অর্পিতার ‘অশালীন প্রস্তাব’

হলিউডের ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’ এ বার বাংলায়। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল: ডেমি মুর/ মনে আছে ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’?/ মনে আছে রবার্ট রেডফোর্ডের সেই অশালীন প্রস্তাব?/ ‘উড ইউ মাইন্ড লেন্ডিং মি ইয়োর ওয়াইফ?’ ‘আপত্তি আছে আপনার স্ত্রীকে এক রাতের জন্য ধার দিতে?’/ শুধু একটা রাত। শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে রবার্ট চেয়েছিলেন ডেমি মুরকে। পরিবর্তে ডেমির শরীরের উষ্ণতার মূল্য হিসেবে তাঁর স্বামী উডি হ্যারাসলোনকে দিতে চেয়েছিলেন এক মিলিয়ন ডলার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০০:০০
Share:

ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল: ডেমি মুর

Advertisement

মনে আছে ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’?

মনে আছে রবার্ট রেডফোর্ডের সেই অশালীন প্রস্তাব?

Advertisement

‘উড ইউ মাইন্ড লেন্ডিং মি ইয়োর ওয়াইফ?’ ‘আপত্তি আছে আপনার স্ত্রীকে এক রাতের জন্য ধার দিতে?’

শুধু একটা রাত। শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে রবার্ট চেয়েছিলেন ডেমি মুরকে। পরিবর্তে ডেমির শরীরের উষ্ণতার মূল্য হিসেবে তাঁর স্বামী উডি হ্যারাসলোনকে দিতে চেয়েছিলেন এক মিলিয়ন ডলার।

তার পর?

ডেমি-রবার্ট-উডিদের জীবন কোন পথে এগোয়, তা নিয়েই তৈরি হয়েছিল ১৯৯৩ সালের হলিউডি ছবি।

আর তার থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি হতে চলেছে একটা বাংলা ছবি। নাম ‘প্রস্তাব’। তবে চমক এখানেই শেষ নয়। ছবিটির পরিচালনায় থাকছেন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। অভিনয়ে ব্রাত্য বসু, ঋত্বিক চক্রবর্তী ও ত্রিধা চৌধুরী।

এই সবে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন অর্পিতা। এত দিন মঞ্চে কাজ করেছেন। কিন্তু প্রথম বার ফিল্ম করতে গিয়ে এ রকম একটা বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর বিষয় বেছে নিলেন কেন? অর্পিতার খুব প্রিয় ছবি ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’। এক সময় চেয়েছিলেন ওটা নিয়ে নাটক করতে। ব্রাত্যর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু মঞ্চে এই গল্পটা নিয়ে কাজ করার কিছু অসুবিধে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রাত্য সেটা মাথায় রেখে অর্পিতাকে বলেন বিষয়টা নিয়ে একটা বাংলা ছবি তৈরি করতে। “ঠিক হল নাটক নয়, বিষয়টা নিয়ে ছবি পরিচালনা করব। কাজ শুরু করব ফেব্রুয়ারি নাগাদ। এর আগে মঞ্চে পরিচালনা করব ব্রাত্যর লেখা ‘দু’টো দিন’। সেখানে অভিনয় করবেন দেবশঙ্কর হালদার, সুজন মুখোপাধ্যায়, পৌলমী বসু আর আমি,” জানালেন অর্পিতা। ব্রাত্য পরবর্তী যে নাটকটি করছেন, সার্ত্রে-র ‘ফ্লাইস’ অবলম্বনে, সেটার অনুবাদও করছেন অর্পিতাই।

মঞ্চে অনেক মৌলিক নাটক নিয়ে কাজ করেছেন অর্পিতা। কিন্তু প্রথম ছবিতেই হলিউড সিনেমা থেকে ধার করে কাজ করবেন কেন? দর্শক যদি বলে ‘এৎ তু ব্রুতে’? আপনিও টুকে ছবি করছেন অর্পিতা! আজকাল বলিউডে প্রচুর হলিউড ছবির অফিশিয়াল হিন্দি রিমেক করা হচ্ছে। হলিউড স্টুডিয়োগুলো নিজেরাই সে সব ছবি প্রযোজনা করছে। এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এ রকম একটা কাজে কেন হাত দেবেন তিনি? “আমি কিন্তু ফিল্মটা টুকছি না। ঠিক পথেই এগোব। প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন হলে আমি প্যারামাউন্ট পিকচার্সের সঙ্গে যোগাযোগ করব,” বলেন অর্পিতা।

তার আগে অবশ্য অন্য একটা রাস্তা ধরতে চান তিনি। হলিউডের ছবিটি ওই একই নামের একটা উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত। সেটা অর্পিতার পড়া নয়। “এর মধ্যেই ওটা আমি পড়ে ফেলব। তার পর সেই লেখক (জ্যাক এঞ্জেলহার্ট)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে নভেলের বাংলা স্বত্বটা নেব,” দাবি করছেন অর্পিতা।

রাইটস নিলেও ছবির কাঠামোর মধ্যে ভরপুর বাঙালিয়ানা নিয়ে আসবেন বলেই ঠিক করেছেন তিনি। তাঁর মতে, এই ধরনের ঘটনা এখনকার সমাজে আকছার হয়ে থাকে। “তা সে সিনেমা জগৎ হোক বা কর্পোরেট দুনিয়া,” দাবি করছেন তিনি। মানে তিনি কি বলছেন, যে এ রকম অনেকেই আছেন যাঁরা নিজের স্ত্রীর শরীরকে নিলামে চড়িয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট বা কেরিয়ারের উন্নতির জন্য সমঝোতা করতে রাজি হন? তার পর ছবির ট্রেলারে সেই বিতর্কিত যুক্তি দিয়ে বলেন এক রাত তো নিমেষের মধ্যে কেটে যাবে। কিন্তু টাকা দিয়ে তো গোটা জীবন চলে যেতে পারে... “আছে তো। এটা খুব চলতি একটা ব্যাপার। প্রায়শই এ রকম পড়েছি বা শুনেছি...,” জোর দিয়ে বলেন অর্পিতা। তিনি কি জানেন এ রকম একটা দাবি করে তিনি মৌমাছির চাকে ঢিল মারতে চলেছেন? “বলব না কেন? একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আমরা প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক উন্নত হয়েছি। কিন্ত এ ধরনের ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’ যে আসে না তা তো নয়। যাঁরা প্রস্তাব দেন, তাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। আর যাঁরা রাজি হন, তাঁরা টুঁঁ শব্দ করেন না,” জানান পরিচালক।

তাঁর মতে এটা একটা সামাজিক ব্যাধি, যা নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলে না। “আমি মনে করি যে এই ধরনের অশালীন প্রস্তাব থেকে সম্পর্কগুলো বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সব কিছু টাকা দিয়ে কেনা যায় না। সম্পর্ক তো নয়ই। এই ছবির মাধ্যমে আমি সেটাই বোঝাতে চাই,” বক্তব্য তাঁর।

হলিউড ছবিতে যৌনতা একটা বড় অংশ। বিষয়বস্তুর কেন্দ্র একটা যৌন সম্পর্ক ঘিরে। কিন্তু এখনকার রক্ষণশীল সমাজের রে রে করে ছুটে যাওয়ার অভ্যেসকে মাথায় রেখে সে সব দৃশ্যকে কী ভাবে রাখবেন তিনি ছবিতে? “সেক্স বাদ দিতে পারব না। তাতে যদি ছবির অ্যাডাল্ট রেটিং হয়, আমার আপত্তি নেই,” বলছেন তিনি।

আর ব্রাত্য? মন্ত্রীমশাই কি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করবেন? “ছবিটা করব। কিন্তু কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করব না!” সাফ জানাচ্ছেন ব্রাত্য। এই সিদ্ধান্ত কি মন্ত্রিত্বের কারণে? “মন্ত্রিত্বের কারণেও হতে পারে। আবার বৌয়ের কারণেও হতে পারে!” হেসে বলছেন তিনি। তার পর বললেন, “রাষ্ট্রের মতো আর্টিস্টদেরও একটা নিজস্ব সেন্সরশিপ থাকতেই পারে।” পরিচালক অবশ্য জানাচ্ছেন যে হলিউড ছবিতেও রবার্ট রেডফোর্ডের খুব বেশি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নেই। ‘প্রস্তাব’-এও ব্রাত্যর সে রকম দৃশ্য থাকবে না।

ঋত্বিক ‘ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল’ দেখেছেন। বলছেন “এখনও বাংলা ফিল্মের চিত্রনাট্য লেখা হয়নি। সেটা না পড়ে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয় কোন দৃশ্য কী ভাবে টেক করলে আমার সুবিধে বা অসুবিধে থাকবে।”

আর ত্রিধা? মূল ছবিতে তো ডেমির অনেক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে। বিছানায় কুঁকড়ে শুয়ে আছেন নগ্ন ডেমি। শরীরের উপর এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর কারেন্সি নোট।

এই সবে আমির খানের নগ্ন পোস্টার নিয়ে হুূলস্থূল কাণ্ডকারখানা হল। ‘টেক ওয়ান’ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। ত্রিধা কি রাজি হবেন এমন দৃশ্যে অভিনয় করতে? “ত্রিধাকে আমি বলেছি ডিসেন্সি রেখেই শ্যুটিং করব। ত্রিধার বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’ ছবিতে আমার ওর কাজ ভাল লেগেছে। অভিনয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্মতা আছে। চেহারার মধ্যে রয়েছে তরতাজা ভাব। আমার মনে হয় ঋত্বিকের সঙ্গে ওকে ভাল মানাবে,” জোর দিয়ে বলছেন অর্পিতা।

আর ত্রিধা? তিনি বলছেন, “নান্দনিক ভাবে শ্যুটিং করলে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে ফ্রন্টাল ন্যুডিটি নিয়ে আছে। সমাজের ট্যাবু আছে, সেটা ভাঙতে হবে। ঘনিষ্ঠ দৃশ্য তো নানা ভাবে চিত্রায়ণ করা যায়। মূল ছবিতেও তো রবার্ট আর ডেমির মধ্যে খোলামেলা ভাবে সব কিছু দেখানো হয়নি। খুব সাটল্ ভাবেই দেখানো হয়েছিল। আসলে সবটাই নির্ভর করে পরিচালকের উপর।”

কী ভাবে টলিউডের পর্দায় অর্পিতা তা করবেন, সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement