বাবা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ও মা দীপ্তি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঋতব্রত। ছবি: সংগৃহীত।
আজ বাবা-মায়ের ২৬ বছরের বিবাহবার্ষিকী। সাধারণত ২৫ বছর পূর্ণ হলে বড় করে উদ্যাপন করা হয়। কিন্তু, আমরা করে উঠতে পারিনি। অবশ্য অত বড় করে উদ্যাপন করতেও চাইওনি। আমরা সব সময়ে খুব ঘরোয়া ভাবেই পালন করি এই বিশেষ দিনগুলো। আজ আমাদের নাটকের শো-ও রয়েছে। তাই গতকাল রাতেই সামান্য আয়োজন করেছিলাম।
রাতে মা-বাবা কেক কাটলেন। খাওয়া-দাওয়া হল। ছবি তুললাম আমরা। তবে বাড়ির খাবার যেমন হয়, তেমনই হয়েছে। কাল রাতে ডাল, ভাত, আলু পোস্ত আর আজ খিচুড়ি-পেঁয়াজি রান্না হয়েছে। আসলে আমাদের রোজের জীবনযাপন খুব সাধারণ ও ছাপোষা। আমাদের বাড়িটাও তেমন। বাবা-মায়ের সম্পর্কটা যেমন ভালবাসা দিয়ে গড়া, আমাদের বা়ড়িটাও তেমনই। আজ ওঁদের বিবাহবার্ষিকীতে এই কথাটা বলতেই হয়, আমাদের তিন জনের এই টিম ভালবাসায় মোড়া।
বাবা-মায়ের কিন্তু সম্বন্ধ করে বিয়ে। আমি ছোট থেকে দেখেছি, কী ভাবে পরস্পরকে তাঁরা বুঝেছেন, নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ ভাগ করে নিয়েছেন, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখেছেন। মা বলেন, “আমাদের সময় প্রেম করে বিয়ের সেই ভাবে চল ছিল না। তাই এই ভাবেই ভালবাসা খুঁজে নিয়েছি আমরা। থাকতে থাকতে এই ভালবাসাই আরও জোরালো হয়েছে।” তবে বাবা-মা দু’জনই খুব রোম্যান্টিক, খুব রসিক। সব সময় ওঁদের নিজেদের খুনসুটি লেগেই থাকে। দু’জনকে এককথায় ‘ফিল্মি জুটি’ও বলা চলে। দুটো মানুষ এতগুলো বছর হাসি ও আনন্দে কাটাচ্ছেন, এই বিষয়টা আমার খুব ভাল লাগে। আমি শিখি অনেক কিছু।
ওঁদের ভালবাসার সংজ্ঞায় হয়তো বিরাট আড়ম্বর নেই। কোনও দেখনদারি নেই। তবে, ওঁদের সম্পর্কটা অনেক বেশি অন্তরের। ওঁদের ব্যবহারে পরিচয় পাওয়া যায়, ওঁরা পরস্পরকে কতটা ভালবাসেন, কতটা সম্মান করেন। যে ভালবাসা দেখা যায় না, অনুভব করা যায় এবং পরস্পরকে খোলা জায়গা দেয়, সেটাই বোধহয় আসল ভালবাসা। ওঁদের দেখেই আমার ভালবাসার সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে। তাই ২৬তম বিবাহবার্ষিকীতেও ওঁদের বলেছি, “বদলাতে থাকা সব কিছুর মধ্যে আমাদের এই ‘টিম’ একই রকম থাক।” ওঁরা আমাকে ছোট থেকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। 'স্বাধীনতা'র সঠিক অর্থ শিখিয়েছেন। কখনও কিছু চাপিয়ে দেননি। ওঁদের দেখেই বুঝেছি, পরস্পরের উপর কোনও কিছু চাপিয়ে না দিয়েও একসঙ্গে ভাল থাকা যায়।