ফেরদৌস আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত।
রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত জাগতে হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকালে তাঁকে এক বারেই ফোনে পাওয়া গেল। প্রথম বার ভোটে লড়ে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ। মনোনয়ন থেকে শুরু করে জয়লাভ— নিজের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন অভিনেতা।
প্রশ্ন: সোমবারের সকালটা নিশ্চয়ই অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা?
ফেরদৌস: (হেসে) অবশ্যই। আজকে ঘুম থেকে দেরি করে উঠেছি। মাথাটা অনেক হালকা লাগছে। কলকাতা থেকে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফেই প্রথম ফোন পেলাম। ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: প্রথম বার ভোটে লড়লেন এবং জিতেও গেলেন। কী বলবেন?
ফেরদৌস: অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচার এবং শেষে জয় পাওয়া। নভেম্বর মাসের শেষ থেকে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে পুরো বিষয়টা ঘটল। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার কাছে পুরো জার্নিটাই নতুন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফেরদৌস আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি যে ‘ঢাকা-১০’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা কেন্দ্র পাবেন, সে কথা কি ভেবেছিলেন?
ফেরদৌস: একদমই নয়। এই আসনটা রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন বলা যায়। তা ছাড়া, এই কেন্দ্রের একটা ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এটা বঙ্গবন্ধুর (শেখ মুজিবুর রহমান) নিজের জায়গা। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আমাকে এই গুরুদায়িত্ব দেবেন, সেটা শুরুতে বুঝতে পারিনি। সেই কেন্দ্রে জয়লাভ করব, সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। তাই মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নিজের সর্বস্ব উজাড় করে চেষ্টা করি। আজ হয়তো তারই প্রতিদান পেলাম।
প্রশ্ন: নির্বাচনী প্রচার আপনার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। নায়ক হিসেবে আপনি দেশের পরিচিত মুখ। তার পরেও কখনও কি মনে হয়েছিল যে, অন্যদের তুলনায় জনসংযোগে পিছিয়ে পড়ছেন?
ফেরদৌস: প্রতিদিন টিমের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতাম, কী ভাবে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি। প্রচারে নেমে প্রতিদিন আমি ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার করে হেঁটেছি। এই এলাকার একটা বড় সমস্যা, মানুষ খুব একটা ভোট দিতে যান না। কিন্তু এ বার সেটা হয়নি। তার কৃতিত্ব আমার এলাকার মেয়র শেখ ফজ়লে নুর তাপসের। ওঁর রাজনৈতিক টিম আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: আপনি প্রায় ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন। বিরোধী প্রতিনিধি মেরেকেটে ২ হাজার ৫০০ ভোট। এই বিপুল ব্যবধানে জয় নিয়ে কী বলবেন?
ফেরদৌস: ভাষায় বলে হয়তো কৃতজ্ঞতা বোঝাতে পারব না। এক কথায় বলতে গেলে, মানুষকে এবং দলের সমস্ত সহকর্মীকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
প্রশ্ন: রবিবার প্রথম যখন জানতে পারলেন যে জয় নিশ্চিত, তখন মনের অবস্থা কী রকম ছিল?
ফেরদৌস: (হেসে) আমি, আমার স্ত্রী, মা এবং দুই মেয়ে এবং টিমের সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডির অফিসেই ছিলাম। বন্ধুরাও ছিল। আমার আসনের অধীনে মোট ১১৯টা কেন্দ্র। একটা করে কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে এবং কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিচ্ছেন। আমাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ওই সময়ের উপলব্ধি ঠিক ভাষায় বোঝাতে পারব না।
প্রশ্ন: আর চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর আপনার নিজের কী মনে হল?
ফেরদৌস: রাত সাড়ে ১১টা কি ১২টার দিকে চূড়ান্ত ঘোষণার পর নিশ্চিন্ত হলাম। মনে হচ্ছিল, যে জার্নিটা শুরু করেছিলাম, সেটা আজকে সফল হল। আমি চেয়ছিলাম, পর্দার নায়ক থেকে জননায়ক হয়ে উঠতে। গলায় একের পর এক ফুলের মালা যখন পরিয়ে দেওয়া হল, তখন বুঝতে পারলাম, আমি একটা বড় দায়িত্বের মধ্যে প্রবেশ করলাম। বুঝতে পারছি, আমার ঢাকা-১০ আসন বলার মধ্যেও একটা আত্মীয়তা রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের জন্য আমি একটা স্লোগান ঠিক করেছিলাম, ‘‘আমাদের ঢাকা-১০ হবে দশে দশ’’। আমাদের ক্যাম্পেনের গানটাও জনপ্রিয় হয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার, এত দিন অভিনেতা হিসেবে মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। কিন্তু এ বার তাঁদের কাছাকাছি গিয়ে যে ভালবাসা পেলাম, সেটা সম্পূর্ণ অন্য রকম। অনেক বেশি আবেগে পরিপূর্ণ। এত দিন আমার ৪-৫ জনের পরিবার ছিল। এখন থেকে আমার পরিবারের সদস্যসংখ্যা ২০ লক্ষ।
নির্বাচনী প্রচারে ফেরদৌস। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: সোমবার সাংসদ হিসেবে প্রথম দিন। কী কী করবেন, ঠিক করেছেন?
ফেরদৌস: জয়ের পর প্রথম দিন। আজকে সে রকম কোনও উদ্যাপন করার ইচ্ছে নেই। ভোটের আগে আমার কেন্দ্রের কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ এবং প্রান্তিক মানুষ বলেছিলেন যে ভোটের আগে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমার থেকে তাঁরা কিছুই চাননি। শুধু অনুরোধ করেছিলেন, জিতলে যেন এক বার গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করি। আমি কথা দিয়েছিলাম, আমি আসব। আজ আমি মিষ্টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আগে দেখা করব। ভোটের প্রচারে আমার কেন্দ্র হোর্ডিং এবং ব্যানারে ভরে উঠেছিল। আজকে সেগুলো খুলে এলাকাটা পরিষ্কার করানোর ইচ্ছে রয়েছে।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে কোনও শুভেচ্ছাবার্তা কি এখনও পেয়েছেন?
ফেরদৌস: এখনও গেজেট হয়নি। আশা করি খুব দ্রুত ওঁর সঙ্গে আমার কথা হবে। তবে আমার কাছে একটা বিষয় খুবই গর্বের যে, তিনি আমার কেন্দ্রের ভোটার। ভোটের দিন সকাল আটটায় তিনি আমাকে প্রথম ভোট দিয়েছেন। এটা আমার কাছে অন্য রকমের একটা প্রাপ্তি। একই সঙ্গে আমাদের কাছের কয়েক জন প্রার্থী ভোটে জয়লাভ করতে পারেননি। যেমন মমতাজ আপা (মানিকগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী সঙ্গীতশিল্পী মমতাজ বেগম)। তাঁদের জন্য আমার মনটা একটু খারাপ।
প্রশ্ন: ভোটে তারকা প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশের নামী ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান এবং মাশরফি মোর্তাজাও জয়লাভ করেছেন। ওঁদের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে?
ফেরদৌস: (হেসে) সবে তো ফলাফল ঘোষণা হল। আমার মনে হয়, আমার মতো ওরাও প্রত্যেকেই ক্লান্ত। গত কয়েক মাস আমি রাতে মাত্র এক ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। ওদের সঙ্গে খুব জলদিই কথা হবে।
প্রশ্ন: গত বার আনন্দবাজার অনলাইনকে আপনি জানিয়েছিলেন যে, প্রয়োজনে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আপনার হয়ে ভোটের প্রচার করতে চান। অভিনেত্রীর তরফে শুভেচ্ছাবার্তা নিশ্চয়ই পেয়েছেন?
ফেরদৌস: (হাসতে হাসতে) গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঋতু আমাকে ফোন করেছিল। ও প্রচণ্ড খুশি। বলল, আমাকে নিয়ে ও গর্বিত। ঋতু আর আমার বন্ধুত্ব দীর্ঘ দিনের। একসঙ্গে বহু ছবিতে অভিনয় করেছি। আমার এই নতুন জার্নিতে ঋতু কিন্তু আমাকে মাঝেমধ্যেই মেসেজ করে খোঁজখবর নিয়েছে।