সংগৃহীত চিত্র।
মাধ্যমিক স্তরের কোনও শিক্ষক শিক্ষিকাকে বদলির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করল না সুপ্রিম কোর্ট। আর এতেই আশঙ্কার মেঘ দেখছে শিক্ষক মহলের একাংশ। যদিও ওই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলির।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “এই রায়ে আমরা হতাশ। শীর্ষ আদালত আমাদের কোনও যুক্তি না শুনেই হাই কোর্টের রায় বহাল রাখল। এই রায়ের ফলে সরকার যে কারও উপর প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে বাধ্যতামূলক বদলি নীতি গ্রহণ করতে পারে। এই আশঙ্কায় রয়েছে শিক্ষক মহলের একংশ। আমরা এই রায় পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানিয়ে রিভিউ পিটিশন দায়ের করব।”
গত বছর অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট তার অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলেছিল রাজ্য ২০১৭-র আগে নিযুক্ত স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকাদের আপাতত দূরের জেলায় বদলি করা যাবে না। আর বৃহস্পতিবার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মামলা খারিজ করে বিচারপতি জেকে মহেশ্বরী ও বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের বেঞ্চ রাজ্য সরকারের হাতে যত্রতত্র বদলির ক্ষমতা ফিরিয়ে দিল। শিক্ষক মহলের একাংশ মনে করছেন, হাইকোর্টের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত ছিল। এই রায়ের পর ঘুরপথে সরকারকে সাহায্য করল।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “দু’একটা শিক্ষক সংগঠন ও মঞ্চ পেশি দেখিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের একরকম ট্র্যাপে ফেলে আদালতে নিয়ে যায় এবং প্রায় দায়িত্ব নিয়ে হারিয়ে দেয়। তার মূল কারণ ওই সংগঠন ও মঞ্চ ঘুরপথে সরকারের সহযোগী।”
শিক্ষকদের যাতে সুরাহা হয় এবং বদলি করা হলেও নিজের জেলায় একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে করা হয়— এই দাবি নিয়ে রায়ের পরেই বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফ থেকে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়টিতে সাড়া দেবে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সারপ্লাস ট্রান্সফারের আওতায় দূর দূরান্তে বদলির বিরুদ্ধে রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারী সমিতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন আইনে ২০১৭ সালে ১০-সি নতুন ধারা যোগ করে স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করে দেওয়ার রাস্তা খোলা হয়েছে। ২০১৭ আগের যাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদেরও বদলি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল রাজ্যের ২০১৭ সালের আগে নিযুক্ত স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দূরের জেলায় বদলি করা যাবে না। প্রয়োজনে সারপ্লাস শিক্ষকদের কাছাকাছি স্কুল বা জেলার মধ্যে বদলি করা যাবে। তবে যাঁদের ইতিমধ্যে বদলি করা হয়েছে তাঁদের শীর্ষ আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছিল যারা ২০১৭ সালের পরে নিযুক্ত হয়েছেন এমন শিক্ষক শিক্ষিকাদের রাজ্য সরকার যত্রতত্র বদলি করতে পারবে।
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যাণ্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “অর্ডার কপি এখনও ওয়েবসাইটে আপলোড হয়নি, তা না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এই রায় হতাশাজনক।”
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল শিক্ষকদের সংগঠন কেন মামলা করছে। কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার অসুবিধা থাকলে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে মামলা করতে পারেন। জোটবদ্ধ হয়ে কেন মামলা দায়ের করা হয়েছে। সমিতির আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, ২০১৭ নতুন নিয়ম যোগ হওয়ার আগে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন তাঁদের নিয়োগকর্তা ছিল স্কুল পরিচালন কমিটি। তাঁদের নিয়োগপত্রে কোথাও বদলির উল্লেখ ছিল না। কিন্তু শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তোলে, পরিচালন কমিটির বদলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নিয়োগকর্তা হলে তা নিয়ে তো শিক্ষকদের কোনও আপত্তি থাকার অধিকার নেই।