কেরিয়ারের সূত্রপাত ধূমকেতুর মতো হলেও কিছুদূর এগিয়েই হারিয়ে যান কিছু তারকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। বলিউডে এ রকম স্বল্পস্থায়ী তারকাদের মধ্যে একজন তারিক আলি খান।
তারিকের জন্ম তৎকালীন বম্বে শহরে। তাঁর বাবা আজহার আলি খান ছিলেন পরিচালক-প্রযোজক নাসির হুসেনের বোনের স্বামী। সে দিক দিয়ে আমির খান, ফয়জল খানের আত্মীয় তাঁরা।
১৯৭৩ সালে হিন্দি ছবিতে আত্মপ্রকাশ তারিকের। নাসির হুসেন পরিচালিত ‘ইয়াদোঁ কি বরাত’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন ছোটভাই ‘রতন’-এর ভূমিকায়। সুপারহিট এই ছবিতে তারিকের বিপরীতে নায়িকা ছিলেন নীতু সিংহ।
তারিক-নীতুর উপর চিত্রায়িত আশা ভোঁসলে, কিশোর কুমারের দ্বৈত কণ্ঠে ‘লে কর হম দিওয়ানা দিল’ বলিউডের আইকনিক গানের মধ্যে অন্যতম। সবদিক দিয়েই প্রথম ছবিতে আলোকবৃত্তে এসেছিলেন তারিক। কিন্তু সেই সুবিধে পরে কাজে লাগাতে পারেননি আমির খানের এই পিসতুতো ভাই।
দু’বছর পরেই মুক্তি পায় নাসির হুসেনের ‘হম কিসি সে কম নহি’। এই ছবিতে তারিকের অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল সঞ্জয় কুমার।
ছবিতে ‘চকোলেট বয়’ নায়কের ভূমিকায় দিব্যি মানিয়ে গিয়েছিলেন তারিক। মাথায় নীল ব্যান্ড, পরনে লাল ওয়েস্ট কোট, হাতে গিটার নিয়ে তারিকের উপর চিত্রায়িত হয়েছিল ‘ক্যয়া হুয়া তেরা ওয়াদা’।
গানের পাশাপাশি এই ছবিটিও বক্স অফিসে ঝড় তোলে। কিন্তু এক পরেও প্রত্যাশিত সাফল্য অধরাই থেকে যায় তারিকের কাছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিস্মৃত হয়ে যান।
রোমান্টিক বা অ্যাকশন নির্ভর, কোনও ধরনের নায়কের চরিত্রেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তারিক। প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি একক নায়ক হিসেবে। রয়ে গিয়েছিলেন বহু তারকাখচিত ছবির একটি অংশ হয়েই।
দু’দশকের কেরিয়ারে তারিক অভিনীত ছবির সংখ্যা মাত্র ১৬। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘জখমি’, ‘নরম গরম’, ‘পসন্দ আপনি আপনি’, ‘বাত বন যায়ে’ এবং ‘মঞ্জিল মঞ্জিল’।
কিন্তু এই ছবিগুলি বক্স অফিসে সে রকম সাফল্য পায়নি। আশির দশকে পরপর ছবি ফ্লপ হওয়ায় তারিকের কাছে সুযোগ কমতে থাকে ক্রমশ। ১৯৮৭ সালে মুক্তি পায় তারিকের ‘জেবর’ ছবিটি। এরপর কাজ আসাই কার্যত বন্ধ হয়ে যায় সত্তরের দশকের হার্টথ্রবের কাছে।
তারিকের শেষ ছবি ‘মেরা দামাদ’ মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। এরপর তিনি অভিনয় ছেড়ে দেন। কারণ আট বছর পরে তাঁর এই কামব্যাকও ছিল ব্যর্থ। ফলে হতাশ তারিক ইন্ডাস্ট্রিকে বিদায় জানান।
পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, পেশা হিসাবে অভিনয়ে থাকতে তাঁর আর্থিক দিক দিয়ে অনিশ্চিত আর অসুরক্ষিত লাগত। বরং, এমন কিছু চাইছিলেন যাতে তাঁর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে। ফলে সম্পূর্ণ অন্যদিকে বয়ে যায় তাঁর জীবন।
পরবর্তী কালে তিনি টিকেটিং এবং কার্গো ফরওয়ার্ডস নিয়ে ডিপ্লোমা করেন। নামী শিপমেন্ট সংস্থার সুপারভাইজিং এগজিকিউটিভ হন। সেই পরিচয় নিয়েই তিনি নতুন পথে জীবন শুরু করেন। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্নই করে দেন।
এখন বলিউডের কোনও ইভেন্টেও তারিককে দেখা যায় না। ২০০৯ সালে একটি ফিল্ম পত্রিকায় তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁর কাছে এখনও অভিনয়ের অফার আসে। কিন্তু তিনি আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চান না। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)