেন। এমনিতে ওর নাম শাহিম মুহম্মদ পুণ্য।
ছেলের নাম বিভ্রান্তি দূর করলেন পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি কি ছেলের ব্যাপারে একটু বেশি স্পর্শকাতর? তাই সম্প্রতি বুবলীর উপর রেগে গিয়েছিলেন?
পরীমণি: না, আমি রেগে যাইনি। আসলে প্রতিটা মানুষের আবেগ প্রকাশের ধরন আলাদা। বিতর্কের সূত্রপাত্র জন্মদিনের ভিডিয়ো নিয়ে। আমি আমার ছেলের এক বছরের জন্মদিনে যে ভিডিয়োটা বানিয়েছিলাম, সেটা আমার তরফে ওকে দেওয়া একটা উপহার। সেটা আামি ওর দু’বছরেরর জন্মদিনে কিংবা তিন বছরের জন্মদিনে করব না। আসলে ওর জন্মের পর থেকে প্রতিটা মাসে আমি ওর জন্মদিন উদ্যাপন করেছি। যখন রাজের সঙ্গে ছিলাম, তাঁকে নিয়ে ছবি দিয়েছি। যাঁরা যাঁরা ছিলেন সেই সময়, তাঁদের সবাইকে নিয়ে ছবি দিয়েছি। আর ভিডিয়োটা ছিল আমার আবেগের বহিঃপ্রকাশ। ওঁর ছেলের বয়স চার বছর, এতগুলো বছরে মনে হল না! যখন আমি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর পাই, তার তিন মিনিটের মধ্যে আমার দর্শক খবরটা জানতে পারেন। অনেকেরই ধারণা, স্ফীতোদরের ছবি দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমি দিয়েছি। জনগণ সেটাও দেখল। হঠাৎ করে আমি ‘বেবি বাম্প’ নিয়ে হাজির হইনি। আমার আবেগ আচমকা আসে না। আমার ধারণা, তিনি অন্য ভাবে কিছু করতে পারতেন। তাঁর নিশ্চয়ই সুন্দর একটা জার্নি আছে। কিংবা তিনি বলতে পারতেন, এই ধরনটা সোজা লেগেছে, সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করেছেন। সেটা না করে আমার গলা টিপে ধরার মতো অবস্থা, কেন আমি বললাম! মানুষজন আমাকে ট্যাগ করার পর আমি জানতে পেরেছি। তখন আমি মুখ খুলতেই তেড়ে এলেন আমার দিকে। শুনেছি, তিনি শিক্ষিত! শিক্ষিত মানুষ হয়ে একটা কাণ্ড করে বসেছ, আবার সেটার জন্য লড়াইও করছ! এটা শোভনীয় নয়।
বুবলী প্রসঙ্গে অকপট পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে অপু বিশ্বাসের সুসম্পর্কের আঁচ...
পরীমণি: না, আসলে অপুদি এর মাঝে নেই। গত তিন মাস ধরে আমাদের কথাই হয়নি। আমার সঙ্গে অপু বিশ্বাসের ভাল সম্পর্ক, যেটা আর দশ জন নায়িকার সঙ্গেও আমার আছে। আলাদা কোনও খাতির নেই।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি সমাজমাধ্যমে দেওয়াটা কি সমীচীন মনে করেন?
পরীমণি: আমাকে যে রকম দেখতে লাগে, আমি সে রকমই। বাইরে ও ভিতরে। আমার মধ্যে কোনও ‘ফিল্টার’ নেই। আমার রাগটাও দেখা যায়। মনখারাপ দেখা যায়, কিছু পুষে রাখি না। এটা অনেকের সঙ্গে চলার জন্য হয়তো ভাল নয়। তবে আমার জীবনটা সিনেমা নয়, অত ‘ফিল্টার’ দিতে পারব না। আমাকে পোষালে ভাল, না পোষালে আরও ভাল।
প্রশ্ন: পরীমণির মনখারাপ কখন হয়?
পরীমণি: ছেলে যখন অসুস্থ হয়, তখন মনে হয়, জোরে একটা যদি চিৎকার দিতে পারতাম, যাতে হাসপাতালটা ফেটে যেত। ছেলে দু’বার হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তখন ওইটুকু বাচ্চার হাতে স্যালাইন লাগানো। ওকে নিয়ে একা একা হাঁটছি। তখন মনে হয়েছিল, এই কষ্টটা আমার একার করার কথা ছিল না। তখন ওই মানুষটার উপর আরও রাগ হয়। মানছি, বাবারা সব পারে না, কিন্তু দায় কি একা মায়ের?
প্রশ্ন: কখনও মনে হয়, ছেলের জন্য শরিফুলকে আরও একটা সুযোগ দেবেন?
পরীমণি: নামই মুখে আনতে চাই না। এত ঘৃণা ওর প্রতি। কোনও দিন মরে গেলেও দেখতে যাব না। যে মানুষটা বেঁচে আছে সে অন্য মানুষ, যে আমার কাছে ছিল, সে আরও আগে মরে গিয়েছিল। সেই মৃতদেহটা দেখেছি। আসলে মানুষটা আমার কাছে ‘ডেড’।
প্রশ্ন: প্রেমে বিশ্বাসী? কিংবা আর কখনও বিয়ে করবেন?
পরীমণি: নাহ্। আর প্রেমে বিশ্বাস নেই। জীবন থেকে উড়ে গিয়েছে। আমার ছেলেই আমার জীবনের একমাত্র প্রেম। ওর হাসি, কান্না সব কিছুতেই ভালবাসা আছে। ওর আর আমার মাঝে কোনও সংশয় নেই। ও শুধু আমার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ এসেছে বহু বার। যাননি কেন?
পরীমণি: অনেক বার নিমন্ত্রণ পেয়েছি। কিন্তু আমি যেতে চাইনি। কারণ ওঁর সঙ্গে সাক্ষাৎটা জীবনের বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে রেখে দিতে চাই। আমার ওঁর জন্য ভালবাসা আছে ভীষণ রকম।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনা আছে?
পরীমণি: আপাতত অভিনয়ে মন দিচ্ছি। তবে আমি তেমন রাজনীতিবিদ্ হব না, যে ঘরে বসে কাজ করবে। আমি নিজে গিয়ে কাজ করতে চাই। যখনই মনে করব, অনেক মানুষের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৈরি, তখনই ওই ময়দানে নামব। আমি গায়েগতরে খেটে সমাজসেবা করতে চাই।
প্রশ্ন: ছেলেকে নিয়ে কী স্বপ্ন রয়েছে পরীমণির?
পরীমণি: যখন দেখি, ও লাথি মারছে, তখন মনে হয়, মেসির মতো খেলবে। কারণ, আমি মেসির বিরাট বড় ভক্ত। আবার খুব ভাল আজান দেয়। তখনও মনে হয়, গান গাইতে পারবে। তবে বড় হয়ে যা-ই হোক, ভাল মানুষ যাতে হয়, সেটাই চেষ্টা করব। আমি হয়তো সবটা পারছি না, কিন্তু ১০০ শতাংশ চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: জয়া আহসান বা মিথিলারা যে ‘ইতিবাচক’ প্রচার পেয়ে থাকেন, আপনার ক্ষেত্রে সেটা হয় না কেন?
পরীমণি: আমি চাই আমার দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিনিধিত্ব করতে। কেরিয়ার নিয়েই কখনই খুব সিরিয়াস ছিলাম না, উদাস ছিলাম ভীষণ। যতটুকু কাজ নিয়েছি, দায়িত্ব নিয়ে শেষ করেছি এবং সঠিক কল টাইমে পৌঁছেছি। হ্যাঁ, এক-দু’দিন ব্যতিক্রম অবশ্যই হয়েছে। এটা দেখে যদি কেউ আমাকে অপেশাদার ভাবেন, তা হলে ভুল করবেন। বাংলাদেশে এ রকম লোক অনেক রয়েছেন। তবে মহিলা পরিচালকদের সঙ্গে আমি আর কাজ করব না। করলেও বুঝেশুনে করব। বাংলাদেশে একজন মহিলা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আমার বদনাম করেন। নাম বলছি না।
প্রশ্ন: চয়নিকা চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?
পরীমণি: কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি। আগে তিনি হয়তো এসে জিজ্ঞেস করবেন, কেন বললাম। যাই হোক, খুব সিরিয়াস কিছু নয়, সবটাই মজা করে বললাম।
প্রশ্ন: টলিউডের যে সব নায়ক-নায়িকা বাংলাদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন তাঁদের কোনও পরামর্শ দিতে চান?
পরীমণি: বাংলাদেশে এ রকম অনেক প্রযোজনা সংস্থা রয়েছে, যারা কেবল কাস্টিং ঘোষণা করেই আলোচনায় থাকতে চায়। তার পর সিনেমাটাই হয় না। সেটা বুঝে এগোতে হবে। টাকাপয়সাটা আগে বুঝে নেওয়া উচিত। কারণ, টাকাপয়সা জিনিসটাই এমন। টলিউডে শুটিং শুরুর কল টাইম আর প্যাক আপ সময়ে হয়, বাংলাদেশে সেটা হয় না।
প্রশ্ন: টলিউডের কোন নায়ককে পরীমণির পছন্দ?
পরীমণি: জিৎদাকে আমার খুব ভাল লাগে। আর দেবদা আমার ক্রাশ ছিল। কিশোরী বয়সে ওঁর গানগুলো ছিল বিনোদনের মাধ্যম। সারা দিন ওঁর ছবির গান শুনতাম।
প্রশ্ন: একবাক্যে যদি নিজেকে ব্যখ্যা করতে হয়?
পরীমণি: আমি অনেক সহজ, সরল ও স্পষ্টবাদী মানুষ।