নির্বাচন কমিশনের তরফে অভয় পেয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েও মারধর খেতে হয়েছে অনেককে। তা হলে ভোটের ফল প্রকাশের পরে আইন-শৃঙ্খলার কী হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হাইকোর্ট।
গত ১ মে পাটুলি থানার বাঘা যতীন এলাকায় ভোটের পরে দুষ্কৃতী হামলার প্রেক্ষিতে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি ছিল শুক্রবার। সেখানেই এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। বিচারপতি দত্তের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ভোটের ফল বেরোলে যে কী হবে!’’ বিচারপতি এ দিন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়দীপ করের কাছেও জানতে চান, নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতির মোকাবিলা কী ভাবে করা হয়? ভোটের ফল প্রকাশের পরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে কী করবে কমিশন, জানতে চান তিনি। জয়দীপবাবু জানিয়ে দেন, ভোটের ফল প্রকাশের পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনের। তা শুনেই রাজ্যকে বিচারপতি নির্দেশ দেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া বাঘা যতীন ও তার লাগোয়া এলাকা থেকে তোলা যাবে না পুলিশ পিকেট।
বাঘা যতীনের মামলায় আগের শুনানিতে বিচারপতি দত্ত রাজ্যের গভর্নমেন্ট প্লিডারকে (জিপি) নির্দেশ দিয়েছিলেন, হামলার প্রেক্ষিতে যে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে, তার কেস ডায়েরি আদালতে দাখিল করতে হবে। জিপি আদালতে জানান, ওই ঘটনায় দু’টি নয়, তিনটি এফআইআর হয়েছে। প্রথম এফআইআর করেন, মামলার অন্যতম আবেদনকারী বুদ্ধদেব ঘোষ। দ্বিতীয়টি দায়ের করেন সঙ্গীতা মুখোপাধ্যায় নামে এক বাসিন্দা। তৃতীয় এফআইআর দায়ের করেন গণেশ মণ্ডল নামে আর এক ব্যক্তি।
জিপি এ দিন আদালতে দাবি করেন, দুষ্কৃতীদের নাম বলার জন্য বুদ্ধদেববাবুর মা মায়ারানিদেবীকে পাটুলি থানায় ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু বৃদ্ধা থানায় যাননি। তা শুনে বুদ্ধদেববাবু ও তাঁর মায়ের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু সিংহ রায়ের বক্তব্য, তাঁদের মক্কেলদের দায়ের করা এফআইআরের ভিত্তিতে মহিলাদের গায়ে হাত তোলার ধারা দেয়নি পুলিশ। তা ছাড়া, মামলা দায়ের হওয়ার পরে থানায় ডেকেছে পুলিশ। আগে তাঁদের ডাকা হয়নি।
জিপি জানান, সঙ্গীতাদেবীর এফআইআর-এর ভিত্তিতে জনৈক রাহুল বসু-সহ আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে মহিলাদের গায়ে হাত তোলার ধারা দিয়েছে পুলিশ। জিপি-র আরও বক্তব্য, পুলিশি তদন্ত শেষ হয়নি। ওই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় যে হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কার কথা তাঁর মক্কেল কমিশনকে আগাম জানিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
জয়দীপবাবু জানান, এ কথা মামলার আবেদনে বলা হয়নি। তা জেনে বিচারপতি দত্ত জয়ন্তনারায়ণকে নির্দেশ দেন, অতিরিক্ত হলফনামায় সেই আশঙ্কার কথা ও প্রামাণ্য নথি আদালতে ২০ মে-র মধ্যে দাখিল করতে হবে।