কেরিয়ার শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে। ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত ছিলেন বেবি চাঁদ নামে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে দেখা গিয়েছিল স্টান্ট ছবির নায়িকা হিসেবে। তবে পরিচিতি পেয়েছিলেন বলিউডের নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করে। কিন্তু নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল। বেবি চাঁদ ওরফে নাজিমা বিখ্যাত হয়েছিলেন নায়কদের বোনের ভূমিকায় অভিনয় করে।
১৯৪৬ সালের ২৫ মার্চ নাজিমার জন্ম মহারাষ্ট্রের নাসিকে। জন্মের পরে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মেহরুন্নিসা। বাবার নাম ছিল নাদির শাহ। মা, সোফিয়া। তাঁর ঠাকুমা শরিফা বাঈ ছিলেন পুরনো দিনের নামী নায়িকা। কাজ করেছিলেন সিনেমা ও থিয়েটার, দু’টি মাধ্যমেই। নাজিমার পিসি হুসন বানু-ও ছিলেন সাদা কালো বায়োস্কোপের অভিনেত্রী। ফলে ছোটবেলা থেকেই নাজিমার বেড়ে ওঠা অভিনয়ের আবহে।
নাজিমার পড়াশোনা মুম্বইয়ে অঞ্জুমান গার্লস স্কুলে। শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় ১৯৫৪ সালে, ‘বিরাজ বউ’ ছবিতে। আট বছরের নাজিমার পরিচয় তখন ছিল বেবি চাঁদ। চার বছর পরে ১৯৫৮ সালে স্টান্ট ছবি ‘প্রিন্সেস সাবা’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। প্রথম ব্রেক তাঁকে দেন আসপি ইরানি। তিনি সম্পর্কে তাঁর পিসেমশাই ছিলেন।
১৯৬১ সালে ইরানির পরিচালনায় নাজিমা অভিনয় করেন ‘উমর কয়েদ’ ছবিতে। এর পর প্রমোদ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘জিদ্দি’ ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়। রামানন্দ সাগর পরিচালিত ও প্রযোজিত ‘আরজু’ ছবিতে অভিনয় করে সেরা পার্শ্বনায়িকা হিসেবে বিএফজেএ পুরস্কার পান।
নাজিমার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘এপ্রিল ফুল’, ‘আয় দিন বাহার কে’, ‘নিশান’, ‘অউরত’, ‘জিদ্দি’, ‘গজল’, ‘অধিকার’, ‘অভিনেত্রী’, ‘মেরে ভাইয়া’, ‘আমির গরিব’, ‘অনজানা’, ‘বেইমান’ এবং ‘সন্ন্যাসী’। তাঁর শেষ ছবি ‘লভ অ্যান্ড গড’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৬ সালে। এই ছবির কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৬৩-তে। দীর্ঘ দু’দশক পেরিয়ে মুক্তির আলো দেখে ছবিটি।
নিজের ছবিগুলির মধ্যে নাজিমার সবথেকে পছন্দের ছিল ‘বিদ্যাপতি’ ছবিটি। কলকাতায় নির্মিত এই ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন ভরতভূষণের বিপরীতে। যদিও বক্স অফিসে ছবিটি সফল হয়নি।
কলকাতা থেকে নাজিমার আরও একটি ছবি প্রযোজিত হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া সেই ছবির নাম ‘ওহি লড়কি’। সেই ছবিতে নাজিমার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন নবাগত সর্বেন্দ্র।
দীর্ঘ দিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেও নাজিমার নামে কোনও গুঞ্জন শোনা যায়নি। পরিবারের পছন্দ করা পাত্রকে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্বামী অরশুল রহমান ছিলেন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন। স্বামী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে সংসারের ঘেরাটোপে খুশি ছিলেন নাজিমা।
রাজেন্দ্রকুমার, মনোজকুমার, সঞ্জীবকুমার, বিজয় অরোরা, শাম্মি কপূর, দেব আনন্দ-সহ নিজের সময়ের নামী সব নায়কের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নাজিমা। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন নায়কের বোন। তাই নাজিমাকে বলা হয় ‘বলিউডের বোন’।
ঘনিষ্ঠ মহলে এবং সংবাদমাধ্যমে নাজিমা বহু বার বলেছিলেন নায়িকা হতে না পারায় তাঁর দুঃখ আছে। কিন্তু তিনি জীবনে যা পাননি, তা নিয়ে আক্ষেপ করতে চান না। বিয়ের পরে বেশি দিন অভিনয় করেননি তিনি। সিনেমাপ্রেমীদের অনেকেরই মত, বলিউডের নায়িকা হওয়ার সব যোগ্যতা তাঁর মধ্যে ছিল। কিন্তু পরিচালক ও প্রযোজকরাই তাঁকে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ দেননি।