অনুষ্ঠানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
১৯৯৯ সালে সবুজ পত্র 'সোনার তরী' র শারদ সংখ্যায় একটি ছোট্ট কবিতা দিয়ে যে কবির জয়যাত্রা শুরু, সেই বিশিষ্ট কবি ও কথাশিল্পী রজতশুভ্র মজুমদারের লেখনী জীবন কুড়ি বছরে পদার্পণ করল এই অক্টোবরে। সেই উপলক্ষে রেডবাড মিডিয়ার আয়োজনে ৬ অক্টোবর মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তাঁর ১০টি কবিতার লাইভ সিনেমাটোগ্রাফিক প্রেজেন্টেশন 'তর্পণ Whispering the Memories.'
প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
এ যাবৎ সতেরোটি গ্রন্থের লেখক রজতশুভ্রের কবিতা নিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর হালদার, রূপঙ্কর প্রমুখ শিল্পীদের একক ও যৌথ অ্যালবামের কাজ হয়েছে অজস্র। বস্তুত, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকারের পর আর কোনও কবিরই এত বিপুল সংখ্যক কবিতা নিয়ে এত অডিও, ভিডিও, সিনেমাটোগ্রাফির কাজ হয়নি।
দেশ পত্রিকার নিয়মিত লেখক রজতশুভ্র কবিতার পাশাপাশি গদ্য সাহিত্যেও সমান সফল। তাঁর প্রথম গদ্যগ্রন্থ 'সামান্য লেখা'র ভূমিকাতেই এই সাফল্যের ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন। সানন্দায় প্রকাশিত তাঁর সাম্প্রতিক রোমাঞ্চ-উপন্যাস ‘ভালবাসায় ভোলাব’ চলচ্চিত্রায়িত হতে চলেছে। এমনকি তাঁর ছোটগল্প পাড়ি দিয়েছে বলিউডেও।
আরও পড়ুন: সিনিয়র বচ্চনের এই ছবিগুলি বোধ হয় আগে দেখেননি!
সন্ধ্যায় তাঁর ১০টি কবিতার লাইভ সিনেমাটোগ্রাফিক প্রেজেন্টেশনে কবি ছাড়া আর যে দু’জন তাঁর কবিতাকে কণ্ঠে ধারণ করলেন তাঁদের একজন কিংবদন্তি শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং অপরজন বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী দোয়েল বড়ুয়া। রজতশুভ্র মজুমদারের 'কাদম্বরী' কবিতাকে কথাছবিতে রূপদান করে দোয়েল ইতিমধ্যেই খ্যাতিলাভ করেছেন। তাঁর কণ্ঠ ও নির্দেশনায় আজ 'কথাছবি কাদম্বরী' সারা বিশ্বে সমাদৃত।
এই উৎসব সন্ধ্যায় রজতশুভ্রর কবিতার সঙ্গে রবিঠাকুরের গানে অংশ নিয়ে ভারত বিখ্যাত শিল্পী মোহন সিংহ এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী সেন দর্শকদের মুগ্ধ করলেন।
যাঁর নৃত্য পরিকল্পনা ও অভিনয় পরিচালনায় সাতজন তরুণ নৃত্যশিল্পী মনিকা, সায়নী, শতরুপা, বর্ণালী, মৌসুমী, লিসা ও ঋত্বিক এই কথাছবিগুলোকে জীবন্ত করে তুললেন তিনি প্রখ্যাত নাট্যগুরু ভারতনাট্যম শিল্পী রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয়বার প্রসেনজিতের স্ত্রী হয়ে কেমন লাগল? অপরাজিতা বললেন...
প্রিয়জনেরা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান। কিন্তু এই যাওয়া কি সত্যিই যাওয়া? কবি তো তাঁদের অনায়াসে ফিরিয়ে আনতে পারেন মাটির মায়ায়। নির্জনতায় রচনা করেন অমরত্ব। আমরা তর্পণ করতে বসি প্রিয়জনেদের। পুজোর ঠিক আগে, মহালয়ার প্রাক মুহূর্তে এই থিম নিয়ে রজতের কবিতাগুলোর এমন শিল্পিত পরিবেশন সত্যিই এক অন্য রকমের তর্পণ! কবির কবিতা জীবনের কুড়ি বছরে পদার্পণ মুহূর্তে এই ঐতিহাসিক তর্পণ-এর সাক্ষী থাকল ঐতিহ্যমণ্ডিত মহাজাতি সদনের দর্শক। টিকিট কেটে অনুষ্ঠান দেখতে আসা এত মানুষের সমাগম প্রমাণ করল মহানগর এখনও সংস্কৃতি বিমুখ হয়ে যায়নি। এই তর্পণ আসলে কবিতারই জয়ধ্বজা উড়িয়ে দিল আসন্নপ্রসবা পুজোর আকাশে।