পরীমণি এবং শেখ হাসিনা
আদালতে গিয়ে কাঁদলেন পরীমণি। কিন্তু জামিন পেলেন না। বেআইনি মাদক দ্রব্য-সহ গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। চার দিনের রিমান্ডে যান পরীমণি। দেশজুড়ে পরীমণির জীবনযাপন নিয়ে কথা উঠেছে। শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরাও তাঁর পক্ষে কিছু বলছেন না। এই পরিস্থিতিতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা আব্দুল গফ্ফর চৌধুরী পরীমণির পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন ৮৬ বছরের এই লেখক-সাংবাদিক। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে পাঠানো আবেদনে তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই আবেদন আমার একার নয়। দেশে প্রশাসন, একটি বিত্তশালী গোষ্ঠী এবং একটি মিডিয়া গোষ্ঠী মিলে একটি ২৮ বছরের তরুণীকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, সে সম্পর্কে সচেতন নাগরিক সমাজের আবেদন। পরীমণিকে গ্রেফতার করার জন্য দু’-চার জন র্যাব কিংবা পুলিশের সদস্য গেলেই হত, সেখানে যে যুদ্ধযাত্রা করা হয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল কোনও ভয়ঙ্কর ডাকাতকে গ্রেফতারের জন্য এই যুদ্ধযাত্রা। গ্রেফতারের পর থেকেই পরীমণির বিরুদ্ধে একটার পর একটা স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হচ্ছে। বোঝাই যায়, কোনও একটি মহল থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই স্ক্যান্ডাল ছড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ বিচারের আগেই বিচার। চয়নিকা চৌধুরীর মতো এক জন বিখ্যাত নাট্যকারকে অহেতুক রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো ক্ষমতার বাড়াবাড়ি। এগুলো চলতে দিলে দেশের নাগরিক স্বাধীনতা বিপন্ন হবে।’
বাংলাদেশের এই আলোচিত নায়িকা সম্প্রতি একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনেন। প্রথমে থানা অভিযোগ না নিলে পরীমণি ফেসবুক লাইভে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানান। এর পর তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী জুলাইয়ের প্রথমে জামিনে মুক্ত হন। কিছু দিন যেতে না যেতেই পরীমণির বাড়িতে হানা দেয় প্রশাসন।
পরীমণি
লন্ডনবাসী এই লেখক এর পর লিখেছেন, ‘বোট ক্লাবের ঘটনার পরে আসামিরা যে সহজেই জামিন পেলেন, তার রহস্য কী? এই শক্তিশালী মহলটি প্রশাসনের একাংশকে বশ করে যে এই ঘটনাগুলো সাজিয়েছে, তা বুঝতে কি কষ্ট হওয়ার কথা? তারপর মিডিয়ার প্রচার। এই প্রচারগুলো যে সত্য নয়, তা সিটি ব্যাঙ্কের এমডি মাসরুর আরেফিনের বিবৃতিতে জানা গিয়েছে। সাড়ে তিন কোটি টাকার গাড়ি নিয়ে পরীমণির বিরুদ্ধে যে প্রচার চালানো হয়েছে, আরেফিন সাহেবের বিবৃতিতে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পরীমণি চলচ্চিত্রের নায়িকা। তাঁর নানা পুরুষের সঙ্গেই নানাবিধ সম্পর্ক থাকতে পারে। সেটা কি একটা অপরাধ?’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘আমার সবিনয় জিজ্ঞাসা, আদালতে বিচার হওয়ার আগে দেশের চলচ্চিত্র জগতের সম্ভাবনাময় এক তরুণীর জীবন যে ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হল, তার দায়িত্ব কে নেবে? আদালতের বিচারে পরীমণি যদি দোষী সাব্যস্ত হন এবং শাস্তি পান, তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু এক জন তরুণীকে যে ভাবে আটক করে হেনস্থা করা হচ্ছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রমাণিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা শুধু নারীসমাজের অপমান নয়, মানবতার অপমান। আমাদের নাগরিক স্বাধীনতার ওপর এটি একটি ভয়ঙ্কর থাবা।’
আব্দুল গফ্ফর চৌধুরী এর পর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলেই নারীদের ক্ষমতায়ন শুরু হয়েছে। সেই জন্যই তাঁর কাছে আমার সবিনয় আবেদন, পরীমণির ব্যাপারে তিনি হস্তক্ষেপ করুন। তাঁকে বিচার থেকে রক্ষা করতে বলি না। তাঁকে হায়নার গোষ্ঠীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। পরীমণির সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে, তা যে দেশের আর এক জন নাগরিকের উপর করা হবে না, তার নিশ্চয়তা কী? আমি দেশের সচেতন বুদ্ধিজীবী শ্রেণির কাছে আবেদন করি, তাঁরা পরীমণির উপর এই হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ করুন। দয়া করে চুপ করে থাকবেন না। পরীমণির উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করুন। সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ, তারা যেন অত্যাচারিতের পক্ষে দাঁড়ায়। অত্যাচারী গোষ্ঠীর পক্ষে না যায়।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনও পরীমণির প্রতি সহানুভূতিশীল লেখা লিখেছেন কয়েক দিন আগে। বাংলাদেশের গীতিকারের আবেদন ইতিমধ্যেই আলোড়ন তুলেছে। সব মিলিয়ে পরীমণি বিতর্কে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে উত্তাল।