শুটিংয়ে অনির্বাণ-মিমি। ছবি: স্বপ্নিল সরকার
মধ্য কলকাতার ব্যস্ত রাস্তা রবীন্দ্র সরণির ঠিক উপরেই বিশালাকার লোহিয়া হাসপাতাল। শীতের সন্ধেয় তার অন্দরে এমনিই একটা ভুতুড়ে ভাব খেলা করে। যে ছবির শুটিং কভারেজ করতে যাওয়া, তার নাম যদি ‘ড্রাকুলা স্যর’ হয়, তা হলে রহস্যের পারদ আরও খানিকটা চড়ে যায়। আলো-আঁধারি পথ পেরিয়ে শুটিং জ়োনে পৌঁছতেই, পাশ দিয়ে একজন ভিজে চুপচুপে অবস্থায় তোয়ালে জড়িয়ে সাঁ করে চলে গেলেন মেকআপ ভ্যানের দিকে। চিনতে কয়েক মুহূর্ত লাগল। উনি অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ছবির প্রধান অভিনেতা।
দেবালয় ভট্টাচার্যর ‘ড্রাকুলা স্যর’-এর সে দিনই ছিল প্রথম শুটিং। সেটে উপস্থিত মিমি চক্রবর্তীও। কখনও মিমিকে ফোকাস করে শট নেওয়া চলছে, তো কখনও অনির্বাণকে। শটের মাঝে ফাঁক পেতেই অভিনেতার কাছে কৌতূহলের ঝুলি উপুড় করে দেওয়া গেল। শীতের বেলায় এমন কাণ্ড কেন? ‘‘ছবিতে যত জলে ভেজার ঘটনা রয়েছে, সেই শটগুলো আজকেই নেওয়া হচ্ছে,’’ সহাস্য জবাব অনির্বাণের। তবে তখনও আরও চমক বাকি ছিল।
ছবিতে তিনিই ড্রাকুলা স্যর। আদতে স্কুল শিক্ষকের এই নামকরণের কারণ, তার দুটি গজদাঁত। কিন্তু এই নামই এক সময়ে তার নিয়তি হয়ে যায়। ১৯৭০-এর পটভূমিতে তৈরি দেবালয়ের এই ড্রাকুলা মুভি। তবে যে ধরনের ড্রাকুলা ছবি এর আগে দর্শক দেখেছেন, তার চেয়ে ‘ড্রাকুলা স্যর’ অনেকটাই আলাদা, জানালেন অনির্বাণ। ‘‘র্যামসে ব্রাদার্সের ছবিগুলোর মধ্যে এই ফ্লেভারটা ছিল। তবে দেবালয়দার ছবিটাকে ঠিক ওই ঘরানায় ফেলা যাবে না। সাইকোলজিক্যাল পরত রয়েছে,’’ বক্তব্য অনির্বাণের।
লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে হাতে কোনও সিনেমা নেননি মিমি। দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে আবার ফ্লোরে তিনি। এত দিন পরে শুটিং করতে কেমন লাগছে? ‘‘মনে হচ্ছে, ঘরে ফিরলাম। আই অ্যাম সো হ্যাপি অ্যান্ড রিল্যাক্সড,’’ বললেন ছবির মঞ্জরী। সাংসদের খোলস ছেড়ে মিমি সেটে একেবারে অভিনেত্রীর মেজাজে। ফোটোশুটের সময়েও হাসতে চাইলেন না। ছবির থিমের সঙ্গে মানানসই মুড বজায় রাখতে চান। ছবিতে মিমির লুক আলাদা করে নজর কাড়ে। এই ধরনের গেটআপে দর্শক তাঁকে প্রথম দেখেছিলেন ‘গানের ওপারে’তে। খোলা চুল, সাদামাঠা শাড়িতে মিমির গলাতেও নস্ট্যালজিয়া, ‘‘এই লুকটা দেখেই আমার ঋতুদার (ঋতুপর্ণ ঘোষ) কথা মনে পড়ছিল।’’
মিমির সঙ্গে যখন আড্ডা চলছে, তখন ও দিকে শট দিচ্ছিলেন অনির্বাণ। সেটে উঁকি মারতে যে দৃশ্য চোখে পড়ল, তাতে শীতের পারদ যেন এমনিই চড়ে গেল। চৌবাচ্চার মধ্যে এক কোমর জলে ডুবে রয়েছেন অনির্বাণ। কমপক্ষে ৪৫ মিনিট তিনি ও ভাবেই ছিলেন। কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সে দিন ১২-১৩ ডিগ্রির মধ্যেই ঘোরাফেরা করছিল!