বৃষ্টি মাথায়। খড়্গপুরে দলীয় পদযাত্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার।
চিকিৎসকের অভাবে ২০০৯ সাল থেকে সাত বছরেও চালু করা যায়নি খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিট। পরিকাঠামো ছাড়াই তড়িঘড়ি ভোটের আগে গত জানুয়ারি মাসে চালু করা হয়েছে ট্রমা সেন্টার। আইসিইউ ছাড়াই কোনওমতে খুঁড়িয়ে চলছে এই ইউনিট। আসেনি পর্যাপ্ত চিকিৎসকও। যদিও আগেই খড়্গপুরে ট্রমা সেন্টার করে দিয়েছেন বলে দাবি করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার খড়্গপুর শহরের মালঞ্চর সুপার মার্কেট এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পাঁচ ৫ কিলোমিটার পথে দলীয় পদযাত্রায় হাঁটেন মমতা। কেন মিছিল? বাসস্ট্যান্ডে এক পথসভায় তার ব্যাখ্যাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘‘খড়্গপুরে হয়তো সভা করতে পারতাম। কিন্তু আমি ভাবলাম মিছিল করলে অনেকের সঙ্গে দেখা হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাস্তার দু’ধারে মা-বোন-ভাইরা দাঁড়িয়েছিল। খুব ভাল লাগল। সকলে ভিজে গিয়েছে। আমিও ভিজে গিয়েছি। কিন্তু দেখুন কত শান্তি পাওয়া গেল।’’
এ দিন মমতা বলেন, “আমরা এখানে স্টেডিয়াম তৈরি করছি। একটা শিল্পতালুক করেছি। খড়্গপুরে আগেই ট্রমা সেন্টার করে দিয়েছি। আরও অনেক কাজ করে দেব। আস্থা রাখুন।” তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘খড়্গপুর খুব বঞ্চিত আমি জানি। এখানকার ৯০ ভাগ জমি রেলের। একটা ভাল কাজ করতে গেলেও জমি পাওয়া যায় না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আমি খড়্গপুরে অনেক প্রকল্প করেছিলাম। এখানে আমাদের পুরসভা আরও অনেক কাজ করবে।’’ যদিও বিরোধীদের দাবি, বাম আমলে খড়্গপুরের রূপনারায়ণপুরে বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যদিও সেই জমির অধিকাংশই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কাজ পায়নি অধিকাংশ জমিদাতাও।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা খড়্গপুর সদর কেন্দ্রের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘‘উনি নিজে শিলান্যাস করছেন। আর বিগত দিনে কাজ হয়ে যাওয়া প্রকল্পের ফের উদ্বোধন করে নিজের বলে দেখাচ্ছেন। মানুষকে এ ভাবে বোকা বানানো যাবে না। বিষয়টি নিয়ে সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, ‘‘শিল্পতালুক গড়েছে বাম সরকার। এই সরকার আসার পরে শুধু কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। কারখানার জায়গায় ওঁরা স্টেডিয়াম বানাচ্ছে। ট্রমা ইউনিটের পরিকল্পনাও আমাদের সময়ই হয়। মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রতারণা করছেন।’’ খড়্গপুর পুরসভার বিরোধী দলনেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডেরও বক্তব্য, ‘‘ট্রমা ইউনিট বাম আমলের প্রকল্প। কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার ওই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করে। আমি যতটুকু জানি, ট্রমা সেন্টার এখনও চালু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে ভুল বোঝাতে পারবেন না।’’
এ দিন প্রথমে ঠিক ছিল, বাঁকুড়ার তালড্যাংরার সভা শেষে হেলিকপ্টারেই তিনি খড়্গপুরে আসবেন। যদিও আবহাওয়া খারাপ থাকায় তিনি সড়কপথে আসেন। ফলে পদযাত্রা শুরু হতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। বিকেল ৪টের বদলে সাড়ে ৫টা নাগাদ শুরু হয় পদযাত্রা। গোলবাজার এলাকায় মিছিল পৌঁছলে শুরু হয় বৃষ্টি। যদিও তাতেও দমেননি তিনি। আরও এক কিলোমিটার পথ বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটেন মমতা।
খড়্গপুরের ন’বারের বিধায়ক এ বারেও প্রার্থী জ্ঞানসিংহ সোহন পাল সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘চাচাকে আপনারা এত বছর ভোট দিয়েছেন। চাচাকে আমি সম্মান করি। তবে চাচা এখন আর কাজ করতে পারবেন না।’’ বিজেপিকে বিঁধে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে একটিও ভোট দেবেন না। ওঁরা ভয় দেখাচ্ছে। ওঁরা বিহারেও ভয় দেখিয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁরা দেশ ভাগ করে। বাংলাকেও ভাগ করতে চাইছে। আর শুধু বলছে সিবিআই করে দেব। ওঁরা এ সব বলে, কারণ ওঁরা ভয় পেয়েছে।’’
বিজেপির পাশাপাশি সিপিএম ও কংগ্রেসেরও সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি যতই চক্রান্ত করে ছবি তোলো, কিছু হবে না।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস অনেক মুখ পুড়িয়েছ। বিজেপি আর কথা বল না। তোমরা সব সাধু হয়ে গিয়েছ। তৃণমূল মানুষের কথা বলে, তাই তাদের চোর বানানোর চেষ্টা করছ। তৃণমূল মরলেও মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।’’