যখন-তখন তাঁর মাথা গরম হয়ে যায়। সোনাক্ষী সিংহ মুডি। ব্যস্তও। তাঁর সাক্ষাৎকারের সময় নিয়েও অপেক্ষা করতে হয় এক সপ্তাহ। তিনি নাকি দিনরাত ব্যস্ত ‘ইত্তেফাক’ ছবির শ্যুটিংয়ে। সঙ্গে যোগ হয়েছে টিভির কাজ। ‘নাচ বলিয়ে’ শোয়ের বিচারক তিনি। সাক্ষাৎকারের দু’টো শর্ত। অন্য অভিনেত্রীদের নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না আর কোনও ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়...
প্র: ব্যক্তিগত প্রশ্নে আপত্তিটা ঠিক কোথায়?
উ: কী মুশকিল! আমার নিজের তো একটা জীবন আছে। সেটাকে সকলের সামনে খুলে দেব কেন? কাজ নিয়ে প্রশ্নে তো আমার কোনও আপত্তি নেই।
প্র: শোনা যায়, আপনি নাকি এক সাংবাদিকের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন...
উ: ভুল কথা। রেগে গিয়েছিলাম। আরে, প্রত্যেকেরই তো একটা পার্সোনাল স্পেস আছে, সেটায় হস্তক্ষেপ করা কেন ভাই! কাজ নিয়ে কি সাক্ষাৎকার হতে পারে না?
প্র: অবশ্যই পারে। তা হলে বলুন, আপনি ট্র্যাডিশনাল সুন্দরী। সেটাই কি নায়িকাদের দৌড়ে আপনাকে পিছিয়ে দিচ্ছে?
উ: প্রথমত, আমি ইঁদুর-দৌড়ে নেই। জানি, বলিউডে নায়িকাদের চেহারা নিয়ে অনেক রকম কথা চলে। সেটা সত্যিও। সকলে যেন রোগা হওয়ার দিকে ছুটছে। প্রথম যখন বলিউডে আসি, বেশ ভয়েই ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি একেবারে মিসফিট। এখন মনে হয়, সময় বদলেছে। না হলে তো ‘আকিরা’ বা ‘নুর’-এর মতো ছবিগুলো পেতামই না। আমার শরীরের কার্ভগুলোই তো আমার ইউএসপি। ওগুলো হারাতে চাই না।
প্র: কিন্তু ওজন তো কমিয়েছেন?
উ: হ্যাঁ, কমিয়েছি। সেটা ফিট থাকার জন্য। আমার চেহারা বা ওজন নিয়ে কথা হচ্ছে বলে নয়। লোকের জাজমেন্টাল নজর সহ্য করতে পারি না।
প্র: কিন্তু নিজে তো এখন বিচারক। ডান্স রিয়ালিটি শোয়ে প্রতিযোগীদের মাপছেন...
উ: নাচ আমার ভাল লাগে। ‘নাচ বলিয়ে’তে এসেছি শুধু মাত্র সেই ভাল লাগা থেকে।
আরও পড়ুন: ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দিয়েই গানের বিচার হয় না
প্র: তা হলে, অন্য কেউ আপনার বিচার করলে অসুবিধা কোথায়? হাজার হোক, আপনি তো পাবলিক ফিগার...
উ: হুমম। অসুবিধা নেই তো। বলছে বলুক, লোগো কা কাম হ্যায় কহেনা। তবে, মাত্রা ছাড়ালে আমার আপত্তি আছে। বোঝা উচিত, একটা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যা খুশি উগড়ে দিলাম, এটা ঠিক নয়। সব জিনিসের একটা মাত্রা থাকা উচিত। সেটা সবার বোঝা দরকার।
প্র: অনলাইনের পৃথিবী তো মুক্ত। ওখানে ট্রোলিং আটকাবেন কী করে?
উ: একদম তাই। এখন আর আটকাতে চাইও না। আগে এক কান দিয়ে ঢোকাতাম, অন্য কান দিয়ে বের করে দিতাম। এখন কানটাই বন্ধ করে রাখি। আর শুধু খারাপ দিকগুলোই বা দেখব কেন? অনেক ফ্যানও তো আছে সেখানে।
প্র: আচ্ছা, আগে আপনাকে খুব শাড়িতে দেখা যেত। এখন তো আর শাড়িই পরেন না। সবই ওয়েস্টার্ন পোশাক। কেন?
উ: সত্যি বলতে কী, যখন আরও একটু মোটা ছিলাম, তখন সব রকমের পোশাক পরার আত্মবিশ্বাস পেতাম না। নিজের চেহারা নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলাম। প্রথম ছবির চিত্রনাট্যও তেমনই ডিমান্ড করছিল। অনেক ওয়েবসাইটে দেখি, আমাকে ‘সবথেকে খারাপ পোশাক পরা হিরোইন’দের তালিকার প্রথমে রাখা হয় (হাসি)! তবে এখন আর ফ্যাশন পুলিশদের পাত্তা দিই না। ভাবলাম, আরে এটা তো আমার শরীর। আমি যা খুশি তা-ই পরব। কার কী বলার আছে! সমালোচকদের একবার মাথায় চড়তে দিলেই সর্বনাশ।
প্র: আপনার বয়স ২৯। এখনও বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। বলিউডে সবাই তো নিজেদের আলাদা বাড়ি কিনেছেন...
উ: একটা কথা আছে না, ‘আ ফ্যামিলি দ্যাট লিভস টুগেদার, স্টেস টুগেদার’। সেটাই বিশ্বাস করি আমি। হ্যাঁ, জানি অনেকেই নিজের মতো করে থাকছে, কিন্তু আমি ও ভাবে ভাবতে পারি না। আমি চাই ঘুম ভেঙে বাবা-মায়ের মুখ দেখতে। আর নন পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকার মজাটাই আলাদা (হাসি)।
প্র: বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে থাকবেন না তা হলে?
উ: দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে হাত-ধরাধরি করে ছবি। আর দু’দিন পরেই ব্রেকআপ। ওটা আমি পারব না।
প্র: বাবা-মায়ের থেকে টিপস নেন?
উ: অবশ্যই। আমার কোনও কাজই ওদের ভাল লাগে না (হাসি)। বিশেষ করে মায়ের। কোনও কিছুতেই তৃপ্তি পায় না। সেটা এক দিক থেকে ভাল। আরও ভাল কাজ করার ইচ্ছে তৈরি হয়।
প্র: কিন্তু ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড তো হল না?
উ: সেটা আমি কী করে বলব বলুন!
প্র: তা হলে বলুন, এখনও নিজের প্রোডাকশন হাউজ খুললেন না কেন? অনেক অভিনেত্রীই তো এ ব্যাপারে আপনার থেকে এগিয়ে গেলেন...
উ: আমাকে দেখে কি মনে হয় যে, আমি স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো মেয়ে? আমি মনে করি, সব কাজের একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সময় এলে ঠিক হয়ে যাবে। এখনই প্রোডাকশন হাউজ নিয়ে ভাবছি না। খামোকা চাপ বাড়াব কেন! বেশ তো অভিনয় আর নাচগান নিয়ে মস্তিতে আছি।
প্র: ওহ্, গানটা আপনি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন তা হলে?
উ: গান তো আমার প্যাশন। আমার দারুণ লাগে রেকর্ডিং স্টুডিওর ভিতরটা। হেডফোন পরে মাইকের সামনে দাঁড়ালেই আমার একটা অদ্ভুত মোটিভেশন আসে। কখনও গান শিখিনি ঠিকই, কিন্তু গাইতে বরাবর ভাল লাগত। আর স্ট্রেস বাস্টারের কাজ তো করেই।
প্র: আর প্রেম? ওটা কি স্ট্রেস বাস্টার...
উ: এটা কিন্তু ব্যক্তিগত প্রশ্ন হয়ে গেল।