জয়া আহসান
এতটা সময় কলকাতাকে ছেড়ে থাকেননি তিনি। জয়া আহসান। এই অতিমারির সময় পুরনোকে খুঁজে দেখতে গিয়ে, কলকাতার বাড়ির ছবি দেখতে গিয়ে বৃষ্টির আখরে কলকাতাকে খুঁজছেন জয়া।
ঢাকা থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বললেন, “কলকাতা আমার জীবনে বিচ্ছিন্ন কিছু নয় আর। ঢাকা যদি হয় শেকড়, কলকাতায় আমি আমার ডালপালা মেলেছি। ওই যে আমার বাড়ির জানলা, তা তো যে কোনও বাড়ির চোখ। কলকাতার বাড়ির এই দীঘল চোখের জানলাটাই ছিল আমার মুক্তির দরজা। এর ভেতর দিয়ে বয়ে আসা হাওয়ার ঝাপট কোথায় উড়িয়ে নিয়ে যেত আমার ক্লান্তি, আমার অবসন্নতা। আহা, আমার মন–ভালর জানলা!”
‘বিসর্জন’ ছবির ‘পদ্মা’ বড় গভীর কণ্ঠে বলে চলেছেন তাঁর গৃহবন্দিত্বের কথা। তিনি মনে করেন, এই অতিমারিতে প্রকৃতি যেন মানব জাতিকে নিজেকে সংশোধনের সময় দিল। “আমফানের সময় খুব ভেঙে পড়েছিলাম। কাছে যেতে পারছিলাম না। দূর থেকে ওই দৃশ্য দেখা… এখন তো শুনছি ভারতের অবস্থাও সঙ্গীন। যে মানুষগুলোর সঙ্গে রোজ কাজ করেছি তাঁদের কী অবস্থা? খুব আকুল হয়ে আছি।” কাঁটাতারের যন্ত্রণা যেন সত্যিই জয়ার মধ্যে অভিঘাত তুলে চলেছে। বললেন, “বর্ডার তো সিল করে দেওয়া আছে। যে দিন প্রথম ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান উড়বে সে দিন প্রথম যাত্রী বোধহয় আমিই হব। মাঝে ভেবেছিলাম, রোড ট্রিপ করে কলকাতা চলে যাই! সেখানেও পথ বন্ধ।”
এই প্রখর সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয়?
তবে পথ বন্ধ থাকলেও মন খুলে দিয়েছেন জয়া। “জানলার ওপারের দেবদারু গাছের কথাটা মনে আসছে বার বার। একটা বড় বাজপাখি এসে বসত গাছটার উপর। রোজ, একদম একা একা। অন্য কোনও পাখির সঙ্গে ওকে কখনও দেখিনি। আমার জন্যই ও আসে, এটা ভাবতেই আমার ভাল লাগত। আমার টোটেম হয়ে উঠেছিল যেন পাখিটা। দেবদারুর শিখরে বাজপাখি, এই প্রখর সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয়?” নিজেকেই যেন প্রশ্ন করেন জয়া।
গৃহবন্দি অবস্থায় নিজেও বাগান করেছেন তিনি। ছবি দেখেছেন, “কিন্তু একটা বইও পড়তে পারিনি। মনই বসছিল না! একটা মাছকে যদি জল থেকে বাইরে রাখা হয়? সে কেমন রাখা? এত দিন শুটিং ফ্লোরের বাইরে আমি! জুন থেকে শুট শুরু করার কথা ছিল।” ভারত-বাংলাদেশের যাতায়াতের অবস্থা কী হবে জানেন না তিনি। মনে করেন ইন্ডাস্ট্রির অপরিসীম ক্ষতি। এক দিকে ক্ষতি, আর এক দিকে নিজেদের শুধরে নেওয়ার অনুভূতি। বললেন, “কখনও যুদ্ধ দিয়ে মানবজাতির সংশোধন হয়েছে, এ বার অতিমারি দিয়ে হল।”
অলৌকিক জানলাগুলো ফিরে পেতে চান জয়া...
তবে আর সকলের মতো জয়াও আশাবাদী। এই মুহূর্তে ছবির কাজ শুরু করা ঠিক নয় বলে মনে করলেও খুব শিগগিরি ও পারের রাস্তা খুলে যাবে, এই বিশ্বাস নিয়ে তিনি কলকাতার যোধপুর পার্কের বাড়ির জানলার সঙ্গে কথা বলে চলেছেন। “জানলাটা আমার ছন্নছাড়া স্বপ্নেরও এক অসম্ভব মুক্তি। দূরে বিরাট বিরাট পানির ট্যাঙ্কি। পানির ট্যাঙ্কি আমার ছোটবেলা থেকে প্রিয়। ওর মধ্যে কেমন যেন অজানার হাতছানি। সব সময় মনে হয়, ‘সিটি অব অ্যাঞ্জেলস’–এর দেবদূতদের মতো মরে যাওয়ার পর আমিও ওই পানির ট্যাঙ্কের উপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকব। কল্পনার কোন দিগন্তে যে নিয়ে যেত আমার জানলা!”
ওই অলৌকিক জানলাগুলো ফিরে পেতে চান জয়া... জানলার কোনও কাঁটাতার হয় না!