(বাঁ দিকে) রাহুল মুখোপাধ্যায়। স্বরূপ বিশ্বাস (ডান দিকে)। অলঙ্করণ: সনৎ সিংহ।
রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে কি না, তা নিয়ে এখনও অব্যাহত টালবাহানা। মিটেও যেন মিটছে না পরিচালক-ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব। যাবতীয় অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হওয়ায় শুক্রবার ডিরেক্টরস গিল্ড রাহুলের উপর জারি করা তিন মাসের কর্মবিরতি তুলে নিয়েছিল। কিন্তু ওই রাতেই আনন্দবাজার অনলাইনকে ফেডারেশন সভাপতি জানান, পূর্বসিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। রাহুল প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর পুজোর ছবির সৃজনশীল প্রযোজক হিসেবে থাকবেন। পরিচালক হিসাবে নয়। পাশাপাশি, সংগঠন প্রযোজনা সংস্থাকে শনিবার থেকেই শুটিং শুরুর ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু সেটে রাহুল মুখোপাধ্যায় থাকায় টেকনিশিয়ানরা এ দিন কাজ করেননি। এর পরেই টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োর সামনে বিক্ষোভ দেখান টলিউডের সমস্ত পরিচালক। তাঁদের প্রশ্ন, রাহুলের উপস্থিতিতে কলাকুশলীরা কাজ করলেন না। একই ভাবে পরিচালকেরাও যদি কাজ করা বন্ধ করে দেন তা হলে কি শুধু কলাকুশলীরা একটা কাজ তুলে দিতে পারবেন? শনি এবং রবিবার পরিস্থিতি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। সেটা না করা হলে সোমবার থেকে তাঁরাও একই ভাবে কাজ না-ও করতে পারেন। খবর, শনিবারের এই প্রতিবাদে উপস্থিত ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, দেব অধিকারী, রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অভিজিৎ সেন-সহ কমবেশি ১০০ জন পরিচালক।
প্রকৃত ঘটনা কী? খবর, পরিচালক রাহুল কলকাতায় বাংলাদেশের সিরিজ় ‘লহু’র চার দিন শুটিং করেন। পরে বাকি শুটিং তিনি পড়শি দেশে সারেন। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ডিরেক্টরস গিল্ড রাহুলের থেকে প্রকৃত সত্য জানতে চায়। পরিচালক প্রথমে সমস্তটাই অস্বীকার করেন। পরে তিনি স্বীকার করে নেন, তিনি বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করেছেন। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ওঠে, তিনি নাকি কলকাতায় চার দিনের শুটিংয়ের বকেয়া মিটিয়ে দেননি। এর পরেই তাঁকে তিন মাসের কর্মবিরতির নির্দেশ দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড। রাহুল অবশ্য স্বপক্ষে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ডিরেক্টরস গিল্ডের হাতে তুলে দিয়ে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ ভুল। সেই তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে শুক্রবার ডিরেক্টরস গিল্ড আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়, অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হওয়ায় তারা রাহুলকে কর্মবিরতি থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে। সেই অনুযায়ী শ্রীকান্ত মোহতার পুজোর ছবির পরিচালনা রাহুল মুখোপাধ্যায়ই করবেন, এমন একটা সম্ভাবনাও তৈরি হয়। যদিও রাতে ফেডারেশনের সভাপতি বক্তব্য রাখেন, “পরিচালক হিসেবে নয়, রাহুলকে তাঁরা প্রযোজনা সংস্থার পূর্বঘোষণা অনুয়ায়ী সৃজনশীল পরিচালক হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন সৌমিক হালদার।” স্বরূপ আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে প্রযোজককে তাঁর পুজোর ছবির জন্য আগাম শুভেচ্ছাও জানান।
শনিবার সকালেই বদলে যায় ছবি। এ দিন পুজোর ছবির শুটিং করতে সেটে পৌঁছে যান ছবির অন্যতম অভিনেতা প্রসেনজিৎ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, প্রযোজক শ্রীকান্ত এবং ছবির সঙ্গে যুক্ত বাকিরা। কিন্তু রাহুলকে এ দিন ছবির পরিচালক হিসাবে সেটে দেখে বেঁকে বসেন কলাকুশলীরা। এ বিষয়ে স্বরূপের মত, কথার খেলাপ হয়েছে। সেটে কোথাও সৌমিক নেই। বদলে পরিচালকের আসনে রাহুল। তাঁর সঙ্গে কোনও কলাকুশলী কাজ করতে রাজি নন। আর এই ঘটনাতেই আপত্তি বাকি পরিচালকদের। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, “রাহুলের সঙ্গে টেকনিশিয়ানরা কাজ করতে চাইছেন না। এতে আমরা আহত, অপমানিত। এক জন পরিচালকই কাজ আনেন। আমরা সকলে মিলে তার পর সেই কাজটি করি। আজ একই ভাবে সোমবার থেকে আমরা যদি কাজ করতে না যাই কলাকুশলীরা সেই কাজ তুলে দিতে পারবেন?” তাঁর মতে, শুধুই ছায়াছবির ক্ষেত্রে নয়, এই বক্তব্য ধারাবাহিক, সিরিজ় সকল মাধ্যমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তিনি আরও জানিয়েছেন, শনি এবং রবিবার দু’দিন হাতে সময় রয়েছে। তাঁর আশা, নিশ্চয়ই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবেন ফেডারেশন সভাপতি। সংগঠন ইতিবাচক পদক্ষেপ করলে সপ্তাহের প্রথম দিন থেকে কাজ শুরু হবে। না হলে পরিচালকেরাও সোমবার থেকে কাজে যোগদান না করার পথে হাঁটবেন। রাজের কথার সুর অন্যান্য পরিচালকদের কথাতেও।
এ দিন প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত পরমব্রত বলেন, “ফেডারেশন কিন্তু আইন প্রণেতা নয়। তারা কোনও আইন তৈরি করতে পারে না। তারা একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অংশমাত্র। তারা নিজেদের সদস্যদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ নিয়ম তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেটাও কি তারা বাকি প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করেন? আদৌ কি সংগঠনের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায়?” সোমবার থেকে পরিচালকেরা কাজে যোগ না দিলে কী করবে ফেডারেশন? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল স্বরূপের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, বিকেলে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োয় তাঁরাও সংবাদমাধ্যমদের ডাকছেন। সেখানেই তিনি সংগঠনের সিদ্ধান্ত জানাবেন।