বাংলার বিধানসভা নির্বাচন কেন ৮ দফায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ডানকুনির একটি জনসভা থেকে সে প্রশ্নের ‘জবাব’ দিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলকে করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর ভাইরাস বলে কটাক্ষ করে তাঁর দাবি, রাজ্যে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্যই এই পদক্ষেপ করেছে কমিশন।
শনিবার হুগলি জেলার ডানকুনিতে একটি জনসভা করেন শুভেন্দু। ওই জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর ভাইরাস তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড। স্বচ্ছ এবং অবাধ ভোট করানোর জন্যই নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে। ৮ দফায় ভোট হবে। তৃণমূল যাতে অপরের ভোট নিজেরা না দিতে পারে।’’
তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট চুরির ছাড়াও একাধিক অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধীদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। থানাগুলি থেকে এবং রাজ্যস্তরে সিআইডি, এসটিএফ-রা বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতে।’’ শুভেন্দুর আরও দাবি, তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের নির্দেশেই বিরোধী দলের নেতাদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর আর্জি, গোটা প্রশাসনের খোলনলচে পাল্টে দিতে হবে। না হলে রাজ্য জুড়ে প্রত্যেক জেলাতে শান্তিপূর্ণ ভোট হতে পারে না।
এক নজরে শুভেন্দুর বক্তব্য:
- ৭ তারিখে মোদীজি ব্রিগেডে আসছেন। সভা ভরাতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে হবে। এ বার ডাবল ইঞ্জিন সরকার হবে।
- একটার পর একটা স্লোগান বাংলাদেশ থেকে ধার করে এনেছেন।
- আমাকে অনেকে বলছেন, আপনার অনেক দুর্নীতি তুলে ধরছেন। অনেক ভিতরের কথা বলছেন। যার উত্তর তৃণমূল বা রাজ্য সরকার দিতে পারছে না। আমি তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ দেখিয়েছিলাম। পরবর্তী কালে প্রমাণ হয়েছে, ‘ম্যাডাম নারুলা’ হলেন তোলাবাজ ভাইপোর মাননীয়া। তাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে।
- হুগলি জেলায় ৫ টাকা কেজি করে আলু বিক্রি করেছেন আলু চাষিরা। আর আমাদের ৪০ টাকা কেজি করে আলু কিনতে হয়েছে। এই টাকা কোথায় গিয়েছে? কৃষকেরা কেন পাননি? এই টাকা কি ভাইপো-ভেট? মানুষ আজ জানতে চান। দিদির দূত, তোলাবাজ ভাইপো ভূত।
- কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার গর্ব হতে যাবেন? বাংলার গর্ব যদি কেউ হন, তিনি বিদ্যাসাগর হবেন, স্বামী বিবেকানন্দ হবেন। বাংলার গর্ব যদি কেউ হন, তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ হবেন। বাংলার গর্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন হবেন?
- প্রতিটি ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকার ব্যর্থ। এত মদের দোকান, যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
- বিরোধীদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। থানাগুলি থেকে এবং রাজ্যস্তরে সিআইডি, এসপি-রা বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতে। শ্যামল বসু কী বলছেন? গৌতমবাবু কী বলছেন? বিমান বসু কী বলছেন? প্রত্যেক জায়গায় পার্টির নেতাদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের কথায়। এটা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে গোটা প্রশাসনের খোলনলচে পাল্টে দিতে হবে। না হলে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রত্যেক জেলাতে আরাবুলের মতো, শওকত মোল্লার মতো যে মডেল তৈরি হয়েছে, তাতে শান্তিপূর্ণ ভোট হতে পারে না।
- সবুজসাথী নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
- মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারছেন না, ১ কোটি না ২ কোটি লোককে চাকরি দিয়েছি।
- এ বারের নির্বাচন অবাধ, ভয়মুক্ত পরিবেশে হবে। বিজেপি-র সরকার তৈরি হবে।
- ১ তারিখে টিকিট কেটে ২ তারিখে পটনা চলে যেতে হবে পিকে-কে।
- করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর ভাইরাস তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড। নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ভোটের জন্য একটা উদ্য়োগ নিয়েছেন। আট দফায় ভোট হবে। তৃণমূল যাতে অপরের ভোট নিজেরা না দিতে না পারে, সে জন্যই তারা একটা উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশাসনকে-পুলিশকে নির্লজ্জ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
- কলকাতা কর্পোরেশন-সহ গোটা রাজ্যে ১০০টি কর্পোরেশনে দলের লোকদের বসিয়ে রেখেছেন। এই প্রশাসকরা পার্টির ক্যাডার। এই প্রশাসকদেরকে সরাতে হবে।
- নবান্ন থেকে নির্বাচনী সেল খোলা হয়েছে। নবান্ন থেকে নির্বাচনী সেল তুলে দিতে হবে।
- প্রকাশ্য সভা থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েকটি দাবি জানাতে চাই।
নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর এই প্রথম হুগলির ডানকুনিতে সভা করছেন শুভেন্দু। শনিবারের এই জনসভাকে ঘিরে সকালে থেকেই একটা টানটান আবহ তৈরি হয়েছে। এই জনসভায় যাওয়ার আগে সকালেই তিনি কোলাঘাটে ইস্কন-এর মন্দিরে যান। সেখানে প্রার্থনা করেন। আগেই শুভেন্দু টুইট করে শনিবারের জনসভা এবং ইস্কন মন্দিরে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপি-তে গিয়েছেন শুভেন্দু। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এই বাংলায় পরিবর্তন আনার পক্ষে প্রতিটি জনসভা থেকে জোর সওয়াল করেছেন। তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করে ফেলারও হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে।