চোদ্দো বছরের সামিউল আলম ও ন’বছরের নুর ইসলাম।
ছবিটা এখনও দু’জনের গ্রামের কেউ দেখতে পাননি। তাতে কী! কলকাতায় তো চলেছে রমরমিয়ে। লোকের মুখে মুখে ‘সহজ পাঠের গপ্পো’র গুণগান। আর তার দৌলতে বদলে গিয়েছে সে ছবির দুই তারকার জীবন। চোদ্দো বছরের সামিউল আলম ও ন’বছরের নুর ইসলাম।
গত বছরও যারা ছিল সাধারণ, জনপ্রিয়তার জাদুকাঠির ছোঁয়ায় এক বছরের মধ্যেই তারকা তারা। সিনেমায় যেমন হয়, বাস্তবেও মাঝেমধ্যে তেমনটা হয় আর কী।
বেড়াচাঁপায় সামিউলের পাড়ায় দুর্গাপুজো হয় না। তবে ক্লাস এইটের ছেলে ইতিমধ্যেই পাশের পাড়ার হিরো। ‘‘তিন-চারটে ঠাকুর দেখিচি। সে ঠাকুর দ্যাখপো কী, লোকে ঝাঁপাই পড়তেস আমার দেখতি। হাত মিলুচ্ছিল। সই নেচ্চেল। গতবার এরাম হইনি,’’ মহরমের এক অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে আনন্দ প্লাসকে বলছিল সামিউল।
সই নিয়ে বিভ্রাট অবশ্য পুজোর সময়ই প্রথম নয়। আগেও হয়েছে। জনপ্রিয়তার চাপ তারা উপলব্ধি করেছে ছবির প্রিমিয়ার থেকেই। ক্লাস ফোরের নুরের কাছে অটোগ্রাফ চেয়েছিল একজন। কিন্তু ‘অটোগ্রাফ’ খায় না মাথায় দেয়, জানা ছিল না তার। পরিচালক মানস মুকুল পাল এগিয়ে এসেছিলেন উদ্ধারে। বলেছিলেন, ওদের খাতায় তোমার নামটা লিখে দাও। ‘‘বাংলায় লেখপো না ইংরিজিতি?’’ সহজাত সারল্য নুরের গলায়।
মুম্বই থেকে গোয়া, নানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গিয়ে এখন জড়তা কেটে গিয়েছে দু’জনেরই। তাই সাংবাদিকের প্রশংসাসূচক মন্তব্যে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলতে দু’সেকেন্ড দেরি হয় না সামিউলের। তবে তাদের গ্রামের লোক যে এখনও ছবিটা দেখে উঠতে পারেনি? ‘‘মানসকাকু বলেস আম্মাদের গ্রামের সিনেমাহলে বইটা চালাবে। ওরা দেখলি তো আরও নাচানাচি করবে,’’ স্পষ্ট জবাব তার।
দেগঙ্গায় নুরের পাড়াতেও দুর্গাপুজো হয় না। তাতে কী! ‘‘দুগ্গাঠাকুরির গান আমি জানি। কিন্তু ওডা নাচতি নাচতি গাতি হবে,’’ নুরের কথায় চমক লাগা স্বাভাবিক। কে জানত চমকের এখানেই শেষ নয়! নুরের দুগ্গাঠাকুরের গান মানে ‘ঢাকের তালে কোম়র দোলে...’।
প্রথম ছবিতেই সাফল্য। শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর জাতীয় পুরস্কার। এত লোকের ভালবাসা। সত্যিই কি জীবন বদলে গেল? অন্য কোনও ছবির অফার পেয়েছে তারা? ‘‘মানসকাকুরে তো বলিচি,’’ উত্তর নুরের। সামিউলের বাবার ইচ্ছে সে যেন অভিনয় করে। নুরের পরিবারের অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও ইচ্ছে-অনিচ্ছে নেই। ‘সহজ পাঠের গপ্পো’র পরিচালক মানসের গলায় তবে একটু বিষাদেরই ছোঁয়া। বললেন, ‘‘ওদের নিয়ে কাজ করতে তো ধৈর্যের দরকার। সে সময়টা কি অন্য পরিচালকরা দেবেন?’’