ভক্ত: কালীমন্দিরে পুজো দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নন্দীগ্রামের শিবরামপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
নন্দীগ্রাম: নুইয়ে পড়া কোমর ধরে ঢাল বেয়ে এগিয়ে এলেন। কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ৮৫ বছরের বিদ্যুৎলতা জেনা জানতে চাইলেন, ‘‘মমতা এল গো?’’
হলদিয়ায় নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন নন্দীগ্রামে। নিজের জন্য ভোট চাইতে ছুটছেন কমলপুরের পথে। পিচ রাস্তার সরু বাঁক ঘুরে এগোলেও মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনের অংশ তত ক্ষণে মেয়ে-বৌদের ভিড়ে আড়াল হয়ে গিয়েছিল। তার পরে শীতলা মন্দির ছেড়ে মমতা যখন বেরিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির দিকে এগোলেন, তখন একটা উচ্ছ্বাস ভেসে এল। প্রবীণা বুঝে সোজা হয়ে মমতাকে দেখার চেষ্টা করলেও পারলেন না। একটু হেসে আবার পিছিয়ে গেলেন। মঙ্গলবারের মতো বুধবারও নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর জনসংযোগে এ ভাবেই ভাসল বিস্তীর্ণ এলাকা।
রেয়াপাড়ার মোড়ে যে বাড়িতে ভাড়ায় উঠেছেন, সেখান থেকে বেরিয়ে উল্টো দিকের শিবমন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে মনোনয়ন জমা দিতে কপ্টারে চলে যান হলদিয়ায়। পৌনে তিনটে নাগাদ ফিরে ফের জনসংযোগে বেরিয়ে পড়েন। পাকা রাস্তা ধরে মিনিট কয়েকের মধ্যে কনভয় এসে থামে শিবরামপুর কালীমন্দিরের কাছে। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ শুরু মমতার এই প্রচার-সফর চলে প্রায় সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। নিজে কলকাতার প্রার্থী হলেও রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই প্রচারে থাকেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক অতীতে এ ভাবে পাড়া- গাঁয়ের পাকস্থলী ছুঁয়ে যেতে দেখা যায়নি তাঁকে। এ দিন তা-ই করলেন। এবং নন্দীগ্রামের নির্বাচনে যে হেতু মেরুকরণের চর্চা রয়েছে, তাই বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কম-বেশি ১৫টি মন্দির ঘুরেছেন। আর তার পিছন পিছনে ছুটেছেন দলের কর্মী, সাধারণ মানুষ।
শিবরামপুরে কাঁসর বাজিয়ে, প্রদীপ ঘুরিয়ে আরতি সেরে বিরোলিয়া হয়ে রংকিনীপুরে। তৃণমূলের আয়োজন ছিল, কম-বেশি প্রচারও ছিল তবে দু'পাশের চাষজমি বাদ দিলে সর্বত্র ভিড় ছুটেছে তাঁর সঙ্গে। এ সব পেরিয়ে মমতার গাড়ি যখন আমদাবাদ-১ নম্বর অঞ্চলে কাছাকাছি এল তখন হাইস্কুলের মাঠে দুর্গা মন্দিরের সামনে বিরাট ভিড়। শিবচতুর্দশী উপলক্ষে উৎসবের মেজাজে আলাদা মাত্রা যোগ করে দিলেন ভোটপ্রার্থী মমতা। সামনের চালমারি বাজারের রাস্তা কার্যত বন্ধ।
গাড়ি গড়াল কমলপুরের দিকে। তৃণমূল প্রার্থীর যাত্রাপথের বাঁ দিকে তখন লেখা হচ্ছে, ‘দিদি এ বার নিপাত যাক্..’ আরও একটু এগিয়ে রাস্তার পাশ থেকে কানে এল ‘জয় শ্রীরাম’। এই কমলপুরেই বাড়ি বিদ্যুৎলতারও। এর পরে টাকাপুরা, সাতেঙ্গাবাড়ি ছুঁয়ে মমতা পৌঁছলেন রানিচকের দুর্গামন্দির। রাস্তা থেকে ভিড় তাঁর সঙ্গে ছুটছিল, মন্দিরের চাতালে, বাড়ির ছাদ, বারান্দা তখন থিকথিক করছে মানুষ।
দিনের এই শেষ গন্তব্যে পৌঁছে পুজো- অর্চনা সেরে মাইক হাতে নিয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন তৃণমূল নেত্রী। বললেন, ‘‘খেলা হবে। আমরা খেলব। বিজেপির সঙ্গে। কংগ্রেস- সিপিএম বল কুড়োবে!’’