নতুন তথ্যমন্ত্রী প্রদর্শকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের দুরবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন।
কলকাতার নতুন বাংলা চলচ্চিত্র বাংলাদেশে দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেওয়ায় বাংলাদেশ জুড়ে সিনেমা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখছে হল-মালিকদের সংগঠন।
বাংলাদেশের সিনেমা হল-মালিকদের সংগঠন ‘চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি’-র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী জানিয়েছেন, শিল্পকে কোনও দেশের গণ্ডিতে বেঁধে রাখা অনুচিত বলে মনে করে শেখ হাসিনার সরকার। কলকাতায় নামী পরিচালকদের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশে দেখানো হলে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে যাঁরা মনে করেন, সরকার তাঁদের সঙ্গে একমত নন। কারণ কলকাতার চলচ্চিত্রকে আটকে রেখেও ঢাকার শিল্পের কোনও মঙ্গল হচ্ছে না। সূত্রের খবর, মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বৈঠকে বলেছেন, ‘‘ঢাকায় তৈরি সিনেমা যে মানুষকে সিনেমা হলে টানতে পারছে না, এটা বাস্তব। তার জন্য সিনেমা হলগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতে মুক্তির পরেই সে দেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলি যাতে বাংলাদেশে দেখানো যায়— সে বিষয়ে বিধি-নিষেধ আলগা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের শীর্ষমহল।’’ প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাস জানিয়েছেন, মন্ত্রীর এই সুনির্দিষ্ট আশ্বাসের ভিত্তিতে সিনেমা হলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখছেন তাঁরা।
নতুন তথ্যমন্ত্রী প্রদর্শকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের দুরবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উদ্বিগ্ন। নতুন উদার বিশ্বব্যবস্থায় পড়শি দেশের চলচ্চিত্র আমদানিতে বিধি-নিষেধ থাকুক তিনিও চান না। আপাতত ঠিক হয়েছে, বৈধ ভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি হওয়ার পরেই সরকারি কমিটি বৈঠকে বসে তার মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর পরে আলোচনা করে এই ব্যবস্থা কী ভাবে সরলীকরণ করা যায়, সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা সুদীপ্ত দাস জানিয়েছেন, সরকার অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব নিয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এর আগে, বাংলাদেশে তৈরি সিনেমা মানুষকে টানতে পারছে না— এই অভিযোগ তুলে নতুন বছরে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। তার পরেই তথ্য মন্ত্রকের কর্তারা সমিতির নেতৃত্বকে দফায় দফায় বৈঠকে ডেকে সিনেমা হলগুলির সমস্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। মালিকেরা জানান, উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আমদানি করার ওপর সরকারের নানা বিধি-নিষেধ রয়েছে। বৈধ ভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করা ও সেন্সরের অনুমোদন পাওয়ার পরেও বাংলাদেশে সেটি মুক্তি পাবে কি না, তা ঠিক করে সরকারের একটি কমিটি। এক বার বৈঠকে বসতে সেই কমিটি কয়েক মাস লাগিয়ে দেয়। ফলে আমদানি করা চলচ্চিত্র যখন সিনেমা হলে মুক্তি পায়, তার আগে টেলিভিশন ও অন্য মাধ্যমে মানুষ তা দেখে ফেলেন।
প্রদর্শক সমিতির নেতাদের অভিযোগ— সরকারের কিছু আমলা ও চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মনে করেন, মুম্বই এবং কলকাতার হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্র বাংলাদেশের সিনেমা হলে দেখানো হলে ‘ঢালিউড’ নামে পরিচিত ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সে জন্যই আমদানি আটকাতে নানা ধরনের লাল ফিতের ফাঁসের বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে। সমিতির কর্তাদের একাংশ বলছেন, আগের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এই লাল ফিতের ফাঁস কাটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমনকি দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে চলচ্চিত্র প্রযোজনার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালীদের অসহযোগিতায় তাতে অগ্রগতি বিশেষ হয়নি। যৌথ উদ্যোগে ছবি বানিয়ে কলাকুশলী ও শিল্পীদের পারিশ্রমিক দেওয়া ও লভ্যাংশ দেশে আনার বিষয়ে চরম বিপাকে পড়েছিলেন বলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ।
নতুন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে এ বার তা সমাধানের চেষ্টা করবেন তিনি।