দু’বছরের আদিরাকে সামলে বড় পরদায় ফিরছেন রানি মুখোপাধ্যায়। ‘হিচকী’র প্রচারে ভীষণ ব্যস্ত নায়িকা। ২০১৪ সালে তাঁর শেষ ছবি ‘মদার্নি’ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এ বারও রানির ছবির বিষয় সংবেদনশীল, বাস্তবের কাছাকাছি। ঘটনাচক্রে রানির জন্মদিনের কাছাকাছি সময়েই মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। তাই নিয়ে কি অভিনেত্রী একটু বেশি উত্তেজিত?
প্র: মা হওয়ার পর ফিটনেস রেজিমে ফেরত আসা কতটা কঠিন ছিল?
উ: খুব। উপোস করে রোগা হওয়া কোনও কাজের কথা নয়। নিয়মমাফিক ডায়েট ফলো করে, পুষ্টিকর খাবার খেয়ে কেউ যদি রোগা হয়, সেটাই কাজের।
প্র: ছবির মুক্তি আর আপনার জন্মদিন তো প্রায় একই সময়ে। ভক্তদের জন্য এর চেয়ে ভাল উপহার কী-ই বা হতে পারে...
উ: আমার কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত কোনও ছবি জন্মদিনের এত কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পায়নি। তবে এটা প্ল্যান করে হয়নি। আমার কাছেও বিষয়টি স্পেশ্যাল। জন্মদিনে আমি সচরাচর বিদেশে থাকি। এ বার দেশে আছি কারণ ছবির প্রচার করছি। এই প্রথম বার জন্মদিনে বাবা কাছে নেই। বাবা আমাকে উইশ করবে না। বাবা নেই... (দীর্ঘশ্বাস) তাই সব কিছুই অন্য রকম হবে। বাবাই আমার সবচেয়ে বড় উপহার। আমার বড় দুর্বলতাও। ছবির প্রচারের ব্যস্ততার ফলে মনকে কিছুটা ভোলাতে পারব। বাবা যেখানেই আছেন, সেখান থেকে আশীর্বাদ করবেন।
প্র: আদিরা আসার পর এই বিরতি নেওয়া কি প্ল্যান করেই?
উ: প্ল্যান তো আমরা অনেক করি। কিন্তু সব কিছু কি সেই অনুযায়ী হয়? ভগবান তো আগে থেকেই অনেক কিছু ঠিক করে রাখে (হাসি)। আদিরা আসার পর আমার ছবিতে ফেরত আসার কোনও ইমিডিয়েট প্ল্যান ছিল না। ‘হিচকী’র স্ক্রিপ্ট না এলে হয়তো আমি আরও লম্বা ব্রেক নিতাম। প্রথম সন্তান হওয়ার পর সব অভিজ্ঞতাই নতুন। কেউ বাচ্চা হওয়ার ৩ মাস পরে কাজ শুরু করেন। কেউ আর একটু সময় নেন। আমার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল, আদিরার প্রি-ম্যাচিয়োরড ডেলিভারি হয়। তাই অনেক বেশি করে ওর খেয়াল রাখতে হতো। খুব ইনভল্ভড ছিলাম। আদিত্য (চোপড়া) সেটা খেয়াল করেছিল। ও আমাকে বারবার করে বলত, ভক্তরা আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। অভিনয়ে ফেরার জন্য আমাকে বোঝাত। বলত, অভিনেত্রী হিসেবেও কিন্তু আমার একটা দায়িত্ব আছে। ব্রেকের পর ফেরত আসার সিদ্ধান্তের পিছনে তাই আদিত্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। আদিরার যখন ১৪ মাস বয়স, তখন আমি ‘হিচকী’র শুটিং শুরু করি।
প্র: মা হওয়ার পর কী কী পরিবর্তন এসেছে?
উ: যাঁরা সদ্য মা হয়েছেন, তাঁরাই কেবল জানেন, আমাদের জীবন কতটা পাল্টে যায়! আমার মতে, বাচ্চা আসার পর সবচেয়ে বড় যে উপলব্ধি হল, আমি কে? নিজের আসল পরিচয়টা জানতে পারা যায়। আমার দিন শুরু হয় আদিরাকে দিয়ে আর রাত যেন শেষ হয় না (হেসে)। কখনও কখনও সারা রাতই জেগে থাকতে হয়।
প্র: নয়না মাথুরের চরিত্রের জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
উ: ট্যুরেট সিন্ড্রোমের অনেক ইউটিউব ভিডিয়ো দেখেছি। ব্র্যাডের (কোহেন) জীবনের উপর নয়না মাথুরের চরিত্রটা লেখা। আর আমি ব্র্যাডের সঙ্গে অনেক ফেসটাইম করেছি। তাই ওর সঙ্গে কথোপকথন আমার প্রস্তুতির একটা বিশাল অংশ ছিল।
প্র: নয়না মাথুরের মতো আপনাকে জীবনে কোন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
উ: একদম প্রথমে আমার কাছে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল, স্পষ্ট করে কথা না বলতে পারা। আমার মা ও দাদা তোতলাতেন। আর ওঁদের দেখে দেখে আমারও কথা বলায় সমস্যা তৈরি হয়। একজন অভিনেতার কাছে এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর কী হতে পারে! ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর আমার কণ্ঠস্বর নিয়ে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। কারণ সকলে মনে করতেন, আমার ভয়েস হিন্দি ছবির টিপিক্যাল নায়িকাদের মতো নয়। প্রথম ছবি ‘রাজা কী আয়েগি বরাত’-এ নিজেই ডাব করেছিলাম। কিন্তু ‘গুলাম’ ছবিতে বিক্রম ভট্ট, মুকেশ ভট্ট, আমির সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, আমার ভয়েস অন্য কাউকে দিয়ে ডাব করানো হবে। সেই সময়ে আমি কর্ণের (জোহর) সঙ্গে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর শুটিং করছিলাম। কর্ণ আমাকে খুব উৎসাহ দেয়। এবং ওর কথা শুনেই ‘কুছ কুছ...’এও নিজেই ডাব করি। কর্ণ বলেছিল, একজন অভিনেতার কণ্ঠস্বরই তার পরিচয় তৈরি করে। ছবি রিলিজের পর আমির ফোন করে আমাকে ‘সরি’ বলেছিল। অন্যদের মতো ওরও যে মনে হয়েছিল আমার ভয়েস নায়িকার উপযোগী নয়... এটা ভেবে ওর আফসোস হয়েছিল। আর আমার হাইট নিয়েও তো অনেকে অনেক কিছু বলেছিল প্রথম দিকে। সৌভাগ্যবশত আমি তখন শাহরুখ, সলমন, আমিরের সঙ্গে কাজ করছিলাম, তাই ওঁদের সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে গিয়েছিলাম। হাইট নিয়ে সমস্যা আর হয়নি (হেসে)।
আরও পড়ুন: নড়বড়ে গল্পে হোঁচট খেল ছবি
প্র: কেরিয়ারে অনেক স্ট্রং চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আপনার কাছে উওম্যান অব সাবস্ট্যান্স কে?
উ: আমার মা ছাড়া আর কে? মা ভীষণ স্ট্রং। মায়ের ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমার মতে, বাঙালি মহিলারা সহজাত ভাবেই ভীষণ স্ট্রং। স্ট্রং বলতে এখানে আমি শারীরিক সামর্থ্যের কথা বলছি না। মনের জোরের কথা বলছি। যেটা সব মায়ের থাকা খুব জরুরি।