(বাঁ দিকে) ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’ এবং ‘দশম অবতার’ (ডান দিকে) দুই ছবিতেই খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর বক্স অফিসে চারটি বাংলা ছবি রমরমিয়ে ব্যবসা করছে। তার মধ্যে অনির্বাণ ভট্টাচার্য বড় পর্দা এবং ওটিটিতে হাজির হয়েছেন। এক দিকে ‘দশম অবতার’, অন্য দিকে রয়েছে ওয়েব সিরিজ় ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’। তবে টলিপাড়ায় আরও এক জন রয়েছেন যিনি পুজো, থুড়ি দশেরার মরসুমে দু’টি আলাদা ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় হাজির হয়েছেন— যিশু সেনগুপ্ত।
পুজোয় বাংলায় মুক্তি পেয়েছে যিশু অভিনীত ‘দশম অবতার’। অন্য দিকে, দেশ জুড়ে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত দক্ষিণী ছবি ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’। উল্লেখ্য, উভয় ছবিতেই তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘দশম...’ নিয়ে বাঙালি দর্শকের উন্মাদনা থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতেও যিশু নিজের পৃথক অনুরাগী বৃত্ত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই ‘টাইগার...’ নিয়ে দক্ষিণেও শুরু থেকেই দর্শকদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। দুটি ছবিতেই অভিনেতা ভিন্ন অবতারে ধরা দিয়েছেন। কিন্তু অভিনেতার কোন ‘অবতার’ এগিয়ে থাকল?
চোখে তার মায়া ছিল, মুখ তার স্নেহ
সৃজিতের ছবিতে তারকার ভিড়। পাশাপাশি থ্রিলারের আবহে পরিচালকের টান টান চিত্রনাট্য ছবিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো ডাকসাইটে দুই পুলিশ অফিসারের বিপরীতে পরিচালক হয়তো বুদ্ধি করেই এক জন শান্ত অথচ বুদ্ধিদীপ্ত খলনায়ককে চেয়েছিলেন। সেই চরিত্রে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন যিশু। গল্পে বিষ্ণুর দশাবতারকে মাথায় রেখে একের পর এক খুন। খুনের পর খুনি আবার সূত্র রেখে যায়। রহস্যের সমাধান করতে নাস্তানাবুদ হতে হয় প্রবীর রায়চৌধুরী এবং বিজয় পোদ্দার জুটিকে। এক মাথা চুল, চোখে চশমা নিয়ে চরিত্রটি শান্ত অথচ প্রখর বুদ্ধির অধিকারী। বলা যায়, কচ্ছপের গতিতেই রেসে এগিয়ে গিয়েছে বিশ্বরূপ (ছবিতে যিশুর চরিত্র)। অপরাধ করেও ছবির শেষে চরিত্রটি দর্শকের সহানুভূতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
‘দশম অবতার’ ছবিতে যিশুর লুক। ছবি: সংগৃহীত।
চোখে তার পাথর ছিল, মুখে গভীর ক্ষত
‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’ দক্ষিণী ছবি। সত্তরের দশকে অন্ধ্রপ্রদেশের এক দুর্ধর্ষ ডাকাতকে ঘিরে বিভিন্ন জনশ্রুতি অবলম্বনে তৈরি। নামভূমিকায় তেলুগু সুপারস্টার রবি তেজা। পর্দায় শুরু থেকে শেষ, তাঁরই উপস্থিতি। সেখানে রয়েছে একাধিক খল চরিত্র, যার মধ্যে যিশু অভিনীত পুলিশ অফিসার মৌলি অন্যতম। প্রায় তিন ঘণ্টার ছবি। কিন্তু ‘দশম...’-এর তুলনায় এই ছবিতে যিশুর উপস্থিতি বেশ কম। ছবির প্রথমার্ধে চরিত্রটির সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তার পর চিত্রনাট্যের খাতিরে মৌলিকে দ্বিতীয়ার্ধের শেষের দিকে ফিরিয়ে আনা হয়।
‘টাইগার...’-এ যিশুর লুক কিন্তু আকর্ষণীয়। তেলা মাথায় সিঁথি কাটা চুল। ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কপাল থেকে গাল পর্যন্ত নেমে এসেছে গভীর ক্ষতচিহ্ন। তবে পর্দায় তাঁকে দেখলে যতটা ভয় লাগবে, সংলাপ বা চিত্রনাট্যে কিন্তু তা ঘটেনি। তুলনায় ‘দশম...’ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।
বিষ্ণু ভার্সেস মৌলি
সৃজিতের ছবিতে বিশ্বরূপ যতটা শান্ত, ভামসি পরিচালিত ‘টাইগার...’-এ মৌলি কিন্তু ততটাই বেপরোয়া স্বভাবের। মহিলাদের অসম্মান করতে তার বাধে না। আবার টাইগারের সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতা মিটিয়ে নিতে প্রতিশোধের রাস্তায় হাঁটতেও সে স্বচ্ছন্দ। তবে এই ছবিতে যিশুর চরিত্রটি পরিচালক প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। অবশ্য শুধু যিশু নন, ছবির একাধিক চরিত্রের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। সব মিলিয়ে ছবি নিয়েও দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ফলে ‘দশম...’-এর মতো ‘টাইগার’-এ যিশুর অভিনয় শেষ পর্যন্ত মনে রেশ রেখে যায় না।