ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম। কিন্তু ছোট থেকেই টোটা রায়চৌধুরীর মনে অভিনয়ের ইচ্ছে জেগে ওঠে। ১৯৯৩ সালে প্রভাত রায় পরিচালিত ‘দুরন্ত প্রেম’ ছবির মাধ্যমে টলিউডে অভিষেক হয় টোটার। একে একে ‘লাঠি’, ‘রণক্ষেত্র’, ‘শুধু একবার বলো’, ‘দাদাঠাকুর’ ছবিতে অভিনয় করে ইন্ডাস্ট্রিতে পায়ের নীচের জমি শক্ত করেন টোটা।
নব্বই দশকে ‘দেবাঞ্জলি’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী ও দেবশ্রী রায়। ছবিতে একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন টোটা। তাঁর বিপরীতে ছিলেন রানি মুখোপাধ্যায়। তার আগে অবশ্য রানির কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘বিয়ের ফুল’ মুক্তি পায়। টোটা বললেন, “কিছু দিন আগে মুম্বইয়ে একটি পুরস্কার বিররণী অনুষ্ঠানে রানির সঙ্গে আমার দেখা। প্রথমেই তিনি আমাদের ওই গানটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। উনি যে এখনও সেটা মনে রেখেছেন, জেনে খুব অবাক হই।’’
টলিপাড়ায় টোটার ফিটনেস সব সময়েই চর্চায়। খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রিত। অভিনেতা মনে করেন, শরীরের যত্ন নিলে, শরীরও তাঁকে পরবির্তে অনেক কিছু ফিরিয়ে দেয়। ক্যারাটেতে ব্ল্যাক বেল্ট তাঁকে পরবর্তী সময়ে অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে সাহায্য করেছে। তার পাশাপাশি নাচেও সমান পারদর্শী টোটা।
মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি টোটা অন্যধারার ছবিতেও সমান দক্ষতার সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ টোটার কেরিয়ারের গতিপথ বদলে দেন। পরিচালকের ‘শুভ মহরৎ’, ‘চোখের বালি’, ‘দোসর’ প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেন টোটা। তবে ‘চোখের বালি’ ছবিতে বিহারী চরিত্রটি তাঁকে জাতীয় পরিচিতি এনে দেয়।
বলিউডে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন টোটা। সুজয় ঘোষ পরিচালিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ‘অহল্যা’য় টোটার অভিনয় প্রশংসিত হয়। একে একে ‘তিন’, ‘কহানি ২’, ‘ইন্দু সরকার’, ‘হেলিকপ্টার ইলা’, ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’ ছবিগুলিতে নানা ধরনের চরিত্রে দর্শকের মন জয় করেছেন তিনি।
তবে টোটার কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় হিন্দি ছবিটি হল ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’। কর্ণ জোহর পরিচালিত এই ছবিতে তিনি একজন কত্থক নৃত্যশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে রণবীর সিংহ, আলিয়া ভট্টদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টোটার অভিনয় বলিউডে তাঁর কেরিয়ারকে আগামী দিনে আরও সহজ করে দিতে পারে বলেই অনুরাগীদের অনুমান। কর্ণের সঙ্গেও যে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন টোটা।
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন টোটা। ‘তারানাথ তান্ত্রিক’-এর চরিত্রে তাঁকে দেখেছেন দর্শক। তবে ২০১৯ সালে ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিক টোটাকে ছোট পর্দায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে দেয়। তাঁর অভিনীত রোহিত সেন চরিত্রটি এখনও মনে রেখেছেন দর্শক।
টোটার কেরিয়ারের মুকুটে অন্যতম উল্লেখযোগ্য পালক ফেলুদা। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত সিরিজ়ে ফেলুদা হিসেবে টোটার নামে সাময়িক ভাবে সমালোচনা দেখা দেয়। কিন্তু, ফেলুদা চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। তর্কসাপেক্ষে সত্যজিতের করা ফেলুদার স্কেচের সঙ্গে টোটার সাদৃশ্য সবচেয়ে বেশি।
চলতি বছরে জন্মদিনটা পরিবারের সঙ্গেই কাটাবেন টোটা। গত কয়েক দিন তিনি মুম্বইয়ে নতুন কাজের ওয়ার্কশপে ব্যস্ত ছিলেন। জানালেন, জন্মদিন পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন বলেই শহরে ফিরেছেন তিনি।
প্রত্যেক দিনের মতোই জন্মদিনের সকালেও শরীরচর্চা করবেন টোটা। তার পর কিছু ক্ষণ পুজো করবেন তিনি। তার পর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন অভিনেতা। টোটা বললেন, ‘‘মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে প্রণাম করি। তার পর মায়ের হাতের রান্না করা পায়েস খাই।’’
প্রত্যেক বছর জন্মদিনে স্ত্রী শর্মিলির সঙ্গে সিনেমা দেখার চেষ্টা করেন টোটা। এ বারেও তার অন্যথা হবে না। অভিনেতার কথায়, ‘‘বিকেলে বাবা-মা ও ভাইয়ের পরিবার নিয়ে কেক কাটব। সকলে মিলে একটু খাওয়াদাওয়া হবে।’’
জন্মদিন কাটিয়েই আবার মুম্বই ফিরে যাবেন টোটা। চলতি বছরে টোটার বেশ কিছু বাংলা ও হিন্দি কাজ মুক্তির অপেক্ষায়। তার মধ্যে ‘স্পেশ্যাল অপ্স ২’, ‘শপথ ২’, ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’, ‘নিখোঁজ ২’ অন্যতম।