অভিনেতা শাহিদ কপূর। ছবি: সংগৃহীত।
প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলন শেষ। তার পর সাক্ষাৎকার দিতে বসবেন। কিছুটা বিরতি চেয়ে নিলেন শাহিদ কপূর। মঞ্চের তুলনায় টেবিলের বিপরীতে ঘরোয়া মেজাজে তিনি যেন আরও স্বতঃস্ফূর্ত। বুধবার দিল্লির কনোট প্লেসের তারকাখচিত হোটেলে কলকাতার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেলে ধরলেন নিজেকে।
দিল্লিতে জন্ম শাহিদের। শৈশবের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেই শহরে। এনএসডি-তে (ন্যাশানাল স্কুল অফ ড্রামা) তিনি নাসিরউদ্দিন শাহের সঙ্গে ওয়ার্কশপও করেছেন। সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন ঝটিকা সফরে। কলকাতা নিয়ে তাঁর মনে একাধিক সুখস্মৃতি রয়েছে। কথাপ্রসঙ্গেই উঠে এল শাহিদের ক্রিকেট-প্রেম এবং আইপিএল-এ ইডেন গার্ডেন্সে পারফর্ম করার সুখস্মৃতি। শাহিদ বলছিলেন, ‘‘ছোট থেকেই তো ঐতিহাসিক ওই মাঠে খেলা দেখে বড় হয়েছি।’’ নিজে কঠোর ডায়েটে থাকলেও পছন্দ করেন এই শহরের মিষ্টি দই। কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি তাঁর পছন্দের। জানতে চাইলেন শহরে এখনও ট্রাম চলে কি না!
দেশের পূর্ব প্রান্তের এই শহর যে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যন্ত উর্বর, সে কথা বিশ্বাস করেন শাহিদ। কিন্তু কাজের সূত্রে খুব কমই এসেছেন কলকাতায়। অভিনেতার কথায়, “খুব বেশি সময় কাটাতে পারিনি। আমার খুব ইচ্ছে, কোনও ছবির সূত্রে যদি আপনাদের শহরে কয়েকটা দিন কাটাতে পারি, তা হলে ভাল লাগবে।’’
কলকাতা প্রসঙ্গেই শাহিদের কাছে প্রশ্ন ছিল তাঁর ‘কবীর সিংহ’ ছবির সহ-অভিনেতা সোহম মজুমদারকে নিয়ে। কবীর এবং শিবার জুটিকে এখনও মনে রেখেছেন দর্শক। এখনও সোহমের সঙ্গে শাহিদের যোগাযোগ রয়েছে। সোহমকে নিয়েই পুরনো দিনে ফিরে গেলেন অভিনেতা। শাহিদের কথায়, ‘‘প্রথমে ভাবা হয়েছিল মূল ছবির অভিনেতাকেই রাখা হবে। কিন্তু তাঁর হিন্দি ভাল না হওয়ায় সোহম চূড়ান্ত হন।’’ মজার বিষয়, শাহিদ জানালেন, প্রথম দিন ফ্লোরে সোহমও তাঁর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেন— নেপথ্যে সেই হিন্দি। শাহিদের কথায়, ‘‘ও আমাকে সরাসরি বলে দিয়েছিল, ওর হিন্দিও ভাল নয়। আমি যেন একটু সাহায্য করি।’’
‘কবীর সিংহ’ ছবির একটি দৃশ্যে শাহিদ কপূরের সঙ্গে সোহম মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত।
নতুন ছবি ‘দেবা’য় তাঁর চরিত্রটি একজন কড়া পুলিশ আধিকারিকের। অভিনেতা জানালেন, এই ধরনের চরিত্রে তিনি দীর্ঘ বিরতির পরেই অভিনয় করতে পছন্দ করেন। কিন্তু শুটিংয়ের পরেও তাঁর অভিনীত হায়দর, টমি বা কবীরের মতো চরিত্রেরা কি তাঁর মনে কোনও দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে? শাহিদের উত্তর, ‘‘আমি পেশাদার অভিনেতা। তাই চরিত্রকে নিয়ে বাড়ি ফিরি না। তবে এটা ঠিক শুরুর দিকে আমারও একটু অসুবিধা হত।’’ এক সময় শাহিদ বলেছিলেন তাঁর স্ত্রী মীরার কবীরের মতো চরিত্র পছন্দ নয়। এখন তাঁর স্ত্রী কতটা মানিয়ে নিয়েছেন বিষয়টার সঙ্গে? শাহিদ হেসে বললেন, ‘‘মীরা এখন মাঝেমধ্যেই আমাকে অবাক করে বলে, ‘তোমার ছবি দেখে আমি শুধু ভাবি, তুমি এটা কখন করলে।’’’ তবে সময়ের সঙ্গে চরিত্রগুলির সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও যে মানিয়ে নিয়েছেন, সে কথা স্পষ্ট করলেন শাহিদ। একই সঙ্গে পেশা এবং ব্যক্তিজীবনের মধ্যে পাঁচিল তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছেন অভিনেতা। বললেন, ‘‘এখন ও বলে যে ফ্লোরে কোন দৃশ্যে অভিনয় করেছি, সেটা বাড়ি ফিরলে ও বুঝতে পারে না। মীরা বলে, ‘তুমি কোনও আবেগপ্রবণ দৃশ্যে অভিনয় করেছ না কি অন্য কোনও দৃশ্য— আমি সেটা বুঝতেই পারি না।’ আমার তখন খুব গর্ব হয়।’’
ছবি: পিটিআই।
‘দিল তো পাগল হ্যায়’ এবং ‘তাল’ ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার থেকে ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার। ফিরে দেখলে অবাক লাগে শাহিদের। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘একজন অভিনেতা নয়, জীবনের সমস্ত আঙ্গিককে মাথায় রেখেই বলছি, কোথা থেকে শুরু করে আজ কোথায় রয়েছি, সেটা এখনও বিশ্বাস করতে পারি না।’’ সময়ের সঙ্গে সিনেমার দর্শক বদলাচ্ছে। কিন্তু তাঁর ছবির মুক্তির আগে কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রাকে মাথায় রাখতে পছন্দ করেন না শাহিদ। তাঁর সহজ যুক্তি, ‘‘দর্শক সব সময়েই নতুন কিছু দেখতে পছন্দ করেন। ছবিটা দর্শক উপভোগ করবেন কি না, সেটা মাথায় রাখা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।’’
সলমন খান এর পর সইফ আলি খান। সম্প্রতি বলিউড তারকাদের নিরাপত্তার বিষয়টি চর্চিত। এই ছবিতে শাহিদ নিজে একজন পুলিশ আধিকারিকের চরিত্রে। সম্প্রতি ছবির প্রচারেই সইফ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন শাহিদ। তবে এ বার তিনি আরও সাবধানী। ইঙ্গিত বুঝেই উত্তরও এড়িয়ে গেলেন অভিনেতা।