ধর্মতলার মোড়।
সেখান থেকে দু’পা রাজভবনের দিকে এগোলে ডান হাতে সেই বাড়ি।
লস্যির দোকানের ভিড় ঠেলে, পাইরেটেড সিডির ঠেলাওয়ালাকে বাঁ হাতে রেখে এগোলেই পড়বে এসপ্লানেড (ইস্ট) পোস্ট অফিস। যার চার তলায় এখন কলকাতা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ব্যস্ততম অফিস।
রোজ যাঁরা এই পথ দিয়ে হেঁটে যান, তাঁদের এ কথা জানার কথা নয়। তবে গোটা ফিল্ম দুনিয়া জানে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন অফিসের মাহাত্ম্য। ৩১ অগস্টের মধ্যে ছবি সেন্সর করিয়ে পাঠাতে হবে ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতে। আর তার জন্য ফিফ্থ গিয়ারে চলছে ছবির সার্টিফিকেশনের কাজ। কোনও কোনও দিন ছ’টা ছবির সেন্সর হচ্ছে এখন। ঘনিষ্ঠ চুম্বনদৃশ্য থেকে অশালীন ডায়লগের ওপর কাঁচি চলছে এই বাড়িতেই।
তবে লিফ্ট দিয়ে চারতলায় ওঠার পরেও এই সব কিছু বোঝা যায় না। খুব শান্ত পরিবেশ। প্রিভিউ থিয়েটার থেকে ভেসে আসে সিনেমার ডায়লগ। সোজা এগিয়ে গেলে একটা ঘরে একগাদা ফাইলের মাঝে একটা টাইপরাইটার। সেখানে খটাস-খটাস টাইপ হয়ে চলেছে হলদে রঙের সেন্সর সার্টিফিকেট। কাজের ব্যস্ততা আছে ঠিকই। তবে চিত্কার চেঁচামেচি নেই।
১৮ অগস্টে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সেন্সর বোর্ডের সিইও রাকেশ কুমার গ্রেফতার হয়েছেন মুম্বইতে। অ্যাডভাইসারি প্যানেলে সর্বেশ জয়সওয়াল আর সেন্সর এজেন্ট শ্রীপতি মিশ্রর বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। রাকেশের তরফ থেকে তাঁরা নাকি সত্তর হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন ‘মোর দাও কি কে বিহাভ’য়ের সেন্সর সার্টিফিকেট জোগাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে।
এর পর থেকেই সেন্সর বোর্ডের দুর্নীতি নিয়ে নানা মুনির নানা মত চারিদিকে। কারও অভিযোগ রাকেশ মোটেই এই দুর্নীতির পাণ্ডা নন। তিনি হলেন যাকে বলে, ‘টিপ অব দ্য আইসবার্গ’। প্রশ্ন উঠছে যে মুম্বইতে যদি সেন্সর নিয়ে এত রকম চক্রান্ত চলতে পারে, কলকাতায় তার কি কোনও রকম প্রতিফলনই হয় না?
সিবিএফসির আঞ্চলিক অধিকর্তা ভাস্বর গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন যে কলকাতায় মুম্বইয়ের ঘটনার কোনও প্রভাবই পড়েনি। “কোথাও একটা পচা আপেল থাকলে তার মানে তো গোটা জায়গাটার সব কিছুই পচে যায় না। এখানে আমরা সব নিয়মকানুন মেনেই করি,” বলেই তিনি ব্যস্ত হয়ে যান ছবির স্ক্রিনিংয়ে।
ভাস্বরের এই দাবি অবশ্য অনেকেই মানতে নারাজ। বিজেপির তরফ থেকে সেন্সর বোর্ডের নতুন স্ক্রিনিং কমিটি তৈরি করার জন্য পার্টিকে পরামর্শ দিচ্ছেন অভিনেতা জর্জ বেকার। রাজনৈতিক দলের তৈরি স্ক্রিনিং কমিটি নিয়েও এর আগে অনেকে সমালোচনা করেছেন। তবে সে প্রসঙ্গে না গিয়ে জর্জ বলেন, গোটা সিস্টেমের একটা ক্লিন-আপ দরকার। “সেন্সর বোর্ডটা নাকি মানি মেকিং একটা র্যাকেটের জায়গা হয়ে গিয়েছে। এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে মুম্বইতে যা হচ্ছে কলকাতায় তার কোনও ইমপ্যাক্টই নেই,” বলছেন জর্জ।
তা কী এমন শুনেছেন তিনি? “বড় বড় প্রযোজনা সংস্থার দৌরাত্ম্যের কথা সবাই জানে। তারা কী ভাবে সেন্সর বোর্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে সেটাও জানা। সেন্সরের আগেই ছবির রিলিজ ডেট বলে দিচ্ছেন। সেটা একদম বেআইনি। শ্যুটিংয়ের সময় কী করে একজন প্রযোজক এতটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে সেন্সরশিপে তাঁদের কোনও সমস্যা হবে না? এখনও হয়তো ফিল্মের শ্যুটিং করছেন। এ দিকে দাবি করছেন যে পুজোতেই ছবি মুক্তি পাবে। যেখানে সাধারণ প্রযোজককে কত দিন অপেক্ষা করতে হয়, সেখানে এঁদের আত্মবিশ্বাসের শেষ নেই। রাতারাতি তাঁদের ছবির সেন্সরশিপ হয়ে যায়। আর নতুন পরিচালকেরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান ছবি নিয়ে। এ সব দুর্নীতি বন্ধ করতেই হবে। সেন্সর করানোর জন্য দালালিচক্রটা বন্ধ করতেই হবে,” বলছেন জর্জ।
‘দালালিচক্র’ ওরফে ‘সহৃদয় সেন্সর এজেন্ট’। নতুন কোনও প্রযোজক ছবি সেন্সর করাতে গেলে সব চেয়ে বড় সমস্যা হল ঠিক ভাবে সব কাগজপত্র নিয়মানুযায়ী পূরণ করে জমা দেওয়া। আর এই কাজটা করে দেওয়ার জন্যই সেন্সর অফিসের সামনে ‘সহৃদয় এজেন্ট’য়ের ছড়াছড়ি। বোর্ডের তরফ থেকে এই এজেন্টদের সাহায্য নেওয়াটা মোটেই বাধ্যতামূলক নয়। তবু এঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সিবিএফসির সামনেই দেখা হল এমন এক এজেন্টের সঙ্গে। তিনি বললেন, “আমি একটু সাহায্য করে দিই, এই আর কি! বেশি নিই না। কারও কাছে দু’ হাজার, কারও কাছে দশ হাজার।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক এজেন্ট হাসতে হাসতে বলেন, “যত বোকা প্রযোজক, তত বেশি টাকা হাঁকানো যায়!”
তা এই দু’-পাঁচ-দশ হাজারের বিনিময়ে কাজটা কী? “ঠিক মতো ফর্ম জমা দেওয়া,” বাঁকা হাসি দিয়ে বলেন ওই এজেন্ট। শুধু ফর্ম জমা দিতেই এত টাকা? “না, ফর্মটা ফিল আপ করাটা অত সহজ নয়। আরও অনেক কিছু আছে। পোস্টার মেটিরিয়াল প্রিন্টিং আর সেন্সর, ইম্পার টাইটেল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট জোগাড় করা, ল্যাবরেটারি থেকে সিনেমার লেংথ সার্টিফিকেট জোগাড় করা, সেন্সর স্ক্রিপ্ট বানানো, স্ট্যাম্প পেপার ডিক্লারেশন জোগাড় করা, সেগুলো সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়া, স্ক্রিনিংয়ের সময় থাকা এবং প্রযোজকের তরফ থেকে সেন্সর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা। এই সবের জন্যই টাকাটা নেওয়া হয়,” জানান তিনি।
মুম্বইয়ে সেন্সর এজেন্ট শ্রীপতি মিশ্র এক সময় এতটাই ক্ষমতা রাখতেন যে তিনি দাবি করেছিলেন যে ২০০২য়ের অ্যাকশন ছবি ‘কর্জ: দ্য বার্ডেন অব এ ট্রুথ’য়ের সার্টিফিকেশনটা তিনি নাকি একদিনের মধ্যে বের করে দিয়ে রেকর্ড করেছিলেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর দাবি ছিল তাঁর হাত দিয়েই ছবিটা মুম্বইয়ে দ্রুততম সার্টিফায়েড ছবি হয়েছিল! পদ্ধতিটা ছিল সহজ সকালে চিত্রনাট্য জমা, দুপুরে স্ক্রিনিং কমিটির ছবি দেখা আর সন্ধের মধ্যে সার্টিফিকেশন!
তবে কলকাতায় কি কোনও শ্রীপতি আছেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার এক সেন্সর এজেন্ট জানান, “না, এখানে এমনটা নেই। বড়জোর এমার্জেন্সি থাকলে খানিকটা তদ্বির করা যায় যাতে ডাবড্ ছবির পরিবর্তে নতুন ছবির স্ক্রিনিং করানো হয়। এর জন্য প্রোডিউসরকে একটা স্ট্যাম্প ডিক্লারেশন দিতে হয় যে তাঁর ছবির রিলিজ আসন্ন।”
কিন্তু এই এজেন্টের কাজ করতে এসে মজাও কম হয় না। সেন্সর এজেন্ট অতসী ভৌমিক বলেন, “এক বার এক প্রযোজক এসে আমাকে একটা ব্লু-ফিল্ম মার্কা ছবি সেন্সর করিয়ে দেওয়ার কাজ দিতে চেয়েছিলেন। ছবি ভর্তি স্ল্যাং আর তিনটে নোংরা বেডসিন। আমাকে বলেছিলেন ‘২২ শ্রাবণ’য়ে তো এত স্ল্যাং ছিল। সেটা হিট। তাই ওঁর ধারণা ছিল ও রকম স্ল্যাং রাখতে পারলেই তাঁর ছবিটিও হিট করবে। তাঁর একটাই দাবি ‘A’ রেটিং দিয়ে সেন্সর সার্টিফিকেট। বাকিটা তিনি নাকি বুঝে নেবেন।”
অতসী কাজটা করেননি। তবে সে প্রযোজক শেষ পর্যন্ত কী করেছিলেন, কাকে ধরেছিলেন, তার হিসেব কেউ রাখেনি।
৮০-৯০টা ছবির সেন্সর করিয়েছেন হরি প্রতাপ সিংহ। বলছেন, “আমি ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের অফিসে কাজ করি। ওঁদের সব ছবির সেন্সর আমার হাত দিয়ে। বাইরের কোনও কাজ করার সময় আমার নেই। মুম্বইয়ের তুলনায় আমাদের এখানে কোনও দুর্নীতি নেই। মুম্বইতে তো শুনেছি প্রত্যেক ধাপে ধাপে লোকে ঘুষ নেয়। এমনকী ছবি করানোর জন্যই ঘুষ নেওয়ার চল রয়েছে সেখানে!”
কলকাতার সেন্সর অফিসে নাকি এত কড়াকড়ি যে সেখানে সেন্সর স্ক্রিপ্টরাইটিংয়ের সময় কোনও দুর্নীতি করাটাও অসম্ভব। সেন্সর স্ক্রিপ্টরাইটার রতন দাস লিখেছেন ২০০-টা সেন্সর চিত্রনাট্য। বলছেন, “মুম্বইতে শুনেছি অত কড়াকড়ি নেই। কিন্তু কলকাতায় সব কিছুই ডিটেলে লিখতে হয়। টাকার বিনিময়ে এখানে ছবির কাট ঠিক হয় না। তা ছাড়া আমাদের একটা আইডিয়াও হয়ে গিয়েছে এত দিন পরে। আমরা জানি যে কী ধরনের দৃশ্য থাকলে কী রেটিং হতে পারে।”
তবু তো রেটিং নিয়ে জলঘোলা হয়! এক দলের অভিযোগ যে কিছু পরিচালক-প্রযোজকের সাত খুন মাফ হয় এখানে। কিন্তু প্রযোজক যদি প্রভাবশালী না হন সেখানে চাই ‘বিপ’, দরকার ‘ব্লার’। ট্রেলর সেন্সরশিপ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। ‘ফড়িং’ ছবিটার থিয়েট্রিকাল ট্রেলরে একটা অন্তর্বাসের দৃশ্য রয়েছে। তা দেখিয়ে একটি বাচ্চা ছেলে তার সহপাঠীকে বলে, “শুঁকে দ্যাখ, পাগলা।” আর এ দৃশ্য থাকা সত্ত্বেও ট্রেলরে U/A সার্টিফিকেশন। টলিউডের এক সংখ্যক পরিচালক আজও প্রশ্ন তোলেন ‘ফড়িং’য়ের ‘প্যান্টি’ কেন কাটা পড়েনি সেন্সরের কাঁচিতে!
সেন্সর বোর্ডের প্রাক্তন অ্যাডভাইস কমিটির মেম্বার হরনাথ চক্রবর্তী বলছেন, “এই ট্রেলারটা পাস করার সময় আমি ছিলাম না। থাকলে A সার্টিফিকেট দিতাম। না হলে কাঁচি চালিয়ে U দিতাম।” কিন্তু পরবর্তী কালে যদি এই উদাহরণ দেখিয়ে অন্যান্য ট্রেলর একই রেটিং চেয়ে বসে? “ওটা অন্য একটা কমিটি ছেড়েছিল। এটা রেফারেন্স ধরা হবে না। পরবর্তী কালে আমি নিজে মেম্বারদের বলেছিলাম যাতে এই রকম আর না হয়,” উত্তর দিচ্ছেন হরনাথ।
আরও অভিযোগ আছে। এমন গুজবও কানে আসে যে ‘কাট’ সমেত সেন্সরে ডিভিডিটা জমা দেওয়ার পরেও থিয়েটারে আনকাট ভার্সান দেখানো হয়। যেহেতু সেন্সরের বিশাল লোকবল নেই তাই তা ধরা পড়ে না। তবে হরনাথ এই অভিযোগ মানাত নারাজ। তিনি বলছেন, “এমন কেউ করলে তাঁর জেল হবে। আমি থাকাকালীন এই রকম কিছু হয়নি।”
এমনও শোনা যায় যে, আজকাল নাকি তামিল-তেলেগু রিমেক ছবির ক্ষেত্রে অরিজিনাল ফিল্মের সার্টিফিকেটটাকেই ব্যবহার করার অনুরোধ এসে থাকে! দক্ষিণী ছবিতে ভায়োলেন্স বেশি। এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেই ভায়োলেন্ট ছবিও চেন্নাইতে U সার্টিফিকেট পেয়ে থাকে। “একবার একটা রিমেক ছবির ক্ষেত্রে আমাদের বলা হয়েছিল যেহেতু বাংলা ছবিটা একদম শট-টু-শট কপি, সেন্সর সার্টিফিকেটটাও তাই দক্ষিণী ছবির মতো হওয়া উচিত। অর্থাত্ ভায়োলেন্স থাকলেও তাতে যেন A না দেওয়া হয় কারণ দক্ষিণী ছবির সার্টিফিকেশনে A ছিল না। আমি তখন হাসতে হাসতে উত্তর দিয়েছিলাম যদি সার্টিফিকেটটা ওখান থেকেই নিতে হয়, তা হলে দর্শকও দক্ষিণ ভারত থেকেই আনা উচিত,” বলছেন প্রভাত রায়।
এই বছর আরও একটা ইউনিক ঘটনা হয়েছে সেন্সরে। সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘শেষের কবিতা’ ছবিটা শুরু হচ্ছে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়-রাহুল বসুর চুম্বন দৃশ্য দিয়ে। আনকাট U পেয়েছে ছবিটা। প্রায় ১০ সেকেন্ডের চুম্বন দৃশ্য। এর আগেও বাংলা ছবি চুম্বন দৃশ্যসমেত আনকাট U পেয়েছে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হল কিছু দিন আগে মুম্বইতে ওম পুরি আর হেলেন মিলারের অভিনীত ‘দ্য হান্ড্রেড ফুট জার্নি’ ছবিটাকে U সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য ছেঁটে ফেলতে হয়েছে এক চুম্বনদৃশ্য। বলা হয়েছিল চুম্বন থাকলেই A রেটিং হবে!
সেন্সর বোর্ডের কিছু সদস্য চেয়েছিলেন ‘শেষের কবিতা’র চুম্বন দৃশ্যের দৈর্ঘ্য কমাতে। কিন্তু তা হয়নি। কোনও কাটও লাগেনি। সেন্সর বোর্ডের সদস্য অমল ঘোষ বলেছিলেন ‘জাপানি তেল’-এর বিজ্ঞাপন যদি টেলিভিশনে সম্প্রচার হতে পারে, তা হলে স্বস্তিকা- রাহুলের চুম্বন দৃশ্যে আপত্তি থাকবে কেন?
মুম্বইতে কাঁচি কিন্তু কলকাতায় রক্ষাকবচ এই নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে? “ছবিটা শুরু হয়েছে লন্ডনের এই শটটা দিয়েই। পাশ্চাত্য পরিবেশ। খুব নান্দনিক একটা শট। কোনও লাস্য নেই সেখানে। ভেবেচিন্তেই আমরা এখানে কোনও কাট করিনি। সুমন আমাকে বলেছিল যে এই প্রথম ওর কোনও ছবি আনকাট U পেয়েছে। যে কোনও ছবি নিয়ে যাই ডিসিশন হোক না কেন, এটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হয় যে আমাদের কেউ প্রশ্ন করলে তার উত্তরটা যেন আমরা সঠিক ভাবে দিতে পারি,” জানান অমল। আরও বলছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘C/O স্যর’য়ে রাইমা সেনের একটা খোলা পিঠের দৃশ্য থাকা সত্ত্বেও ফিল্মটাকে আনকাট U দেওয়া হয়েছিল। “দৃশ্যটা খুব নান্দনিক ছিল। আজ পর্যন্ত কেউ এটা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি। অনেক ক্ষেত্রে চেষ্টা থাকে যাতে সিগারেট বা অ্যালকোহল ব্র্যান্ডটা প্রোমোট হয়ে যায় ছবিতে। কিন্তু ও রকম কিছু থাকলেই আমরা ‘ব্লার’ করে দিতে বলি। এখানে সেন্সর বোর্ডের মেম্বারকে ইনফ্লুয়েন্স করাটা অসম্ভব।”
পশুপাখি নিয়ে শ্যুটিং থাকলে ছাড়পত্র পাওয়ার বিড়ম্বনা থেকেই যায়। “অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড-এর অদ্ভুত সব নিয়ম রয়েছে। আমাকে তো একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ছবিতে যে সব ইঁদুর ব্যবহার করেছিলাম, সেগুলো স্ত্রীলিঙ্গ না পুংলিঙ্গ!” বলছেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
তবে সিবিএফসি নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও অনেকেই মানছেন যে আজকাল শত ঝামেলার মধ্যেও বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপও নিয়েছে বোর্ড। আলোচনা করে এমন ভাবে কেটেছেঁটে এখানে ছবিকে সার্টিফাই করা হয়েছে যাতে সিনেমার মুক্তির পরে আইনের কোনও ঝামেলায় না পড়েন পরিচালক। যেমনটা হয়েছে অমিতাভ চক্রবর্তীর ‘কসমিক সেক্স’-এর ক্ষেত্রে। দেহতত্ত্বের ওপর ছবিতে রয়েছে ফুল ফ্রন্টাল ন্যুডিটি। দীর্ঘ ছ’ ঘণ্টা ধরে ফিল্মটা দেখে দেওয়া হয় ৩১টা কাট। সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য কম্প্যুটারের সাহায্যে সম্পূর্ণ নগ্ন নায়িকার লজ্জা ঢেকে দেন পরিচালক। অভিনেত্রী ঋ-য়ের বুকের আর যৌনাঙ্গের ওপর কালো কালো বড় প্যাচ দিয়ে ‘কসমিক সেক্স’ ছবির মেরামত করেন তিনি। এর ফল? ‘A’ সার্টিফিকেট। এমন সার্টিফিকেশনের নজির এ দেশে আছে কিনা জানা নেই। তবে এই ছাড়পত্র দিয়েই নভেম্বর নাগাদ ছবিটা মুক্তি পাবে প্রেক্ষাগৃহে। আর ছবির আনকাট ভার্সান মুক্তি পাবে ইন্টারনেটে। সেন্সর কাঁচির কোপ ছাড়াই ‘পে পার ভিউ’ পদ্ধতিতে দেখা যাবে সেখানে।
হাসির ছলে পরিচালক বলছেন যে, “মা-মাসিদের জন্য ঢেকেঢুকে ছবি রেডি। আর বাকিদের জন্য সব কিছুই রয়েছে! তবে সিবিএসসি-কে সব সময় দোষ দেওয়া উচিত নয়। সমস্যাটা বোর্ড মেম্বারদের নিয়ে নয়। আমাদের ভণ্ড সমাজকে নিয়ে। স্পর্শকাতর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনদের নিয়ে। যারা সামান্যতম অজুহাতেও ঝামেলা তৈরি করতে পিছপা হয় না।”
যৌনতা নিয়ে গাঁধীজির অনেক লেখা থাকলেও তাঁর এ সংক্রান্ত কোনও মতামতই সেন্সর্ড ‘কসমিক সেক্স’ ছবিতে রাখা যায়নি। পরিচালকের মতে, “হরনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে অনেক আলোচনা করে তার পর আমরা ওই দৃশ্যগুলো ফেলে দিই। সেন্সর সাহসী হয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দিলেও ছবি মুক্তির পরে গণ্ডগোল হলে তার হ্যাপা প্রযোজক আর পরিচালককেই সামলাতে হয়। সমাজ না পাল্টালে সেন্সর বোর্ড একলা সাহস দেখিয়ে কী করবে?”
যত দোষ সেন্সর বোর্ড বলে আর লাভ নেই। তাদের ত্রুটি নেই তা নয়। তবে গলদটা হয়তো কিছুটা রয়েছে দর্শকের দৃষ্টির মধ্যেই।