Bijoya Web Series

‘নারীসুলভ পুরুষ মানেই তিনি সমকামী নন’, ‘বিজয়া’য় অভিনয় নিয়ে কী বললেন জিৎ সুন্দর?

মনোবিদের পরামর্শ ছিল, চরিত্রটির প্রতি যেন সহানুভূতি না তৈরি হয়। বরং এই চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে অহনের প্রতি সহমর্মিতা থাকতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ১১:৫০
Share:

‘বিজয়া’ সিরিজ়ে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে জিৎ সুন্দর চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

সমাজের ঠিক করে দেওয়া ‘স্বাভাবিক’-এর একটা সংজ্ঞা রয়েছে। কারও আচরণ, ভাবনাচিন্তা সেই ঠিক করে দেওয়া সংজ্ঞার চেয়ে একটু ভিন্ন হলেই যেন ছন্দপতন হয়। সেই ব্যক্তির দিকে ধেয়ে আসে একের পর এক কটাক্ষ। যেমন কোনও পুরুষের কথা বলা বা চলাফেরার ধরনে ‘পুরুষত্ব’ কম পড়লেই, তাঁকে বহু ঠাট্টা, তির্যক মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয়। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ওয়েব সিরিজ় ‘বিজয়া’তেও রয়েছে এমন একটি ‘নারীসুলভ’ চরিত্র। সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিৎ সুন্দর চক্রবর্তী।

Advertisement

বাস্তবে ‘অহন’ নামে সেই চরিত্রের সঙ্গে কোনও মিল নেই জিতের। তাই এই চরিত্রটির প্রস্তাব আসার পরে বেশ ভয় পেয়েছিলেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে জিৎ বলেন, “এই ধরনের চরিত্র আমরা পর্দায় তো খুব একটা দেখি না। কিন্তু বাস্তবে আমাদের চারপাশে এমন বহু মানুষ রয়েছেন। তাই প্রাথমিক ভাবে এই চরিত্রটা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম। পাশাপাশি, আনন্দও হয়েছিল এই সুযোগটা পেয়ে।”

নারীসুলভ পুরুষের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ব্যঙ্গ করে ফেলার প্রবণতা থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক ছিলেন জিৎ। তাঁর কথায়, “এই চরিত্রটি করতে গিয়ে যাতে ব্যঙ্গ না মনে হয় বা সংবেদনহীন বার্তা না পৌঁছয়, সেই দিকে সতর্ক ছিলাম। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যঙ্গ করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই লুক সেট হওয়ার পরেই আমি একজন মনোবিদের সঙ্গে কথা বলি। অহনের মন ও তার চিন্তাভাবনা বুঝে ওঠাই আমার প্রথম কাজ ছিল।”

Advertisement

মনোবিদের পরামর্শ ছিল, চরিত্রটির প্রতি যেন সহানুভূতি না তৈরি হয়। বরং এই চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে অহনের প্রতি সহমর্মিতা থাকতে হবে। কারণ, সে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। জানালেন জিৎ সুন্দর। অভিনেতা বলছেন, “এই চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবে আমার কোনও মিল নেই। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, জীবন দর্শন, বড় হয়ে ওঠা— সবটাই আমার থেকে আলাদা। তাই চরিত্রটির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অহনের প্রতি সহমর্মী না হলে এই চরিত্রটিতে অভিনয় করা সম্ভব হত না।”

অহনের চরিত্রটি বোঝার জন্য পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের পাশাপাশি স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের থেকেও পরামর্শ পেয়েছেন জিৎ সুন্দর। তিনি বলেন, “চিত্রনাট্য অনুযায়ী স্বস্তিকাদির চরিত্রকে‘আন্টি’ সম্বোধন করতে হত। কিন্তু আমিই বলি, ‘আন্টি’ না বলে ‘কাকিমা’ বললে ভাল হয়। ‘কাকিমা’ সম্বোধন করাটা ভীষণ ভাবে বাঙালি অভ্যেস। ‘কাকিমা’ ডাকের মধ্যেও মাতৃত্ব প্রতিফলিত হয়।”

হাঁটা চলা, তাকানো, কথা বলার ধরনের মধ্যে নারীসুলভ আচরণ আনার জন্য নিজের ‘কুইয়ার’ গোষ্ঠীর বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলেছেন জিৎ সুন্দর। তাঁর কথায়, “যদিও সিরিজ়ে কোথাও অহনের যৌন আত্মপরিচয় নিয়ে কথা বলা হয়নি, কারণ সেটা চিত্রনাট্যে প্রয়োজন ছিল না। আমরা অনেক সময় ধরে নিই, কোনও পুরুষ নারীসুলভ মানেই তিনি সমকামী। সেই জন্যই আমি কয়েক জন নারীসুলভ পুরুষের সঙ্গে কথা বলি। আবার ‘কুইয়ার’ গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গেও কথা বলি।”

‘বিজয়া’ ওয়েব সিরিজ়ের একটি দৃশ্য।

স্বস্তিকার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও জানান জিৎ সুন্দর। তিনি বলেন, “অভিনেতার স্বচ্ছন্দ বোধ করার একটা স্পেস দরকার। স্বস্তিকাদির জন্য পুরো সেটের আবহ খুবই খোলামেলা থাকত। কোনও ভাবেই আমাদের মনে করাননি, ‘তুমি কিন্তু স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের পাশে বসে রয়েছ’ বা ‘আমিই কিন্তু সিরিজ়ের মুখ্য চরিত্র’। বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেগুলি আদেশ বলে মনে হয়নি। সায়ন্তনদা, বিদীপ্তাদি (বিদীপ্তা চক্রবর্তী) বা গুলশনারাদি (গুলশনারা খাতুন), প্রত্যেকেই সেটের আবহ খুব সাবলীল রাখতেন। সেটে ভুল করার খোলা স্পেস থাকলেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অভিনয় করা যায়।”

জিৎ আরও বলেন, “স্বস্তিকাদি যখন সেটে আসতেন, আমরা সেটে এক ধরনের নীরব আবহ বজায় রাখার চেষ্টা করতাম। এমনও হয়েছে, আমার দৃশ্যের শুটিং হচ্ছে। স্বস্তিকাদি এসে বসে আছেন বা দেখছেন। সেটায় আরও বুঝতাম যে, আমার কাজটা ঠিক হচ্ছে কি না। স্বস্তিকাদি এই চরিত্রটির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। চরিত্রটাই এত মানসিক ও শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত! আমরাই ওঁর পরিশ্রম দেখে অবাক হয়ে যেতাম।”

উল্লেখ্য, এর আগে ‘বগলা মামা’ ছবিতে ও ‘ছোটলোক’ সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন জিৎ। ভিকি কৌশল অভিনীত ‘স্যাম বাহাদুর’ ছবিতেও একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement