আদিল
প্র: ইদানীং বাংলা ছবিতে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে আপনাকে...
উ: আমার কাছে শুধু বাংলা নয়, প্রায় সব আঞ্চলিক ভাষা এবং হিন্দি ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে। স্ক্রিপ্ট ভাল লাগলে তবেই রাজি হই। আর সকলে যেমন জানেন, বাংলার জন্য আমার মনে একটা বিশেষ জায়গা রয়েছে। কারণ আমার বেড়ে ওঠার একটা অংশে জড়িয়ে রয়েছে এই শহরটা, এখানকার সংস্কৃতি, সাহিত্য... সব কিছু।
প্র: ‘অব্যক্ত’ ছবিটা বাছলেন কেন?
উ: এই ছবিটা এমন বিষয়ে কথা বলে এবং যে ভাবে বলে, তা নিয়ে বড় একটা কথা বলা হয় না এখনকার বিনোদন মাধ্যমে। একজন নারী কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করতে পারে, তা সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। শেষে গিয়ে ছেলে জানতে পারে তার মায়ের সম্পর্কে। যে ভাবে ছবির ন্যারেটিভ তুলে ধরেছে নতুন পরিচালক অর্জুন, তা সত্যিই আমাকে ভাবিয়েছিল। তাই ছবিটা করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
প্র: ‘গুড নিউজ়’-এর মতো হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবিতেও দেখা যায় আপনাকে...
উ: ছবিটা মুক্তি পাওয়ার কয়েক দিন পরে দেখতে গিয়েছিলাম। এটাও এমন একটা ছবি, যে বিষয়ে সচরাচর কথা বলা হয় না। আইভিএফ নিয়ে খোলাখুলি ক’জন কথা বলেন আমাদের চারপাশে? আর আমি বরাবরই স্পষ্ট করে বলে এসেছি, কিছু ছবি শুধু অর্থোপার্জনের জন্যই করি আমি। বেশ কিছু অদ্ভুত ছবিও করি, যেগুলোর নাম করতে চাই না। কারণ আমাকেও বিল পেমেন্ট করতে হয় (হাসি)!
প্র: ‘কবীর সিং’-এর পুরো স্ক্রিপ্ট না পড়েই নাকি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন ছবিটা করতে?
উ: এখনও পর্যন্ত আমার কেরিয়ারে ‘কবীর সিং’ই একমাত্র ছবি, যার পুরো চিত্রনাট্যটা না পড়েই ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছিলাম। আমার কোনও ধারণা ছিল না, ছবিটা কেমন হতে চলেছে। যদি পুরো স্ক্রিপ্টটা পড়তাম, ছবিটা করতে রাজি হতাম না। ছবির অ্যাটিটিউড আমার পছন্দ হয়নি, বিষয়বস্তুও নয়।
প্র: জনপ্রিয় হলিউড ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি ‘স্টার ট্রেক’-এরও অংশ আপনি। অভিজ্ঞতা কী রকম?
উ: শুটিংয়ের প্রথম দিনেই বুঝেছিলাম, ছবিটায় আমি শুধুই একজন সাউথ এশিয়ান মানুষ নই। এই জার্নিটা আমার কাছে খুব স্পেশ্যাল। এ মাসের শেষেই আবার শুটিং রয়েছে।
প্র: আর কী কী কাজ রয়েছে হাতে?
উ: একটি মালয়ালি ছবি করছি, যাতে মোহনলাল রয়েছেন। আর ক’দিনের মধ্যেই ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর পরের সিজ়নের শুটিং শুরু হবে।
প্র: সিএএ এবং এনআরসি-র প্রতিবাদে একের পর এক টুইট করেছেন আপনি। কাজের জায়গায় এর প্রভাব পড়তে পারে, এমনটা মনে হয়নি কখনও?
উ: না। প্রতিবাদ হবেই, কারণ আমরা এখনও একটা গণতন্ত্রে বাস করি। এখানে চাইলে নিজের মতো করে আওয়াজ তোলা যায়। এখন সোশ্যাল মিডিয়া সেই বক্তব্য পৌঁছে দেওয়ার কাজটা আরও সহজ করে দিয়েছে। সরকারের কোনও পদক্ষেপের সঙ্গে সহমত না হলে একজন নাগরিকের প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে। হিংসার পথ বেছে না নিয়ে আরও সৃষ্টিশীল ভাবে, গঠনমূলক ভাবে প্রতিবাদ জানানো দরকার। আর সেটা হচ্ছেও গোটা দেশ জুড়ে।
প্র: তারকারা কি প্রতিবাদ করতে ভয় পান?
উ: এটা যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত চয়েস। এ আর রহমান যেমন সম্প্রতি বলেছেন, প্রতিবাদ আর যুদ্ধ চলাকালীন একজন শিল্পীর কাজ হল সুন্দর কিছু সৃষ্টি করে যাওয়া। আমাদের কাজ হল, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সেতু তৈরি করা। পরস্পরকে আরও কাছাকাছি এনে দেওয়া।
প্র: অসমের গোয়ালপাড়ায় জন্ম বলেই কি আপনার প্রতিবাদের ভাষা এতটা জোরালো?
উ: অসম নিজের ভাষার জন্য লড়ছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই লড়াইটার সঙ্গে অনেক আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। যদি আপনাকে একদিন বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাটা সেকেন্ডারি ল্যাঙ্গোয়েজ হয়ে যাবে, আর বেশির ভাগ মানুষ অহমিয়ায় কথা বলবেন, আপনি প্রতিবাদ করবেন না? এনআরসি এবং সিএএ সে রকমই সরকারের চাপিয়ে দেওয়া আর একটা নতুন থ্রেট। এর বিরুদ্ধেও লড়বে অসমের মানুষ।