গৌতম পালকে করণদিঘি কেন্দ্রে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্লক নেতৃত্বের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরেও তা নিয়ে জট যেন কাটছেই না উত্তর দিনাজপুর জেলায়। রায়গঞ্জ এবং ইটাহারের পর এ বার করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। যা নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতর শুরু হয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। জেলা তৃণমূলের একাংশের দাবি, কোনও ‘বহিরাগত’ নয়, করণদিঘির বিদায়ী বিধায়ক মনদেব সিন্হাকেই ফের ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করতে হবে। এই দাবিতে খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে ক্ষোভ দেখালেন করণদিঘির ব্লক তৃণমুল নেতৃত্ব। যদিও এই ক্ষোভকে সাময়িক বলে পাল্টা দাবি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। এ নিয়ে নীলবাড়ির দখলের লড়াইতে দলের কোনও সমস্যা হবে না বলে মত জেলা সভাপতি কানাইয়া আগরওয়ালের।
উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে যুব তৃণমূলের সভাপতি গৌতম পালকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁকে করণদিঘির প্রার্থী করার পরই জোর প্রচার শুরু করেছেন গৌতম। কিন্তু গৌতমকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষুব্ধ করণদিঘি ব্লক নেতৃত্বের একাংশ। রবিবার সন্ধ্যায় ব্লকের দলীয় কার্যালয়ে বিদায়ী বিধায়ক মনদেব সিন্হার উপস্থিতিতে এক বৈঠক হয়। তাতে ছিলেন জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেল, ডালখোলা পুর এলাকার নেতৃত্ব-সহ করণদিঘি ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বও। ওই বৈঠকের পরই গৌতমকে বহিরাগত বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। গৌতমের বদলে করণদিঘিতে ফের ‘ভূমিপুত্র’ মনদেব সিন্হাকেই প্রার্থী করার দাবিতে তাঁরা সরব হন।
সোমবার করণদিঘির বিদায়ী বিধায়ক মনদেব সিন্হার দাবি, ‘‘আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে ফোন করেন। আমাকেই প্রার্থী করা হবে বলে সে সময় তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন। সেই ভরসাতেই ছিলাম। কিন্তু এখন আমার সঙ্গী, করণদিঘির মানুষ যা চাইবেন, আমি সেটাই করব।’’
করণদিঘির প্রার্থীপদ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু মোর্চাও। মোর্চার সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, ‘‘সরকার গড়তে সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। করণদিঘিতে ৫৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন। তা হলে কি নেত্রীর এখানে সংখ্যালঘু ভোটের প্রয়োজন নেই? মনদেব কেন টিকিট পেলেন না সেটা জেলা নেতৃত্ব, রাজ্য নেতৃত্ব এবং পিকে বলবে? পিকে তাঁর (মনদেব) বিরুদ্ধে কী এমন পেল, সেটা আমরা জানতে চাই। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, করণদিঘিতে মনদেব সিন্হাকেই টিকিট দিতে হবে। এই আসনে জিততে হলে এখানকার ভূমিপুত্র কাউকে প্রার্থী করুন।’’ পাশাপাশি, করণদিঘি ব্লক তৃণমূল সভাপতি ওহাব আলির বক্তব্য, ‘‘আমি শুনেছিলাম যে মনদেব সিন্হাকে এই আসনে লড়তে হবে বলে কিছুদিন আগেও জানিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু হঠাৎ কেন এ রকম হল, বুঝতে পারছি না। ভূমিপুত্র মনদেবকেই প্রার্থী করতে হবে। ডালখোলা পুরসভা এবং ১১টা পঞ্চায়েতের সব নেতৃত্ব একসঙ্গে এমনটাই চাইছি।’’ যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেছেন, ‘‘এটা সাময়িক ক্ষোভ। আমরা বিষয়টা দেখছি। ভোটের সময় কোনও সমস্যা হবে না। দলে থাকলে সকলকেই দলের নিয়ম মানতে হবে।’’