নারদ-কাণ্ডের বিতর্কিত ফুটেজ কেন্দ্রীয় কোনও তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে ম্যাথু স্যামুয়েলের আর্জি বিবেচনা করবে কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর বলেন, ‘‘এটা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।’’ প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, সোমবার তিনি এ নিয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ দেবেন।
এই মামলা নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘জনসাধারণের আস্থা ফেরানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আদালত চায়, সত্য উদ্ঘাটিত হোক।’’
ভোটের মুখে নারদ স্টিং অপারেশনে উঠে এসেছে তৃণমূলের মন্ত্রী ও নেতাদের টাকা নেওয়ার ছবি। এই নিয়ে গোটা রাজ্য তোলপাড়। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে চরম অস্বস্তিতে শাসক দল।
এই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া তিনটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে নারদ নিউজের কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলকে স্টিং অপারেশনের পুরো ভিডিও ফুটেজ এবং যন্ত্রটি (ডিভাইস) ২২ মার্চ আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি, স্টিং অপারেশনের ফুটেজের সত্যতা, কবে কখন ওই ফুটেজ তোলা হয়েছে— তা হলফনামা দিয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আদালতে জমা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
এ দিন দুপুর ২টোয় মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। ম্যাথুর আইনজীবী তথা রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর মক্কেলের উপর যথেষ্ট হুমকি রয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন। আদালত নির্দেশ দিলে তাঁর মক্কেল সিবিআইয়ের হাতে ওই ফুটেজ তুলে দিতে পারেন। মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্টিং অপারশেনের ফুটেজ খাঁটি কি না, তা কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিক আদালত। রাজ্য সরকারেরও তো উচিত ছিল, ওই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করে নেওয়া। রাজ্য তা করেনি।’’
এর বিরোধিতা করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র জানান, ম্যাথু হলফনামায় বলেছেন, তাঁর নিজের ও ভিডিও ফুটেজের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি রয়েছে। তাই তিনি আদালতে হাজির হয়ে ফুটেজ দিতে পারছেন না। কেন তাঁর নিজের ও ফুটেজের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি রয়েছে, তা বিস্তারিত জানাননি তিনি। তা ছাড়া, আদালত গত ২২ মার্চ ম্যাথুকে যা যা নির্দেশ দিয়েছিল, তার অধিকাংশই তিনি মানেননি। আদালতের নির্দেশ তিনি কেন মানবেন না, সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি এজি বলেন, ‘‘কোন উদ্দেশ্য নিয়ে নারদ সংস্থা খোলা হল, হলফনামায় তা-ও বলা হয়নি।’’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘ওই ফুটেজ কেন্দ্রীয় কোনও সংস্থার কাছে রাখা যায় কি না, এটা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।’’ ওই মন্তব্য শুনে ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় যে কোনও সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলে। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে ফুটেজ গচ্ছিত রাখার ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।’’ কল্যাণবাবু জানান, কলকাতা হাইকোর্ট মনে করলে দিল্লি হাইকোর্ট, এমনকী সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছেও ওই ফুটেজ জমা রাখার নির্দেশ দিতে পারে।
ঘুষ-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জার আইনজীবী কিশোর দত্তের অভিযোগ, ‘‘কী কারণে হলফনামা দেওয়া ক্ষেত্রে ম্যাথু স্যামুয়েল নির্দেশ অমান্য করেছেন, আদালতের উচিত তার জবাবদিহি করা।’’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কবে নারদ নিউজ খোলা হল, সংস্থার পরিচয়ই বা কী, ওই ফুটেজ মোবাইল ক্যামেরায় তোলা হয়েছে, না কি ভিডিও ক্যামেরায়— সে সব হলফনামায় বলা নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘হলফনামায় লেখা রয়েছে, সংস্থা তৈরি হয়েছে ২০১৬ সালে। অথচ বলা হয়েছে, ওই ফুটেজ ২০১৪ সালের। তা হলে স্টিং অপারেশন যিনি করেছেন, তিনি কি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই কাজ করেছেন? তা ছাড়া, যে হুমকির কথা বলা হচ্ছে, তা কি রেকর্ড করা হয়েছে?’’
ম্যাথুর আইনজীবী বিমলবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁর মক্কেল হলফনামায় সবই জানিয়েছেন। এখন আদালত যা নির্দেশ দেবে, তা মানা হবে। এর পরেই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ম্যাথুকে নির্দেশ দিয়েছে, ১৫ এপ্রিল পুনরায় একটি হলফনামা পেশ করে ওই সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।