মমতার সভা ঘিরে উৎসাহ মোহনপুরে

উদ্দেশ্য রাজনৈতিক, নিতান্তই ‘ভোটের লাগিয়া’ মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। কিন্তু তাতে কি আবেগ কমে যায়? বিশেষত, যখন এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রীর পা পড়ছে গ্রামের মাটিতে। তাই সাজ সাজ রব মোহনপুরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মোহনপুর শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০০:২২
Share:

উদ্দেশ্য রাজনৈতিক, নিতান্তই ‘ভোটের লাগিয়া’ মুখ্যমন্ত্রী আসছেন। কিন্তু তাতে কি আবেগ কমে যায়? বিশেষত, যখন এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রীর পা পড়ছে গ্রামের মাটিতে। তাই সাজ সাজ রব মোহনপুরে।

Advertisement

২০১১সালের পরিবর্তন ঝড়েও দাঁতন বিধানসভা তৃণমূলের হাতে আসেনি। ১৯৮২ সাল থেকেই তা সিপিআইয়ের দখলে। গতবার দাঁতন-২ ব্লকের জেনকাপুরে সভা করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তারপর এ বার আবার সেই দাঁতনেই সভা করতে চলেছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০০১ ও ২০০৬ সালে পুরনো দাঁতন কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন যে বিক্রম প্রধান, তিনিই এ বার নতুন দাঁতন কেন্দ্রের প্রার্থী। কিন্তু দলের ভিতরেই ক্ষোভ রয়েছে তাঁকে নিয়ে। বিরোধীরাও সুর চড়াচ্ছে ‘বহিরাগত’ বলে। দলের ভিতরের ক্ষোভ সামাল দিতে মোহনপুরকেই সভাকেন্দ্র হিসাবে বাছা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টায় বাগদা এলাকায় পেট্রোল পাম্পের পেছনের মাঠে ওই সভা হওয়ার কথা।

Advertisement

শাসক ও বিরোধী সব দলের নেতারাই স্বীকার করছেন, স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী মোহনপুরের মাটিতে পা রাখছেন। ১৯৬৩ সালে বাংলা কংগ্রেসের নেতা অজয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য মোহনপুরে একটি জনসভা করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী হন। আরও পরে ১৯৯২ সালে দাঁতন, মোহনপুর ও এগরার কিছু এলাকা টর্নেডোয় বিপর্যস্ত হওয়ার পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু হেলিকপ্টারে দাঁতনের সাবড়া পিং গ্রামে নেমে সারতা ও জানাদিঘি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় হেলিকপ্টারেই মোহনপুরের উপর দিয়ে যান এগরার বাগমারি অরুয়া এলাকায়। কিন্তু পা পড়েনি মোহনপুরের মাটিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা তা নিয়ে আজও অভিমানী। এখনও অনেকেই বলেন, ‘‘সে দিন মোহনপুরের বারুইপাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’’

ওড়িশা সীমান্তের মোহনপুর ব্লকে এর আগে কখনও আসেননি মমতা। খোলা মাঠে তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। দৈর্ঘ্যে ৩০ ফুট আর চওড়ায় ২৪ ফুটের মঞ্চ বাঁধার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে বুধবার রাতেই। কিন্তু প্রকৃতি যদি বিরূপ হয়, হেলিকপ্টার যদি না-উড়তে পারে তবে সভা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নেতারা। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘তেমন হলে হয়তো সভা বাতিল করতে হতে পারে।’’

তবে তৃণমূল নেতারা যাই বলুন না কেন, মুখ্যমন্ত্রী আসছেন নিতান্ত রাজনৈতিক কারণেই, মনে করছে দলের একাংশ। তৃণমূল প্রার্থী বিক্রম প্রধান আদতে এই বিধানসভা কেন্দ্রের বাইরের বাসিন্দা। বিরোধীরা তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলেই রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে। গতবার এই কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী শৈবাল গিরি ছিলেন দাঁতন-২ ব্লকের বাসিন্দা। বিদায়ী বিধায়ক সিপিআইয়ের অরুণ মহাপাত্র মোহনপুর ব্লকেরই সাউটিয়ার বাসিন্দা। এ বারের সিপিআই প্রার্থী শিশির কুমার পাত্র এবং বিজেপি প্রার্থী শক্তিপদ নায়কও দাঁতন-২ ব্লকেরই বাসিন্দা। ফলে বহিরাগত প্রশ্নে বিরোধীদের মোকাবিলা করতে মুখ্যমন্ত্রীর সভাকেই বেছে নিয়েছে দল। মোহনপুরের মাটিতে প্রথম মুখ্যমন্ত্রী এলেন, এমন প্রচার করেও ভোটারদের সহানুভূতি কুড়োতে চাইছে তৃণমূল।

তবে উৎসাহের অন্ত নেই স্থানীয় বাসিন্দাদের। সে কথাই স্পষ্ট হয়ে গেল পনুয়া গ্রামের কার্তিকচন্দ্র পাত্র ও বোড়াই গ্রামের নটবর ভুঁইয়ার মতো বৃদ্ধের বক্তব্যে। তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে ৮-১০ কিলোমিটার পথ তাঁরা ঠিক চলে যেতে পারবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement